একটি ভাইরাল ক্লিপে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে (Yogi Adityanath) সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর (এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশন্যাল) (ANI) ক্যামেরা পারসনকে ধমকাতে দেখা যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে দাবি করা হচ্ছে যে, মুখ্যমন্ত্রীকে ক্যামেরায় একটি অশালীন শব্দ ব্যবহার করতে শোনা গেছে।
ভাইরাল ক্লিপটিতে মুখ্যমন্ত্রীকে সোমবার সকালে কোভিড-১৯-এর ভ্যাক্সিন কোভ্যাক্সিন-এর দ্বিতীয় ডোজটি নিতে ও তারপর এএনআই-এর এক সাংবাদিকের সঙ্গে তাঁকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটিতে আদিত্যনাথ দেশের বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ জানান। কিন্তু পরমুহূর্তে কোথাও একটা শোরগোল হওয়ায়, তাঁর মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তিনি গলার স্বর নামিয়ে নাকি বলেন, "কেয়া করতে হো চ*তিয়াপানে কা..."। তাঁর কথার বাকি অংশটা অস্পষ্ট হয়ে যায়।
আম আদমি পার্টির টুইটার হ্যান্ডেলও ক্লিপটি শেয়ার করে।
প্রত্যুত্তরে, কিছু দক্ষিণপন্থী ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বলেন, ভিডিওটি 'ভুয়ো' 'ডাব করা' ও 'ভিডিওটি সম্পাদনা করা হয়েছে'। 'ব্রেকিংটিউব.কম' নামের একটি ওয়েবসাইট প্রথম ঘোষণা করে যে, ভিডিওটি ভুয়ো।
এএনআই-এর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে যে ভিডিওটি রয়েছে, তাতে ওই অশালীন শব্দটি নেই।
দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইট 'অপইন্ডিয়া', 'নিউজনেশন টিভি'র সঞ্চালক দীপক চৌরাসিয়ার একটি টুইটের ওপর নির্ভর করে। চৌরাসিয়া বলেন, ভিডিওটি সম্পাদিত এবং সেটির শেষ তিন সেকেন্ডের অংশটিকে রদবদল করা হয়েছে।
অপইন্ডিয়ার প্রতিবেদনের আর্কাইভ করা আছে এখানে।
'সোশাল তামাশা' নামের আরও একটি দক্ষিণপন্থী সোশাল মিডিয়া সংস্থা ভাইরাল ভিডিও এবং এএনআই ইউপির আপলোড-করা ভিডিও দু'টিকে পাশাপাশি রেখে মিলিয়ে দেখে বলে, ভাইরাল ভিডিওটি ভুয়ো।
কিন্তু যে টুইটার ব্যবহারকরীরা আগের ভিডিওটি শেয়ার করেছিলেন, তাঁরা বলেন যে, দু'টি ভিডিও আলাদা কোন থেকে তোলা। এবং মুখ্যমন্ত্রীর মুখের কথার মধ্যেও তফাৎ আছে। অতএব, দু'টি ভিডিও এক নয়।
আরও পড়ুন: বাংলার ভোট: সম্পাদিত আনন্দবাজার পত্রিকার দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের জয়
তথ্য যাচাই
সম্পাদকের বক্তব্য সমেত এএনআই ইউপির টুইট করা ভিডিও
বুম এএনআই ইউপির টুইট করা ভিডিওটি দেখে। তাতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনা যাচ্ছিল্ আর সেই সঙ্গে সম্পাদকেরও একটা বক্তব্য দেওয়া ছিল। সম্পাদক তাঁর বক্তব্যে বলেন, "আগের লাইভ সাউন্ড বাইট বাদ দেওয়া হয়েছে।" তবে কী বাদ দেওয়া হয়েছে, তা জানায়নি ওই সংস্থা।
