একজন রুশ শিল্পীর আঁকা হিন্দু দেবতা কৃষ্ণ ও পাণ্ডবদের ছবি এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, সেটি নাকি আফগানিস্তানের (Afghanistan) পঞ্জশিরের (Panjshir) এক প্রাসাদে টাঙ্গানো আছে।
কিন্তু বুম দেখে, ছবিটি রুশ শিল্পী রসিকানন্দ দাসের আাঁকা। উনি ইসকন বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস-এর সঙ্গে যুক্ত। বুমকে তিনি জানান যে, ছবিটি তাঁরই আঁকা। সেটি তিনি ১৯৯৯ তে রাশিয়ার সোচি'তে আাঁকেন। এবং আফগানিস্তানের পঞ্জশিরের সঙ্গে সেটির সম্পর্কের কথা উনি অস্বীকার করেন।
আরও পড়ুন: ভাইরাল হওয়া এই ছবিটি আফগান শিল্পী শামসিয়া হাসানির আঁকা নয়
পঞ্জশির প্রদেশ তালিবানের দখলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে। তালিবান দাবি করে যে, আহমেদ শাহ মাসৌদের নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ ভেঙ্গে দিয়ে, তারা ওই জায়গা দখল করে। ওই কট্টরপন্থী ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী আফগানিস্তানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। এবং সম্প্রতি তারা সেখানে কট্টরপন্থীদের নিয়ে একটি সরকার গঠন করে ও দেশটিকে একটি ইসলামি আমিরশাহি বলে ঘোষণা করে।
শেয়ার-করা পেইন্টিংটির ফোটোর সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "মহাভারতের যুগের সাবেক গান্ধার রাজ্যে অবস্থিত আজকের আফগানিস্তানের পঞ্জশির প্রাসাদে পেইন্টিংটি রয়েছে (তবে আর কত দিন থাকবে, তা বলা মুশকিল)।"
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
ফেসুবকে ভাইরাল
ওই মিথ্যে দাবি সমেত, ছবিটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিনেমার দৃশ্য ছড়াল পঞ্জশিরে স্থানীয়দের উপর তালিবানি জুলুম বলে
তথ্য যাচাই
বুম দেখে, ছবিটি এঁকেছেন রুশ শিল্পী রসিকানন্দ দাস। এবং আফগানিস্তানের পঞ্জশিরের সঙ্গে সেটির কোনও সম্পর্ক নেই, যদিও তেমনটাই দাবি করা হয়েছে।
গুগুল ইমেজস-এ রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, সেন্ট পিটার্সবার্গে রুশ আর্ট গ্যালারি 'আর্ট এসপিবি'তে ছবিটি রয়েছে। রুশ ভাষায় লেখা ছবিটির বিবরণে বলা আছে, ছবিটি এঁকেছেন রসিকানন্দ দাস। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, 'কৃষ্ণ অ্যান্ড দ্য পান্ডবাস' (কৃষ্ণ ও পাণ্ডবরা)।
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
রসিকানন্দ দাসের বায়ো তে বলা আছে, উনি রাশিয়ার কসমোসল্ক অন-আমুর-এ ১৯৭৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। রাশিয়ার 'ক্রিয়েটিভ ইউনিয়ন অফ আর্টিস্টস' ও 'ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ আর্টিস্টস'র সদস্য উনি। আমরা তাঁর 'রসিকানন্দ দাস' নামের ফেসবুক প্রোফাইলও দেখি, তাতে উনি জানিয়েছেন যে, উনি একজন শিল্পী ও কৃষ্ণ ভগবানের ছবি আঁকেন।
এরপর বুম রসিকানন্দ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। উনি জানান যে, ফোটোতে যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে, সেটি তাঁরই আঁকা এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে ছবিটির সম্পর্কের দাবিটি উড়িয়ে দেন। "হ্যাঁ, ওটা আমারই আঁকা ছবি। আমি সেটি দক্ষিণ রাশিয়ার সোচি'তে ১৯৯৯ সালে এঁকেছিলাম। ছবিটি শ্রীমদ ভগবত'র সপ্তম পর্বের চিত্রায়ন। এই পেইন্টিংটি আমার অরিজিনাল সৃষ্টি। ওটা আদৌ পঞ্জশির নয়।"
ছবিটি সম্পর্কে সোশাল মিডিয়ায় যে দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে, সেটিকে খল্ডন করে দাস ফেসবুকেও পোস্ট করেছেন।
ইমেলের মাধ্যমে আমরা রুশ আর্ট গ্যালারিটির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা নিশ্চিত করে জানান যে, ছবিটি দাসের আঁকা।
"রসিকানন্দ রাশিয়ার মানুষ এবং ওই ছবিটির স্রষ্টা। এ বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই। ছবিটি শ্রীমদ ভগবতের সপ্তম পর্বের ভিত্তিতে আাঁকা," আর্ট এসপিবি ইমেলের মধ্যমে বুমকে জানায়।
তাছাড়া, ছবিটি আফগানিস্তানের পঞ্জশিরের অথবা পঞ্জশির উপত্যকার একটি 'প্রাসাদে' রয়েছে বলে কোনও বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন আমরা দেখতে পাইনি।
আরও পড়ুন: তালিবানপন্থী মহিলাদের বৈঠকে বোরখা পরা পুরুষের ভাইরাল ছবিটি কারসাজি করা