আনন্দবাজারে (Anandabazar) প্রকাশিত এক বছরের পুরনো অর্থনীতিবিদদের প্রবন্ধের শিরোনাম পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বক্তব্য (fake quote) বলে ভুয়ো দাবিতে সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় টাকা ছাপানোর (currency printing) অধিকার কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি রাজ্যের থাকা উচিত কিনা, এই বিষয়ে শিরোনামটি আসলে ওই দুই অর্থনীতিবিদের লেখা নিবন্ধের।
ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটটি বাংলা গণমাধ্যম আনন্দবাজারে প্রকাশিত তারিখবিহীন একটি খবর যার শিরোনাম লেখা আছে, "টাকা ছাপানোর অধিকার কেন শুধু কেন্দ্রের, রাজ্যের নেই কেন?" এর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি সম্পর্কহীন ছবি জুড়ে এমনভাবে প্রচার করা হচ্ছে যেন ওই শিরোনামটি মমতার বক্তব্য। ছবিটি পোস্ট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ভেবে বিদ্রুপ করা হয় সোশাল মিডিয়ায়।
তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে জয়লাভ করার পর বিজেপি বিরোধী অন্যতম রাজনৈতিক মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন দলের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০ অগস্ট কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গাঁধীর ডাকা বিজেপি বিরোধী দলগুলির মুখদের ভার্চুয়াল বৈঠকে ডাকেন। সেই বৈঠকে অংশ নিয়ে তাঁর মতামত পেশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক বার তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামের এক্তিয়ার নিয়ে মোদী নিয়ন্ত্রনাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল স্ক্রিনশটটি এই প্রেক্ষিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে ছড়ানো হচ্ছে।
ওই স্ক্রিনশটটি শেয়ার করে ত্রিপুরা ক্রীড়া কাউন্সিলের সম্পাদক ও বিজেপি নেতা অমিত রক্ষিত টুইটে লেখেন, "গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র কেন নোট ছাপাবে কেন রাজ্য নয়। যুক্তিপূর্ণ দাবি মাদ্রাসা অর্থনীতিবিদের।"
টুইটিটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ত্রিপুরার ও মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং বিজেপি নেতা তথাগত রায় টুইটারে অন্যের ছবি সংবলিত একই ছবির টুইট কোট করে লেখেন, "শুধু তাই বা কেন? সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এগুলোই বা কেন শুধু কেন্দ্রের হবে? রাজ্যের কেন হবে না ?"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকেও ভাইরাল
বুম দেখে একই স্ক্রিনশট ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম রাজ্যের নোট ছাপানোর অধিকার চেয়ে মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের গণমাধ্যমে কোনও বক্তব্য খুঁজে পায়নি।
বুম যাচাই করে দেখে আনন্দবাজারে প্রকাশিত ওই শিরোনামের বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয়। দুই অর্থনীতিবিদের মতামত ভিত্তিক লেখার শিরোনাম।
বুম কিওয়ার্ড সার্চ করে আনন্দবাজার অনলাইনে একই শিরোনামে ২০২০ সালের ১৫ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়। অর্থনীতিবিদ সুগত মারজিত এবং জয়ন্ত দ্বিবেদী মতামতভিত্তিক ওই উত্তর-সম্পাদকীয় প্রতিবেদন লেখেন। আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
ভাইরাল হওয়া প্রতিবেদনটিতে কোনও তারিখ বা প্রতিবেদকের নামের উল্লেখ নেই।
অর্থনীতিবিদ সুগত মারজিত বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্স ক্যালকাটাতে কর্মরত। জয়ন্ত কুমার দ্বিবেদী ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক।
ওই দুই অর্থনীতিবিদ তাঁদের নিবন্ধে লেখেন, "যখন দেশে বিভিন্ন ধরনের মহাদুর্যোগের কারণে টাকা ছাপানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে, রাজ্যগুলো সরাসরি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ধার করে নতুন টাকা পেতে পারবে, এমন নিয়ম হওয়া অতি জরুরি। টাকা ছাপানোর অধিকার কিছুতেই একতরফা হতে পারে না। নিশ্চয় কেউ কেউ বলবেন 'এই' রাজ্য বা 'সেই' রাজ্যকে দিলে 'দেশটা উচ্ছন্নে যাবে'। কিন্তু মনে রাখবেন, রাজ্যের নাগরিক দেশেরও নাগরিক। আর রাজ্যের নাগরিকদের বাদ দিলে দেশটার কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। প্রয়োজনে রাজ্যগুলোর কেন্দ্রের মতো খরচ করার সমান অধিকারও থাকা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এই দাবি নিয়ে আগামী দিনে সংঘাত অনিবার্য।"
বর্তমান ২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, টাকা ছাপানোর এক্তিয়ার একমাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার। ২৫ নম্বর ধারায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ডের সুপারিশ ও পরামর্শে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটের নকশা, ব্যবহৃত উপাদান এবং ধরণ অনুমোদনের কথা বলা আছে।
নিচে সুগত মারজিত ও জয়ন্ত দ্বিবেদীর লেখা আনন্দবাজারের মূল প্রবন্ধ ও ভুয়ো স্ক্রিনশটটির তুলনা দেওয়া হল।