১১ বছরের এক নাবালিকা অভিযোগ করেছিল যে, ২০১৭ সাল থেকে তার বাবা এবং ভাই সহ অন্যান্য আত্মীয়রা বারংবার তাকে ধর্ষণ (Rape) করে গেছে। এই সূত্রে পুণের (Pune) এক পরিবারের চারজনকে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা নাকি সকলেই (Muslims) মুসলিম।
গোটা বিষয়টাতে একটা সাম্প্রদায়িক রঙ চড়াতে অভিযুক্ত চারজনকেই মুসলিম বলে শনাক্ত করা হয়েছে, আবদুল, জাভেদ, ফারহান ও নিজাম।
বুম পুনে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা অভিযুক্তদের মুসলিম হওয়ার অভিযোগ ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বান্দ গার্ডেন থানার পুলিশ ইনস্পেক্টর (অপরাধ) অশ্বিনী সতপুথে বুম-কে জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের কেউই মুসলমান নয়।
"এই উপলক্ষে যে নামগুলো ছড়ানো হয়েছে, সব কটাই ভুয়ো নাম, কেননা সকলেই মেয়েটির নিজের পরিবারের আত্মীয় এবং সেটি কোনও মুসলিম পরিবারও নয়।"
সংবাদসংস্থা এএনআই একটি টুইট করে ঘটনার প্রতিবেদনে লিখেছে, কয়েকটি দক্ষিণপন্থী টুইটে অভিযুক্তদের নাম আবদুল, জাভেদ, ফারহান ও নিজাম বলে প্রচার করা হয়েছে এবং ঘটনাটিতে সাম্প্রদায়িক রঙ চড়ানোর চেষ্টাও হয়েছে।
কিছু টুইটার ব্যবহারকারী আবার বলেছে, ধর্ষণকারীদের নামগুলো যে প্রকাশ করা হয়নি, তার কারণ তারা সকলেই মুসলিমl তবে এই বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ভুয়ো, কেননা ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং ধর্ষণ বিষয়ক প্রতিবেদনে সাংবাদিকতার নীতিনির্দেশ অনুযায়ী ধর্ষিতার বা তার পরিবারের নাম-পরিচয় প্রকাশ করাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যাতে জরিমানা ছাড়াও দু'বছর পর্যন্ত হাজতবাস হতে পারে।
টুইটটি দেখা যাবে এখানে।
টুইটটি দেখুন এখানে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: বগটুই হত্যাকাণ্ড: ভুয়ো দাবিতে ছড়াল অনুব্রত মণ্ডলের পুরনো ছবি
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, পুণেতে আত্মীয়দের দ্বারা উপর্যুপরি ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগ জানানো নাবালিকা মেয়েটির পরিবারের লোকেরা মুসলিম বলে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, সেটি ভুয়ো। কারণ ধর্ষকরা কেউই মুসলমান নয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রে ২০২২ সালের ২০ মার্চ এই মর্মে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত এফআইআর-এ দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে নাবালিকাটি যখন বিহারের পাটনায় বাস করত, তখই সে বাবার দ্বারা উপর্যুপরি ধর্ষিত হয়। পরে মেয়েটির পরিবার পুণেতে চলে এলে সেখানেও তার দাদা তাকে কয়েকবার ধর্ষণ করে, এমনকী তার এক কাকা এবং দাদুও তাকে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত টানা ধর্ষণ করে গেছে বার বার।
স্কুলে যখন মেয়েদের স্পর্শ করার ভালোমন্দ, ঔচিত্য-অনৌচিত্য বিষয়ক একটি অধিবেশন চলছিল, তখনই মেয়েটি তার অভিজ্ঞতার কথা খুলে বলে। তাকে যে গত পাঁচ বছর ধরে এই নারকীয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সে কথাও সামনে আসে। পুলিশ ইনস্পেক্টর অশ্বিনী সতপুথে হিন্দুস্তান টাইমস-কে এ কথা জানান ২০২২ সালের ২০ মার্চ।
একই সংবাদপত্রকে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সাগর পাটিল জানিয়েছেন—"মেয়েটি এক হতদরিদ্র দিনমজুর পরিবারের মেয়ে। এখনও তদন্ত চলছে এবং কাউকে এখনও গ্রেফতারও করা হয়নি।"
পুলিশ ইনস্পেক্টর অশ্বিনী সতপুথে বুম-কে জানিয়েছেন, ধর্ষণকারী হিসাবে মুসলিম নাম ছড়ানোটা একটা ভুয়ো গুজব। কারণ অভিযুক্তরা কেউই মুসলিম নয়, সকলেই মেয়েটির নিজের পরিবারেরই আত্মীয়স্বজন এবং তারাও কেউই মুসলমান নয়।
যে সাংবাদিক এই বিষয়টি রিপোর্ট করেন, আমরা তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করি এবং তিনিও ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের মুসলিম হওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
আরও পড়ুন: সুইজারল্যান্ডের ভিডিও মিথ্যে সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়াল কলকাতার ঘটনা বলে