পাকিস্তানে (Pakistan) একজন প্যারাগ্লাইডারকে আটক করার ভিডিও অপারেশন সিঁদুরের (Operation Sindoor) আবহে ভুয়ো দাবিসহ ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেটিজেনদের একাংশের দাবি ভারতীয় বিমান বাহিনীর (Indian Air Force) এক মহিলা পাইলট (pilot) শিবাঙ্গী সিংহকে (Shivangi Singh) পাকিস্তানি আধিকারিকদের হাতে ধরা পড়তে দেখা যায় ভিডিওটিতে।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটি পাকিস্তানের চিত্রাল বিমানবন্দরের যেখানে এক ব্যক্তি প্যারাগ্লাইডিং করার সময় অবতরণ করে। আমরা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি ভিডিওর ব্যক্তি বাংলাদেশের একজন নাগরিক যিনি বর্তমানে প্যারাগ্লাইডিং প্রশিক্ষণের জন্য পাকিস্তানে রয়েছেন।
ভাইরাল ভিডিওটি পোস্ট করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লেখেন, “পাক-ভারত সীমান্ত (কোটলি) এলাকায় পাকিস্তান বিমান বা’হিনী কর্তৃক রাফা’য়েল ভূ’পা’তিত হওয়ার পর ভা’রতের একমাত্র মহিলা পাইলট আ’টক করছে পাকিস্তানি সেনা।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
আরও এক ব্যবহারকারী ভিডিওটি পোস্ট করে ফেসবুকে দাবি করেন, “পাক বাহিনীর হাতে ভারতের মহিলা পাইলট শিবাঙ্গী সিংহ এর আটক হওয়ার দৃশ্য।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
বুম অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) পাইলট শিবাঙ্গী সিংহ পাকিস্তানের হেফাজতে ভুয়ো দাবি করে ছড়ানো একাধিক ভাইরাল পোস্ট খণ্ডন করেছে। আইএএফ বুমকে স্পষ্ট করে জানায় শুধু শিবাঙ্গী সিংহ নয়, কোনও ভারতীয় পাইলটই পাকিস্তানের হেফাজতে নেই। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনির জনসংযোগের (আইএসপিআর) প্রধান আহমেদ শরিফ চৌধুরীও একটি সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন তাদের হেফাজতে কোনও ভারতীয় পাইলট নেই।
তথ্য যাচাই: ভাইরাল ভিডিও বাংলাদেশী প্যারাগ্লাইডারের
বুম ভাইরাল ভিডিওসহ একটি এক্স পোস্ট পায় যেখানে পাকিস্তানি আধিকারিকদের হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিকে একজন বাংলাদেশী প্যারাগ্লাইডার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পোস্টটি থেকে আরও জানা যায় ঘটনাস্থল পাকিস্তানের চিত্রাল বিমানবন্দর এবং খারাপ আবহাওয়ার জন্য ওই প্যারাগ্লাইডার সীমান্তের উপর অবতরণ করেন।
এরপর, আমরা পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলের চিত্রাল লাইনের এক প্যারাগ্লাইডিং পাইলট সাজিদ উর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করি, যিনি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও আসল ঘটনার একটি বিবরণ পোস্ট করেন। রহমান তার বক্তব্যে নিশ্চিত করেছেন, ভিডিওটি আইএএফ পাইলট শিবাঙ্গী সিংহের নয় এবং ভাইরাল দাবি ভুয়ো।
এছাড়াও, আমরা ভিডিওয় দৃশ্যমান ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করি যিনি নিজের পরিচয় দিয়েছেন রিয়াদ হিসাবে। বুম বাংলাদেশকে রিয়াদ জানান তিনি একজন বাংলাদেশের নাগরিক এবং বর্তমানে প্যারাগ্লাইডিংয়ের প্রশিক্ষণের নেওয়ার জন্য পাকিস্তানে থাকছেন। ভিডিওর ঘটনাক্রমের বর্ণনা দিতে গিয়ে রিয়াদ বলেন, চিত্রালে নিয়মিত প্রশিক্ষণের সময় স্থানীয় পাইলটরা তাকে জানিয়েছিলেন চিত্রিল বিমানবন্দরটি বন্ধ আছে। তাই, তিনি বিমানবন্দরের আশেপাশে অবতরণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন যার অনুমতি আছে।
“অবতরণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমি গরু চারণ করছে এমন একটি ঘাসের জমি দেখতে পাই যা অবতরণের জন্য নিরাপদ বলে আমার মনে হয়েছিল।। কিন্তু নামার সময় আমি বিমানবন্দরের পরিধি লক্ষ্য করি। যেহেতু প্যারাগ্লাইডিং একটি মোটরবিহীন স্পোর্ট, তাই একবার অবতরণ শুরু করলে গতিপথ বা উচ্চতা পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা থাকে না।”
রিয়াদ আরও জানান অবতরণের পরেই, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষীরা তাকে প্রথমে আটক করলেও, পরে তার নথি যাচাই করে তাকে ছেড়ে দেন।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: তৌসিফ আকবর, বুম বাংলাদেশ)