২০১২ সালে জুন মাসে, জম্মু ও কাশ্মীরে (Jammu and Kashmir) একটি ধর্মস্থান পুড়ে যাওয়ার ছবি সোশাল মিডিয়ায় মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক হিংসা (Tripura Violence) চলাকালে একটি মসজিদে (Mosque) আগুন (Fire) ধরিয়ে দেওয়ার ছবি সেটি।
উত্তর ত্রিপুরায় কিছু অংশে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে, একটি মসজিদ ভাঙ্গচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ত্রিপুরা রাজ্যের পানিসাগর মহকুমায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি জনসভা চলাকালে দোকানপাট ও বাড়িঘর আক্রমণ করা হয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে।
পানিসাগর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সৌভিক দের কথা উদ্ধৃত করে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, চামটিল্লা অঞ্চলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সমর্থকরা একটি মসজিদ ভাঙ্গচুর করে। তারপর, রোয়া বাজার এলাকায়, তিনটি বাড়ি ও তিনটি দোকানের ওপরও হামলা হয়। এছাড়া দু'টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রথম যে ঘটনাটি ঘটে, তার থেকে ৮০০ গজ দূরে ঘটে পরের ঘটনাটি।
বাংলায় লেখা ক্যাপশন সহ ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে। ক্যাপশনে বলা হয়েছে: "ত্রিপুরা মুসলমানদের জন্য দোয়া করুন সবাই! ভারতের একটি ছোট্ট অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরা। ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ১৬ টি মসজিদে আগুন এবং অনেক ঘর বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে। ত্রিপুরার মুসলিমদের জন্য দোয়া করুন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মুসলমানদের উপর বেশ কিছুদিন ধরে হামলা চলছে। মুসলিমদের বহু বাড়িঘর, দোকানপাট ও ১২টি মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনগোষ্ঠী ও বজরং দলের লোকেরা। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পা চাটা মোদী মিডিয়া আর ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর কথা বাদ দিলাম। মুসলিম রাজনৈতিক নেতারাও ত্রিপুরা সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড় দেন কিন্ত ছেড়ে দেন না! #TripuraMuslimsUnderAttack #TripuraViolence #SaveTripuraMuslims #SaveTripura #StandwithTripuraMuslims #SaveTripura #savemasjid #saveQuran")
ভাইরাল ছবিটির ওপর ২৬ অক্টোবর, ২০২১ তারিখ দেওয়া আছে। আর বাংলায় লেখা আছে "ত্রিপুরা মাসজিদ"।
ফেসবুক পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন: মণিপুরে অসম রাইফেলস জওয়ানদের উপর আক্রমণ বলে ছড়াল ২০১৫ সালের পুরনো ছবি
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে ছবিটি টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে ২৬ জুন, ২০১২ প্রকাশিত হয়েছিল।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, শ্রীনগরের ঐতিহাসিক সুফি ধর্মস্থান পুড়ে গেল...বাড়িটিকে বাঁচানোর ব্যাপারে দমকল বিভাগের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন স্থানীয় মানুষ।"
ওই একই ছবি, ২৫ জুন, ২০১২ থেকে রিডিফ নিউজ'এর ছবি সংগ্রহের মধ্যেও রয়েছে।
বাড়িটিকে পীর দস্তগীর সাহেবের দরগা বলে শনাক্ত করা হয়। ২৫ জুন, ২০১২ ডেকান হেরাল্ড প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সকাল ৬.৩০'এ ওই আগুন লাগে। সন্দেহ করা হয়, একটি মিনারে শর্ট-সার্কিটের কারণেই আগুন ধরে যায়। তারপর সেটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ৩০০ বছরের প্রাচীন পীর দস্তগীর সাহেবের নামাঙ্কিত ওই ধর্মস্থান পুড়ে গেলে, সংঘর্ষ বাধে। তার ফলে, ৫৫ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন পুলিশ ও ১৫ জন দমকল কর্মী।
এনডিটিভি, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও এবিপি নিউজের খবর পড়ুন।
গ্রেটার কাশ্মীর প্রকাশিত খবরে বলা হয় বাৎসরিক ঔরস উপলক্ষ্যে ধর্মস্থানটিকে মেরামত করে ২০১৫ সালে আবার খুলে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বিজেপি নেতারা শ্রীশৈলম বাঁধের ছবি ছড়ালেন উত্তরপ্রদেশের প্রকল্প বলে