জি নিউজ (ZEE News), রিপাবলিক টিভি (Republic Tv), নিউজ ১৮ রাজস্থান (News18 Rajasthan) সহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে (media) একটি ছাঁটাই ভিডিও (cropped video) চালানো হল। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে দাবি করা হল যে, কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত (Rakesh Tikait) গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলিতে হুমকি দিয়েছেন।
বুম যাচাই করে দেখতে পায়, মূল ভিডিওতে টিকাইত আসলে মন্তব্য করেন যে, খুব শীঘ্রই মিডিয়া হাউসগুলি সরকারের আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে উঠবে।
ক্লিপ করা ভিডিওটি মূল প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে শেয়ার করা হয়েছে। এমনকি জি নিউজের এডিটর-ইন-চিফ সুধীর চৌধুরীও মিথ্যে দাবির সঙ্গে এই ক্লিপ করা ভিডিওটি টুইট করেছেন।
ভারতীয় কিশান ইউনিয়নের সাভাপতি রাকেশ টিকায়েতের ভাই নরেশ টিকায়েতের উপর জি নিউজ সম্প্রতি একটি স্টিং অপারেশন করে। তার পরই এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়। ওই স্টিং অপারেশনে নরেশ টিকাইতকে বলতে শোনা যায় যে, সরকার-নির্ধারিত ন্যূনতম খরিদ মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস বা এমএসপি)- চেয়েও কম দামে আখ মজুত করা হতে পারে। তার পরেই টিকায়েতের এই ছাঁটাই ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
সুধীর চৌধুরী তাঁর টুইটে লেখেন, "রাকেশ টিকায়েতের পরবর্তী লক্ষ্য মিডিয়া হাউস @জি নিউজ সত্যিটা প্রকাশ করেছে বলেই এই হুমকি? তাছাড়া আর কি হতে পারে?"
(হিন্দিতে লেখা মূল লেখা: राकेश टिकैत का अगला टारगेट मीडिया हाउस हैं। @ZeeNews ने सच दिखाया तो ये धमकी? नहीं तो ?)
জি নিউজ এই একই ভিডিও তাদের নিজশ্ব টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও শেয়ার করেছে এবং সঙ্গে হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনের অনুবাদ, "আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য মিডিয়া হাউস- রাকেশ টিকায়েত# জি নিউজের স্টিং অপারেশন দেখে রাকেশ টিকায়েত রেগে আগুন।"
(হিন্দিতে লেখা মূল লেখা: हमारा अगला टारगेट मीडिया हाउस है -राकेश टिकैत..+ #ZeeNews के स्टिंग ऑपरेशन के बाद बौखलाए राकेश टिकैत)
নিউজ ১৮ রাজস্থান, রিপাবলিক ভারত, দ্যইকোনমিক টাইমস সহ বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিষ্ঠান বিষয়টি নিয়ে ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আর্কাইভ দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ক্লিপটি টুইটার এবং ফেসবুকেও ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হয়েছে।
রাকেশ টিকায়েতের মন্তব্যের তথ্য যাচাই
যে দীর্ঘতর ভিডিওটি থেকে ভাইরাল হওয়া ক্লিপটি কেটে নেওয়া হয়েছে, বুম সেটি খুঁজে পেয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর টিকায়েত ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সংবাদ সংস্থা এএনআই ২৭ সেকেন্ড দীর্ঘ একটি ভিডিও টুইট করে।
ওই ভিডিওতে টিকায়েতকে হিন্দিতে মন্তব্য করতে শোনা যায়।
