'ছেলে হারানো শোক সইতে পারলেন না, মৃত্যু হল ***** বাবার' - হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই দাবিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এক খবর ছড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
নেটিজেনদের অনেকেই এবিষয়ে পোস্ট করে বিস্ময় ও দুঃখ প্রকাশ করলেও তাদের মধ্যে কয়েকজন ভাইরাল সেই খবরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বুম যাচাই করে দেখে যাদবপুরে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় সেই ছাত্রের বাবা এখন ছেলের মৃত্যুর বিচারের আশায় রয়েছেন। নিজের মৃত্যুর এমন ভুয়ো খবরে তিনি আমাদের 'ঠিক রয়েছেন' বলে জানান।
যাদবপুরে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদে মুখর হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী থেকে সাধারণ মানুষ। বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে ছাত্রছাত্রীদের উপর হওয়া র্যাগিংয়ের অভিযোগ। এহেন রাজ্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক পড়ুয়া ও প্রাক্তনীকে। গোটা ঘটনায় সরগরম হয়েছে রাজনৈতিক মহলও।
ফেসবুকে এক পোস্টে প্রয়াত ছাত্রের মৃত্যুর খবরটি পোস্ট করে এক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী লেখেন, "একটা দুঃখের বিষয় বলি- খুনি বামপন্থী সংগঠনের হাতে খুন হওয়া, যাদবপুরের ছাত্র ***** বাবা, ছেলে হারানোর শোক সামলাতে না পেরে মারা গেলেন। ওরে শুয়োরের বাচ্চার দল, আর একবার গর্ব করে বল, "আগে চান্স পেয়ে দেখা"! ওয়াক থুঃ"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
অন্য এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, "****** হত্যার সাথে জরিত সকল দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে,, কি বলব, বলবার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
প্রথমে আমরা সংশ্লিষ্ট কীওয়ার্ড সার্চ করে দেখতে পাই সাধন বিশ্বাস নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী খবরটি ভুয়ো দাবি করে একটি পোস্ট করেছেন।
তিনি এক ভিডিও প্রতিবেদনের ছবি পোস্ট করে লেখেন, "আজ দুপুরবেলায় সমাজ মাধ্যমে একটি খবর দেখে যারপর নাই মুষড়ে পড়েছিলাম। যদিও বেশ বুঝতে পারছিলাম-- খবরটি ভুয়ো। যেহেতু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত ছেলেটি আমার বাল্যবন্ধুর ছেলে এবং আমাদের পারিবারিক বন্ধু, তাই চরমতম বেদনা এবং হতাশা নিয়েই তাঁকে ফোন করা হয়েছিল। বন্ধু ফোন ধরলেন এবং তিনি জানালেন, তিনি শারীরিকভাবে ভালো আছেন।"
ওই পোস্টে তিনি জানান, "একটি পাতি চ্যানেলে এরকম একটি খবর পরিবেশিত হয়েছে যে, ছেলের শোক সামলাতে না পেরে যাদবপুরে মৃত ছাত্রের বাবা মারা গেলেন। এই জাতীয় খবরের অসৎ উদ্দেশ্য ধরতে না পেরে আমাদের অনেক প্রিয় বন্ধু সেটিকে তথ্যসূত্র মনে করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। দয়া করে এই বিভ্রান্তিমূলক খবরে আমল দেবেন না এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারিগর হয়ে উঠবেন না। যারা ইতিমধ্যেই এই মর্মে পোস্ট করেছেন বা শেয়ার করেছেন, তারা সেটি মুছে দিয়ে সামাজিক দায়িত্ব পালন করুন।"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
বুম এরপর যাদবপুরের প্রথম বর্ষের সেই প্রয়াত ছাত্রের বাবা রামপ্রসাদ কুন্ডুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান ভুয়ো এই খবর তার কাছেও এসে পৌঁছেছে। রামপ্রসাদ এবিষয়ে আমাদের 'ঠিক রয়েছেন' বলে জানান।
রামপ্রসাদ বুমকে বলেন, "আমি জানি না কারা এই খবর ছড়িয়েছে। আত্মীয়স্বজন কান্নাকাটি করেছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর ফোন এসেছে। এমন একটা খবরে সবাই খুব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটিয়েছে। ছেলেকে তো আমি হারিয়েই ফেলেছি। সবাই আমাকে বলভরসা দিন যাতে ওর মৃত্যুর বিচারের জন্য আমি লড়াই করতে পারি। আমি ঠিক আছি।"