ব্রিটিশ লেবার পার্টির প্রাক্তন নেতা জেরেমি করবিনের (Jeremy Corbyn) সঙ্গে রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) একটি ছবি প্রচার করে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে যে, এটি বিবিসির নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) বিষয়ক তথ্যচিত্র (Documentary) ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ (India: The Modi Question)-এর প্রযোজকের সঙ্গে রাহুলের ছবি। ২০০২ সালে গুজরাট (Gujarat Riots) দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকার সমালোচনা রয়েছে ওই তথ্যচিত্রে।
ছবিটিতে জেরেমি করবিনের ডান দিকে রাহুল গাঁধী এবং বাঁ দিকে ভারতীয় কংগ্রেস প্রবাসী সংগঠনের সভাপতি স্যাম পিত্রোদাকে দেখা যাচ্ছে। ভুয়ো খবরে মোদী সমালোচক তথ্যচিত্রের প্রযোজক বলা হচ্ছে জেরেমি করবিনকে।
ভুয়ো প্রচার চলছে যে, ৬ মাস আগেই নাকি রাহুল তথ্যচিত্রের প্রযোজকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ইঙ্গিতটা যেন তথ্যচিত্রটির পিছনে রাহুলের হাত আছে!
অথচ তথ্যচিত্রটির প্রথম ভাগে গুজরাত দাঙ্গার ব্রিটিশ তদন্তকারী দলের ইতিপূর্বে অপ্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যেটি ব্রিটিশ সরকারের কাছেও পেশ করা হয়েছিল। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাঙ্গায় "অনিষ্ট বাতাবরণ সৃষ্টিতে সরাসরি দায়ী"। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক স্বভাবতই তথ্যচিত্রটিকে ‘অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তথ্যচিত্রটি যাতে টুইটার এবং ইউটিউব মারফত দেখা না যায়, সে জন্য ভারত সরকার ওই দুই মাধ্যমের লিঙ্ক নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে আরও জানুন এখানে।
এই প্রেক্ষিতেই জেরেমি করবিনের সঙ্গে রাহুল গাঁধীর ছবি ভাইরাল করা হয়েছে।
একটি ফেসবুক পোস্টে যেমন লেখা হয়েছে—“এখন আপনারা জানেন, কে এই বিষয়টার পিছনে রয়েছে এবং কে-ই বা অর্থ ঢেলেছে!”
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, রাহুল গাঁধী এবং স্যাম পিত্রোদার মাঝখানে দণ্ডায়মান ব্যক্তিটি আদৌ বিবিসি-র তথ্যচিত্রের প্রযোজক নন, তিনি হচ্ছেন ব্রিটিশ লেবার পার্টির প্রাক্তন নেতা সাংসদ জেরেমি করবিন। ছবিটির খোঁজখবর করে আমরা বেশ কিছু প্রতিবেদন পেয়েছি, যাতে ২০২২ সালের মে মাসে রাহুল গাঁধী ও স্যাম পিত্রোদার সঙ্গে ব্রিটিশ সাংসদ জেরেমি করবিনের সাক্ষাতের খবর রয়েছে।
প্রতিবেদনটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
স্যাম পিত্রোদাও টুইটারে এই ছবিটি শেয়ার করে ব্যাখ্যা দেন, “এই ছবিতে প্রথমে রয়েছেন রাহুল গাঁধী, তার পরে মাঝখানে রয়েছেন আমার বিশেষ বন্ধু জেরেমি করবিন। তিনি একজন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ এবং আদৌ বিবিসির কোনও কর্মকর্তা নন (তাঁর উইকিপিডিয়া সংযোগ সূত্র এখানে দিলাম)।”
২০২২ সালের মে মাসে যখন রাহুল গাঁধীর সঙ্গে জেরেমি করবিনের সাক্ষাতের এই খবরটি প্রকাশিত হয়, তখনই বিজেপি করবিনের ‘ভারত-বিরোধী’ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য রাহুলের কড়া সমালোচনা করেছিল। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু টুইটারে লিখেছিলেন—“আবার রাহুল গাঁধী ভারতকে অপছন্দ ও ঘৃণা করার জন্য পরিচিত এবং কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতার সমর্থক জেরেমি করবিনের সঙ্গে মোলাকাত করেছেন। নিজের দেশের বিরুদ্ধে আর কত কাল এবং আর কত দূর একজন যেতে পারে?”
কংগ্রেসও অবশ্য বিজেপিকে ছেড়ে কথা বলেনি। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জেরেমি করবিনের একটি সহাস্য সাক্ষাতের ছবি শেয়ার করে রিজিজুর জবাব দেন।
বিবিসি-র ওয়েবসাইটে তথ্যচিত্রটির প্রযোজক হিসাবে ২ জনের নাম রয়েছে, রিচার্ড কুকসন এবং মাইক রাডফোর্ড-এর।
এখনও পর্যন্ত তথ্যচিত্রটি ভারতে মুক্তি পায়নি।