সোশাল মিডিয়ায় (Social Media) সুভাষচন্দ্র বসুর (Subhash Bose) একটি সাদা-কালো ছবি ফোটোশপ করে দেখানো হচ্ছে, তিনি বিমান-দুর্ঘটনায় তাঁর নিজের মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রে পড়ছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক দিন পর ২৩ অগস্ট, ১৯৪৫ জাপানের ডোমেই সংবাদসংস্থা সরকারি জাপানি সূত্র উদ্ধৃত করে জানায় যে, ১৮ অগস্ট, ১৯৪৫ তাইহোকুর (বর্তমান তাইওয়ান) জাপান নিয়ন্ত্রিত মাতসুইয়ামা সামরিক বিমানঘাঁটিতে এক বিমান-দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তবে নেতাজির মৃত্যু নিয়ে এই সরকারি বয়ান অগ্রাহ্য করে এখনও নানা রকম তত্ত্ব প্রচারিত হয়ে থাকে।
ছবিটি শেয়ার করে তার ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "১৯৪৫ সালের ২৩ এপ্রিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর নিজের মৃত্যুর খবর একটি সংবাদপত্রে পড়ছেন। ব্রিটিশের পোষা কুকুর কংগ্রেসের ফেরি করা একটি বৃহৎ মিথ্যা!"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ভাইরাল হওয়া একই ভুয়ো ছবি বাংলাতেও ছড়িয়েছে, যার ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে— "১৯৪৫ সালের ২৩ অগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর খবর দিয়েছে সুপার এক্সপ্রেস, নেতাজি নিজেই তাঁর মৃত্যুর সেই খবর পড়ছেন।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ফোটোশপ করা এই ছবি ও তার ক্যাপশন ফেসবুকে ভাইরালও হয়।
বুম-এর হোয়াটস্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও (৭৭০০৯০৬১১১) পোস্টটির সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ আসে।
আরও পড়ুন: হাইওয়েতে রুশ বিমানের জরুরি অবতরণ দাবিতে ভাইরাল ভিডিও গেমের দৃশ্য
তথ্য যাচাই
বুম দেখেছে, ছবিটি ফোটোশপ করে তৈরিl আসল ছবিতে সুভাষচন্দ্র মোটেই বিমান - দুর্ঘটনায় নিজের মৃত্যুর প্রকাশিত সংবাদ পাঠ করছেন নাl তাঁর মৃত্যুর খবর দেওয়া প্রতিবেদনটিও সম্পাদনা করে ছবিটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
ছবিটির খোঁজখবর করে আমরা দেখলাম, এটি ২০১৮ সালের ২৭ মে অনুজ ধর-এর পোস্ট করা একটি টুইটে প্রথম দেখা যায়। এই অনুজ ধর "মৃত্যুর পর সুভাষ বসুর জীবন: একটি ধাঁধাঁ" নামক বইয়ের লেখক।
ধর মহাশয়ের টুইটের ক্যাপশন ছিল, "সুভাষচন্দ্র জাপানের বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম ইংরাজি দৈনিক নিপ্পন টাইমস (এখন যার নাম জাপান টাইমস)পড়ছেন।"
ছবিটি ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্ট দেখা যায়, মূল সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে সুভাষচন্দ্রের কোনও ছবি বা তার শিরোনামে তাঁর মৃত্যুর খবর, কিছুই নেই।
২০১৯ সালের ১৮ অগস্ট অনুজ ধর সম্পাদিত ছবিটি টুইট করে জানিয়েছিলেন, এটি নাকি @BiplabC2 নামের টুইটার হ্যান্ডেল-এর বানানো। ওই হ্যান্ডেলটি বর্তমানে সাসপেন্ড করা রয়েছে। অনুজ তাঁর টুইটে ক্যাপশন দিয়েছিলেন—মূল ছবিটির সঙ্গে কিছু কল্পনা মিশিয়ে @BiplabC2 এটি বানিয়েছেন।
তুলনা
মূল ছবির সঙ্গে ফোটোশপ করা ছবিটির তুলনা করলে আমরা দেখতে পাব, দুটি ছবিতেই সংবাদপত্রের নাম নিপ্পন টাইমস-ই লেখা রয়েছে। কিন্তু মূল ছবিটিতে কাগজের প্রতিবেদনে "সুভাষ বসু....নি্হত" এ ধরনের কোনও শিরোনাম দেওয়া নেই। আর এ থেকেই বোঝা যায়, ভাইরাল হওয়া ফোটোটি ফোটোশপ বা সম্পাদনা করে বানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: জলমগ্ন ঘরের ভেতর এক দম্পতির সাঁতার কাটার ভিডিও পশ্চিমবঙ্গের নয়