রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ (Ram Nath Kovind) যখন সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের কানপুরে জানান তাঁর মাসিক ৫ লক্ষ টাকা বেতনের (Salary) জন্য তিনি ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা কর দিয়ে থাকেন, তখনই রাষ্ট্রপতির বেতনের উপর কর (Tax) নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি সমবেত জনতাকে বোঝাতে চাইছিলেন তাঁর বেতনের অঙ্ক আপাতদৃষ্টিতে অনেক মনে হলেও এ জন্য তাঁকে বেশ ভাল রকম করও দিতে হয়।
বুম দেখে, ১৯৫১ সালের আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নানা রকম বেতন ও অন্য আর্থিক সুবিধা ভোগ করে থাকেন বটে, তবে তাঁর মাসিক ৫ লাখ টাকার বেতন করমুক্ত নয়।
"আমরা রাষ্ট্রপতিরা ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা মাসে-মাসে কর দিয়ে থাকি, কিন্তু লোকে শুধু আমাদের ৫ লক্ষ টাকা বেতনের কথাই উল্লেখ করে। ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা কর দেবার পর আর কত টাকা পড়ে থাকে? আর যতটুকু টাকা পড়ে থাকে, আমাদের অফিসাররা অনেকেই তার থেকে বেশি আয় করেন। শিক্ষকরা তো সবচেয়ে বেশি টাকা রোজগার করেন। এটা বলার অর্থ হল, ওই করের টাকা উন্নয়ন ও বিকাশের খাতেই ব্যয় হয় । তা যদি না হত, তাহলে ক্ষতি হত কাদের? আপনার-আমারই !", বলেন রামনাথ কোবিন্দ।
এই মন্তব্যের থেকে আভাস পাওয়া যেতে পারে, রাষ্ট্রপতির বেতনের ৫৫ শতাংশই কর দিতে চলে যায়। রাষ্ট্রপতির আয়ের কোনও হিসাব অবশ্য জনসমাজে প্রকাশ্যে আলোচিত হয় না।
রাষ্ট্রপতির এই বিবৃতিকে নিচে দেখতে পাওয়া যাবে।
তাঁর এই বিবৃতির পরেই সোশাল মিডিয়ায় জল্পনা শুরু হয়ে যায় রাষ্ট্রপতির আয় আইনত করমুক্ত।
আরও পড়ুন: ঐশী ঘোষের কন্ঠে চিনের জাতীয় সঙ্গীত? স্প্যানিশ গানের সুর বদল ভিডিওটিতে
নিচে রাষ্ট্রপতির প্রদত্ত করের বিষয়ে আমরা যা জানি তা রইল।
১. রাষ্ট্রপতির আয় কত
১৯৫১ সালের এ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাসিক আয় ৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু এ কথা কোথাও বলা নেই যে সাংবিধানিক পদ অলংকৃত করার জন্য এই আয় করমুক্ত।
"সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন, ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুযোগসুবিধা সংসদ নির্ধারণ করে থাকে। ২০১৮ সালের অর্থ বিলে সেই বেতন সংশোধন করে মাসিক ৫ লক্ষ টাকা করা হয়। না সংবিধান, না ১৯৫১ সালের সংশ্লিষ্ট আইন, কোথাওই এই আয়কে করমুক্ত বলে দেখানো হয়নি," বুমকে এবিষয়ে জানান পিআরএস লেজিস্লেটিভের মৃদুলা রাঘবন।
সংশ্লিষ্ট আইনটিকে নীচে দেখতে পাবেন।
রাষ্ট্রপতি পদে থাকা কালে তাঁর প্রাপ্য অন্যান্য সুযোগসুবিধার কথাও ওই আইনে স্পষ্ট উল্লেখ করা রয়েছে:
১. বিনা ভাড়ায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের কোনও আর্থিক দায় ছাড়াই একটি আসবাবসজ্জিত আবাসন
২. বিনা পয়সায় একটি মোটরগাড়ির ব্যবহার
৩. নিখরচায় মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট
৪. সচিব, ব্যক্তিগত সহকারী এবং পিওন সহ একটি পূর্ণাঙ্গ সচিবালয়
৫. নিখরচায় চিকিৎসা এবং নার্স-আয়া ইত্যাদি
৬. বিমান, ট্রেন ও জাহাজ যোগে দেশময় ভ্রমণ
উপরন্তু, অবসরের পর রাষ্ট্রপতি যত দিন জীবিত থাকবেন, তত দিন প্রাপ্ত বেতনের অর্ধেক পেতে থাকবেন। তবে এই সব আয় বা রোজগারের কোনওটাই করমুক্ত নয়।
একই ধরনের আইন দেশের প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সব সদস্য এবং উপরাষ্ট্রপতির বেতন, ভাতা ও অন্য আর্থিক সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, তবে সেই সব আয়ের কিছুই করমুক্ত নয়। গাড়ি, বাড়ি, চিকিৎসার সুযোগ, সচিবালয় এবং দেশময় ভ্রমণের মতো বিষয়গুলির সুবিধা তাঁরাও পেয়ে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট আইনের বিশদ বিবরণ দেখুন এখানে।
২. ভারতের রাষ্ট্রপতি কত টাকা কর দেন?
বুম সেই করের পরিমাণ সম্পর্কে প্রকাশ্যে সুলভ কোনও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে পারেনি। রাষ্ট্রপতি ভবনের মিডিয়া সংক্রান্ত দফতরে যোগাযোগ করেও এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
গত বছরের মে মাসে কোভিড-১৯ জনিত বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে ৭৫ বছর বয়স্ক রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ জানিয়েছিলেন যে দেশের এই দুর্দিনে তিনি তাঁর নিজের বেতনের ৩০ শতাংশ নেবেন না। সেই হিসাবে দেখলে, তিনি তাঁর বার্ষিক ৬০ লক্ষ টাকা বেতনের ৩০ শতাংশ ছেড়ে দিয়ে গত আর্থিক বছরে ৪২ লক্ষ টাকা নিয়েছেন ধরে নেওয়া যায়।
কিন্তু এতে ঠিক কত টাকা কর তাঁকে দিতে হয়েছে?
হর্ষ রুংটা নামে এক আর্থিক বিশেষজ্ঞ বুমকে জানিয়েছেন, "শুধু বেতন বাবদ আয়ের হিসাব ধরলে বছরে ৬০ লক্ষ রোজগার করা একজন সিনিয়র সিটিজেনকে ১৮ লক্ষ ২৪ হাজার ৬৮০ টাকা কর দিতে হতো। আর যদি ৪৩ লক্ষ টাকা আয় করতেন, তাহলে ১০ লক্ষ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা কর দিতে হতো।"
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তিকর দাবিতে বাংলায় ছড়াল ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কেরলে বন্যার ছবি