এএনআই-এর সম্পাদক ঈশাণ প্রকাশের সঙ্গে বুম যোগাযোগ করে। প্রকাশ এএনআই ইউপির একটি টুইটের কথা উল্লেখ করেন ও আর কিছু বলতে চান না।
"আমরা এএনআই ইউপি টুইটটি তুলে ধরেছি। এর বেশি আমি আর কিছু বলছি না," ঈশাণ প্রকাশ বুমকে বলেন।
তিনটি সংবাদ চ্যানেলের সূত্র নিশ্চিত করেন যে ভিডিওটি ভুয়ো নয়
বুম তিনটি খবরের চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলে। তাঁরা নিশ্চিত করে বলেন যে, এএনআই যে ভিডিওটি তুলে নেয়, সেটি তাঁরা সকাল আটটার পর পান। কিন্তু পরে এএনআই তাঁদের একটি নোট পাঠিয়ে জানায় যে, ওই ভিডিওটি তুলে নেওয়া হচ্ছে ও তার বদলে পাঠায় একটি সংশোধিত ভিডিও। মুখ্যমন্ত্রীর যে বক্তব্যটি এখন চ্যানেলগুলিতে দেখানো হচ্ছে, তাতে সেই বক্তব্যটিই ছিল। ওই চ্যানেলগুলিতে আমরা যাঁদের সঙ্গে কথা বলি, তাঁরা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
ইউটিউবে ভিডিওটির লাইভ সংস্করণ থেকে স্পষ্ট যে, সেটি ভুয়ো নয়
বিভিন্ন খবরের চ্যানেল ইউটিউবে যে লাইভ সম্প্রচার করে, তা থেকে বোঝা যায় যে, ভাইরাল ক্লিপটি অবশ্যই দেখানো হয়েছিল।
এবিপি নিউজের উত্তরপ্রদেশের শাখা, এবিপি গঙ্গার লাইভ সম্প্রচারে ভাইরাল ভিডিওটি দেখানো হয়েছিল।
তাঁদের সংবাদদাতা যখন কথা বলছিলেন, তখনই চ্যানেলটি ওই ভিডিওটি দেখায়। চ্যানেলটির ঘড়ি অনুযায়ী, সকাল ৮.০৯-এ লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
তারপর, ভিডিওটি হঠাৎ কাটা হলে, চ্যানেলটির স্ক্রিন কালো হয়ে যায়।
ইউটিউবে যে লাইভ সম্প্রচার দেখানো হয়, সেখানে সেই লাইভ ভিডিওটিই এখনও দেখা যাচ্ছে। কারণ, সেটিকে সাম্পাদনা করা সম্ভব নয়।
নীচের ভিডিওটির ৬.০০ মিনিট সময়চিহ্নে ওই দৃশ্যটি দেখা যায়। এবিপি গঙ্গা চ্যানেল সেটি পরে আপলোড করেছিল।
'নিউজ ১৮ ইউপি উত্তরাখণ্ড' চ্যানেলেও আমরা ভিডিওটির লাইভ সম্প্রচারের সংস্করণটি দেখতে পাই। ওই চ্যানেলের ঘড়ি অনুযায়ী, সকাল ৮:১০:৪০-এ ভিডিওটি লাইভ দেখানো হয়েছিল।
'ফার্স্ট ইন্ডিয়া নিউজ রাজস্থান' চ্যানেলের একটি ভিডিওতেও ওই ক্লিপটি দেখা যায়। ইউটিউব কাউন্টারে ২.১০-এর মাথায় সেটি দেখা যায়।
ভাইরাল ক্লিপটি যে সম্পাদনা করে অদল বদল করা হয়েছে, তার কোনও প্রমাণ পায়নি বুম। পরে, ওই বিশেষ শব্দটি বাদ দিয়ে যে ক্লিপ খবরের চ্যানেলগুলিতে চালানো হয়, সেটির জন্য নতুন করে শব্দ গ্রহণ করা হয়।
আমরা এও দেখি যে, অপইন্ডিয়া ও ব্রেকিংটিউব.কম-এর তথ্য-যাচাই বেঠিক ও মিথ্যে।
নোট: বুমের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর, এবিপি গঙ্গা তাদের ইউটিউব ভিডিওটিকে প্রাইভেট করে দেয়। বাদ দেওয়া ভিডিওটির জায়গা পুরণ করতে ও নিউজ-১৮ ইউপি উত্তরাখণ্ডের ভিডিও সহ প্রতিবেদনটি সংস্করণ করা হয়।
আরও পড়ুন: ২০১৩ ছত্তীসগঢ় মাওবাদী হানা ছড়াল সম্প্রতি সুকমায় নিহত জওয়ানের দেহ বলে