খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিংহের (Amritpal Singh) ফোটোশপে তৈরি একটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, ওয়ারিস পাঞ্জাব দে-র (ডাব্লিউপিডি) প্রধানকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (UAE) একটি মসজিদের (Mosque) সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
সেপ্টেম্বর ২০২২-এ, সিংহ দুবাই থেকে ফেরেন। তারপর তিনি ডাব্লিউপিডি-র প্রধান হয়ে সকলের নজরে আসেন। বর্তমানে তিনি পাঞ্জাব পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁকে ধরার জন্য ব্যাপক তল্লাসি চালাচ্ছে পাঞ্জাব পুলিশ। এবং ইতিমধ্যেই তাঁর সংঠনের ৭৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ তাঁর সাতটি ছবি প্রকাশ করেছে এবং তাঁকে ধরার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই ভুয়ো ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে।
টুইটার হ্যান্ডেল ড. সৈয়দ রিজওয়ান আহমেদ ওই সম্পাদিত ছবিটি টুইট করে ক্যাপশনে লেখেন, “জাল পাঞ্জাব দে! শিখও নয়, ভারতীয়ও নয়!”
টুইটি দেখুন এখানে।
গত মাস থেকেই এই ভুয়ো ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে।
টুইটটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে পেছনে মসজিদ সহ অমৃতপাল সিংহের ছবিটি সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে। তাঁর লিঙ্কডইন অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া আসল ছবিটিতে সিংহের পিছনে একটি কাঁচের কাঠামো রয়েছে। এবং মিথ্যে দাবি ছড়নোর জন্য মসজিদের ছবিটি পরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৩ সালে, অমৃতসরের জাল্লুপুর খেরা গ্রামে জন্ম হয় সিংহের। সেই গ্রামের কাছেই একটি স্কুলে তিনি লেখাপড়া করেন। দু’ সপ্তাহ আগে বুমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিংহ তাঁর অতীত সম্পর্কে কিছু কথা বলেন। তিনি বলেন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ২০০৮ সালে, পাঞ্জাবের কাপুরথালায়, লর্ড কৃষ্ণ পলিটেকনিকে তিনি ভর্তি হন।
সিংহ আরও বলেন যে, সেই কোর্স শেষ না করেই তিনি ২০১২ সালে দুবাই চলে যান। সেখানে তিনি তাঁর পরিবারের পরিবহন ব্যবসায় সাহায্য করতে শুরু করেন। তাঁর দেওয়া এই সব তথ্য তাঁর লিঙ্কডইন প্রোফাইলে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলে যায়। রিভারর্স ইমেজ সার্চ করলে সেখানে আমরা আসল ছবিটি দেখতে পাই।
তাঁর লিঙ্কডইন প্রোফাইলে লেখা রয়েছে, “অভিজ্ঞ অপারেসন্স ম্যনেজার। পরিবহন/ট্রাক/রেল পরিষেবায় কাজ করার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা রয়েছে। সাপ্লাই চেন অপটিমাইজেশন, আমদানি, অপারেসন্স ম্যানেজমেন্ট, মাল পরিবহন ও সমুদ্রপথে পরিবহনে দক্ষ। অপারেসন্স-এর ক্ষেত্রে দক্ষ পেশাদার। রয়েছে ব্যাচেলর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (বিইঞ্জ)। পাঞ্জাবের কাপুরথালার লর্ড কৃষ্ণ পলিটেকনিক কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।”
তাঁর অ্যাকাউন্টে দেওয়া নিজের ছবির সঙ্গে ভাইরাল ছবিটি মিলে যায়। কিন্তু তাঁর অ্যাকাউন্টের ছবিতে পিছনে কোনও মসজিদ নেই।
দেখুন এখানে।
সিংহের লিঙ্কডইন প্রোফাইলে দেওয়া ছবির সঙ্গে ভাইরাল ছবিটি মেলালে দেখা যায় যে, আসল ছবিটিতে কোনও মসজিদ নেই। তা ছাড়া ভাইরাল ছবিটিতে তাঁর চুল ছাঁটা হয়েছে।
এ ছাড়াও পেছনে যে মসজিদ দেখা যাচ্ছে, সেটি হল সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আবু ধাবিতে অবস্থিত শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। অনলাইনে মসজিদের যে ছবি রয়েছে, সেটি থেকে কেটে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে পিছনের ছবিটি।
মিডিয়াম পোস্টের মসজিদের ছবি ও ফোটোশপে তৈরি ছবির পেছনের দৃশ্য মিলে যায়। তা থেকে স্পষ্ট হয় যে, মসজিদের ছবিটি কেটে আসল ছবিটিতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফোমে তৈরি জাপানি শিল্পীর পায়ের মত মুলো ভাস্কর্যের ছবি ভুয়ো দাবিতে ছড়াল