গ্রেফতার হওয়া পরিবেশ আন্দোলনকর্মী (climate activist) দিশা রবির (Disha Ravi) পুরো নাম দিশা রবি জোসেফ (Disha A Ravi) এবং তিনি ধর্ম পরিচয়ে খ্রিস্টান (Christian) এই দাবিটি ভুয়ো।
ভুয়ো পেস্টে বলা হয়েছে, টুলকিট (Toolkit) কাণ্ডে দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ২২ বছর বয়সী কেরলের একজন সিরিয়ান খ্রিস্টান এবং তিনি হিন্দু নন আর সে কারনে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনকারী।
বুম ওই সমাজকর্মীর বন্ধু এবং বেঙ্গালুরুর মাউন্ট কারমেল কলেজের সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কথা বলেছে। তাঁরা এই দাবিটিকে নস্যাৎ করেছেন এবং বলেছেন দিশার বাবার নাম রবি এবং তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
দিশা রবি "ফ্রাইডেজ্ ফর ফিউচার"-এর ভারতীয় অধ্যায়ের সহ প্রতিষ্ঠাতা, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বেঙ্গালুরুতে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল তাঁকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লির এক কোর্ট ৫ দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেয়। বেঙ্গালুরুর ওই সমাজকর্মী গ্রেফতার হন কৃষকদের আন্দোলন সম্পর্কিত 'টুলকিট' শেয়ার ও সম্পাদনা করার জন্য।
এই ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবিটি একাধিক দক্ষিণপন্থী টুইটার হ্যান্ডেল শেয়ার করে 'দিশা রবি জোসেফ'-কে বুধবার টুইটারের সেরা ট্রেন্ডেস-এ নিয়ে আসে।
আইনজীবী প্রশান্ত পটেল উমরাও যিনি একাধিকবার অতীতে ধরা পড়েছেন সাম্প্রদায়িক ভুয়ো খবর ছড়ানোতে, তিনি টুইট করে লেখেন, ''দিশা রবি জেসেফ একজন কেরলের সিরিয়ান খ্রিস্টান। এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা সবসময় ভারত ভাঙার আন্দোলনে সামনের সারিতে।''
উমরাও পরে তাঁর টুইট ডিলিট করে দেন। নিচে টুইটের আর্কাইভের স্ক্রিনশট দেওয়া হল।
এই একই ভুয়ো দাবি অন্যান্য দক্ষিণপন্থী হ্যান্ডেলগুলি ছড়ায়।
আর্কাইভ করা আছে এখানে।
প্রাক্তন এফটিটিআই চেয়ারম্যান ও মহাভারত খ্যাত গজেন্দ্র চৌহানের ডিলিট করে দেওয়া টুইট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
উত্তরপ্রদেশের জুনপুরের ভারতীয় জনতা দলের বিধায়ক দিনেশ চৌধুরি একই দাবি করেন যে দিশা রবি'র পুরো নাম দিশা রবি জোসেফ এবং গণমাধ্যম সেটি লুকাচ্ছে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একাধিক দক্ষিণপন্থী হ্যান্ডেল, যার মধ্যে কিছু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনুসরণ করেন, তারাও একই মিথ্য দাবি করেছে যে বেঙ্গালুরুর সমাজকর্মী একজন খ্রিস্টান এবং একই সমান্তরাল দাবি করছে যে তিনি মাউন্ট কারমেল কলেজে পড়েছেন খ্রিস্টান হওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের গ্রাফিক ছড়াল পশ্চিমবঙ্গ ভোটের দিন ঘোষণা বলে
তথ্য যাচাই
বুম রবির বন্ধু ও তাঁর মাউন্ট কারমেল কলেজের সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযেগ করলে তাঁরা দিশার আসল নাম দিশা রবি জোসেফ অথবা তিনি যে সিরিয়ায় খ্রিস্টান একথা অস্বীকার করেন।
রবির একজন বন্ধু আমাদের বলেন, ''তাঁর পুরো নাম দিশা আন্নাপা রবি এবং দিশা এ. রবির 'এ.' হল আন্নাপ্পা।'' দ্বিতীয় বন্ধু নিশ্চিত করে আমাদের আরও বলেন, ''তাঁর পুরো নাম দিশা আন্নাপ্পা রবি। তিনি একজন কান্নাডিগা।''
কেরলের সিরিয়ান খ্রিস্টান এই দাবি নস্যৎ করে তৃতীয় বন্ধু বলেন দিশা কর্নাটকের। ''তাঁর গ্রামের বাড়ি তুমকুরের, তিপ্তুর এবং তিনি বাড়িতে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের পরিবেশে বড় হয়েছেন।'' লিঙ্গায়েতরা কর্নাটকের এক সম্প্রদায় যাঁরা ১২ শতাব্দীর কবি-দার্শনিক বাসবান্না (Basavanna) এবং ১৭ শতাংশ রাজ্যের জনসংখ্যার।
ওই একই বন্ধু বুমকে বলেন রবির মা মনজুলা নানজিয়াহ একজন গৃহকর্মী। ''তাঁর বাবার নাম রবি যিনি কান্তারাভা স্টেডিয়ামে কর্নাটকের ক্রীড়া দপ্তরের অধীনে কাজ করেন। এবং দিশা মূলত তাঁর মায়ের তত্তাবাবধানে বেড়ে উঠেছেন।'' এক বন্ধু বলেন আমাদের।
আমরা 'দিশা এ রবি মাউন্ট কারমেল কলেজ' লিখে সার্চ করি এবং ২০১৮ সালের ব্যাচের বাৎসরিক রিপোর্ট খুঁজে পায়। এই নথিতে কলেজে হওয়া সব ছাত্র উৎসবের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া আছে এবং রবির থেকে একটি উক্তি উল্লেখ করা আছে। বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ আয়েজিত 'কার্পে দিইম' ব্যাবসার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত উৎসে দিশার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ রয়েছে তাতে।
এই নথিতে তাঁর নাম রয়েছে দিশা এ. রবি।
মাউন্ট কারমেল কলেজে দিশার এক সহপাঠী আমাদের নিশ্চিত করেছে যে এই নথিটি তাঁদের বিজনেস স্টাডিজ বিভাগের ব্যাচেলর ডিগ্রি ব্যাচের। ''তিনি উৎসব পরিচালনার কোষাধ্যক্ষ দলের অংশ ছিলেন এবং ম্যাগাজিনটি সারা বছরের বাৎসরিক রিপোর্ট যখন আমরা সেখানে পড়েছিলাম। এটা কিভাবে নির্ভর করে তিনি হিন্দু অথবা একজন খ্রিস্টান? তাঁর নাম দিশা রবি এবং তিনি দেশের পরিবেশ রক্ষায় কাজ করেন, তাহলে এখানে ধর্ম আসছে কেন?'' তাঁর সহপাঠী বলেন। নথিটি দেখা যাবে এখানে।