তিনি বলেন, "আপনারা মূলত দিল্লিওয়ালাদের (কেন্দ্রীয় সরকার) দেখুন, যারা নীতি নির্ধারণ করছে, এবং দেশের অর্ধেকটা বিক্রি করে দিচ্ছে। তাদের দিকেও চোখ রাখুন। মধ্যপ্রদেশে ১৮২টি মান্ডি এরা বিক্রি করে দিয়েছে। এমনকি ছত্তীসগঢ়েও যে হাত পড়েনি, তা নয়। এখন যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে সবাইকে এককাট্টা হতে হবে। এর পরের নিশানা হল মিডিয়া হাউজ। যদি আপনারা বাঁচতে চান তবে আমাদের সঙ্গে যোগ দিন, না হলে আপনারাও শেষ হয়ে যাবেন।"
(হিন্দিতে লেখা মূল লেখা: मेन तो उधर दिल्ली वालों को देख लो जिसने कानून बना के आधा देश बेच दिया उनपे भी ध्यान बना लो ना मंडियां बेच दी मध्य प्रदेश की 182 मंडी बेचने निकाल दी छत्तीसगढ़ भी अछूता नहीं रह गया अब तो ये है की सबलोग साथ दो अगला टारगेट मीडिया हाउस है आपको बचना है तो साथ दे दो नहीं तो आप भी गए)
বুম দেখতে পায় ২৮ সেপ্টেম্বর নবভারত টাইমস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এই একই ভিডিওর একটি দীর্ঘতর অংশ আপলোড করে। ভিডিওটির সঙ্গে তারা যে ক্যাপশন দেয়, তার অনুবাদ, "আপনারা হলেন পরবর্তী নিশানা... এ বার মিডিয়াকে ভয় দেখাচ্ছেন টিকাইত! সরকারের পরবর্তী নিশানা হল মিডিয়া, যদি আপনারা বাঁচতে চান... দেখুন রাকেশ টিকায়েত কী বলছেন।"
(হিন্দিতে লেখা মূল লেখা: अगला टारगेट आप हो...अब मीडिया को डरा रहे टिकैत! सरकार का अगला टारगेट मीडिया है, अगर बचना है तो...देखिए क्या बोले राकेश टिकैत)
বুম দেখতে পায়, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি যে সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে, সে বিষয়ে ভারতীয় কিশাণ ইউনিয়নের নিজশ্ব টুইটার হ্যান্ডেল থেকে টুইট করা হয়েছে। হিন্দিতে লেখা টুইটটির অনুবাদ, "সরকার সব কিছু বিক্রি করে দিচ্ছে। সকলকে পরস্পরের পাশে দাঁড়াতে হবে। সরকারের পরবর্তী নিশানা হল মিডিয়া হাউস। যদি নিজেরা বাঁচতে চান আমাদের সমর্থন করুন, না হলে আপনারাও বাঁচবেন না। আইটি সেলের ষড়যন্ত্রকারীরা, এই মন্তব্যটিতে বলা হয়েছে যে, 'সরকারের পরের নিশানা' সংবাদ সংস্থাগুলি। একটি দলের আই টি সেল ভিডিওটি সম্পাদনা করেছে এবং দাবি করছে যে, টিকায়েত মিডিয়াকে হুমকি দিয়েছেন।"
(হিন্দিতে লেখা মূল লেখা: सरकार सब कुछ बेच रही है। सबलोग साथ दो।सरकार का अगला टारगेट मीडिया हाउस है। आपको बचना है तो साथ दे दो नहीं तो आप भी गए। आईटी सेल के षड्यंत्रकारियों यह बयान 'सरकार का अगला टारगेट' मीडिया संस्थानों को लेकर है। एक दल का #ITcell वीडियो एडिट कर टिकैत की मीडिया को धमकी बता रहा है)
বুম টিকায়েতের জনসংযোগ আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে, ক্লিপটি একটি দীর্ঘতর ভিডিও থেকে কেটে তৈরি করা হয়েছে। তিনি বুমকে বলেন, "আমাদের কাছে ৪০ সেকেন্ড লম্বা ভিডিওটি আছে। সেখান থেকেই কেটে নিয়ে এই ক্লিপটি বানানো হয়েছে। সরকারের উদ্দেশে এই কথা বলা হয়েছিল। টিকায়েত সবসব সময় বলেছেন যে, ক্যামেরা আর কলমকে এখন বন্দুক দিয়ে শাসন করা হচ্ছে। সরকার মিডিয়াকে নিশানা করছে।"
আরও পড়ুন: রাজস্থানে পুলিশের ওপর হামলার ভিডিও সাস্প্রদায়িক দাবিতে জিইয়ে উঠল