কর্নাটকে হিজাব (Karnataka Hijab Row) নিয়ে বর্তমানে চলতে থাকা তুমুল বিতর্কের মধ্যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে জনতা দল সেকুলার-এর সদস্যা নাজমা নাজির চিক্কাননেরালের (Najma Nazeer Chikkanerale) প্রোফাইলের হিজাব পরা ও হিজাব ব্যাতীত ছবি চুরি করে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়া হয়েছে।
ভুয়ো ছবির এই কোলাজ ভাইরাল করে নাজমাকে কলেজ-ছাত্রী বলে চালানোর চেষ্টাও হচ্ছে।
এ ছাড়াও ইনস্টাগ্রাম থেকে এক মডেলের ছোট লাল জামা পরা ছবি চুরি করে তার মুখে নাজমার মুখ ফোটোশপ (Morped Image) করেও বসানো হয়েছে।
কর্নাটকের উদুপিতে চলতে থাকা হিজাব বিতর্কের প্রেক্ষাপটেই ছবিগুলি শেয়ার করা হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরেই মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে ক্লাসে ঢোকার অধিকারের দাবি ও তার প্রতিবাদে পাল্টা গেরুয়া জামা বা চাদর গায়ে ছাত্রদের ক্লাসে ঢোকার রেষারেষিতে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি উত্তাল হয়েছে।
এই বিষয়ে বুম-এর প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলিতে মহিলার হিজাব পরা ও না-পরা তিনটি ছবি দেওয়া হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা: "ইনি নাজমা নাজির... ইনি যখন আইসক্রিম পার্লারে কিংবা পিত্জা কিনতে যান, তখন বোরখা কিংবা হিজাব পরেন না...কিন্তু স্কুলে তো ওঁদের অন্য এজেন্ডা! কী চাইবেন ওঁরা এর পর? প্রকাশ্যে পাথর ছুঁড়ে মারা কিংবা চাবুক মারার শাস্তিকে আইনসম্মত করা? আজকে তিনি প্রচার পাওয়ার জন্যে হিজাব পরেছেন। আগামী কাল হয়তো তাঁর সম্প্রদায়ের পুরুষরা হিজাব না-পরলে তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া দেবেন! এ ভাবেই তো সমাজে পশ্চাত্পদতার রীতিগুলোকে স্বাভাবিক করে নেওয়া হয়!"
ফেসবুক পোস্টটি দেখা যাবে এখানে।
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে।
সংশ্লিষ্ট ছবিগুলির কোলাজ একই দবি সহ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফোটোশপ করা ছবি
অন্য এক টুইটার ব্যবহারকারী লাল জামা পরা এক মহিলার একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করেছেন, সেটি নাজমা নাজির-এর ছবি। বিবরণে লিখেছেন—"এই হলো হিজাব-যোদ্ধা নাজমা নাজির-এর আসল চেহারা! ইনস্টাগ্রাম থেকে তাঁর এই ছবিটি পাওয়া গেছে!"
পোস্টটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: হিজাব বিতর্ক: মিথ্যে দাবিতে ছড়াল ছেলেদের গেরুয়া পাগড়ি ফেরানোর ভিডিও
তথ্য যাচাই
বুম দেখে প্রথম এক গুচ্ছ ছবি নাজমা নাজির চিক্কাননেরালের। নাজমা কোনও কলেজ-ছাত্রী নন। তিনি বর্তমানে জনতা দল সেকুলার কর্নাটকের সমিতি পর্যবেক্ষক।
ফেসবুকে তাঁর প্রোফাইলের ছবি হিসাবে ভাইরাল হওয়া হিজাব-পরিহিত ছবিটাই রয়েছে।
বুম-কে নাজমা জানান—"এগুলি আমার পুরনো ছবি, যা সোশাল মিডিয়ার প্রোফাইল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। আমার যা খুশি পরার সাংবিধানিক অধিকার আছে।"
এই নাজমাকে ইচ্ছাকৃতভাবেই মুস্কান-এর সঙ্গেও গুলিয়ে ফেলা হয়েছে, যে-মেয়েটির বোরখা পরে কলেজে ঢোকার সময় হেনস্থাকারী একদল ছাত্রের মোকাবিলা করার দৃশ্য দেশ জুড়ে ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: কর্নাটক হিজাব বিতর্ক: না, ছবিটি ছাত্রী মুসকান খানের নয়
দ্বিতীয় ছবিটি ফোটোশপ করা
আমরা ছোট্ট লাল জামা পরা মেয়েটির ছবি খোঁজখবর করে ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিলের একটি টুইট পেয়েছি, যার হ্যাশট্যাগে 'তানিয়া জেনা' লেখা রয়েছে।
এই সূত্র অনুসরণ করে আমরা দেখলাম তানিয়া জেনা ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ ইনস্টাগ্রামে নিজের ওই ছবিটাই প্রোফাইল ছবি হিসাবে পোস্ট করেছে।
তানিয়া জেনার এই ছবির মুখেই ফোটোশপ করে নাজিরের মুখ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। নীচের তুলনা থেকেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়।
তা ছাড়া নাজির বুম-কে নিশ্চিত করেছে, "ওটা মোটেই আমার ছবি নয়। ওটা ফোটোশপ করে বসানো হয়েছে।"
আরও পড়ুন: কর্নাটক হিজাব বিতর্ক: সাংবাদিক রানা আয়ুব ও রাজনীতিক নাজমা নাজিরের ছবি ছড়াল মুসকান বলে