সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে দাবি করা হয়েছে তিস্তা শেতলবাদের (Teesta Setalvad) প্রপিতামহ স্যার চিমনলাল শেতলবাদ (Chimanlal Harilal Setalvad) জালিয়ানওয়ালা বাগ (Jallianwala Bagh) গণহত্যাকাণ্ডের (Massacre) তদন্তে নিযুক্ত হান্টার কমিশনের সদস্য হিসাবে নিরস্ত্র জনতার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেওয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজিনাল্ড ডায়ারকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছিলেন। পোস্টগুলির অভিযোগ স্যর শেতলবাদ নাকি ডায়ারকে 'ক্লিন চিট' (clean chit) দিয়েছিলেন।
বুম যাচাই করে দেখে এই দাবিটি সর্বৈব মিথ্যা। হান্টার কমিশন ডায়ারের অপকর্মের বিশ্লেষণ করে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল তা দুটি অংশে বিভক্ত ছিল—একটি ছিল কমিশনের চার ব্রিটিশ সদস্যের জমা দেওয়া সংখ্যাগরিষ্ঠের রিপোর্ট যাতে ডায়ারের কাজকে বিধিসম্মত বলা হয়েছিল, অন্যদিকে অপর অংশটি ছিল স্যর শেতলবাদ সহ তিনজন ভারতীয় আইনজীবীর রিপোর্ট যাতে ডায়ারের কাজের তীব্র সমালোচনা করা হয়। তাই ডায়ারের সমর্থনে রচিত গরিষ্ঠের রিপোর্টে স্বাক্ষর করতে শেতলবাদ ও অন্য দুই ভারতীয় আইনজীবী অস্বীকার করেন কারণ তাতে ডায়ারকে 'ক্লিন চিট' দেওয়া হয়েছিল।
এব্যাপারে বুম ব্রিটিশ সাংবাদিক অনিতা আনন্দের সাথে কথা বলে যিনি বিপ্লবী উধম সিংহ-কে নিয়ে লিখেছেন তাঁর বই—"দ্য পেশেন্ট অ্যাসাসিন"।
ওই বইতে অনিতা হান্টার কমিশনের কাজকর্ম সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। অনিতা তাঁর বইতে শেতলবাদকে একজন সুদক্ষ তদন্তকারী হিসাবে বর্ণনা করেছেন যিনি ডায়ারের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে তার ভিত্তিতেই তাঁকে দোষী হিসাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন।
অনিতা বুমকে জানান ভারতীয় আইনজীবীরা, বিশেষতঃ শেতলবাদ, অকুতোভয়ে কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাঁদের তীব্র অভিযোগ-সম্বলিত রিপোর্ট তৈরি করে জমা দেন।
২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার সাক্ষ্য প্রমাণ বিকৃত করার অভিযোগে গুজরাত পুলিশ সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে গ্রেফতার করার পরের দিনই কয়েকটি সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে দাবি করা হতে থাকে যে তাঁর প্রপিতামহ জালিয়ানওয়ালা বাগ গণহত্যাকাণ্ডের খলনায়ক ব্রিগেডিয়ার ডায়ারের ভূমিকাকে 'ক্লিন চিট' দিয়েছিলেন।
যে সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের যাচাই-করা হ্যান্ডেল থেকে এই কুৎসা প্রচার করা হয় তাঁরা হলেন তথ্য ও বেতার মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্ত, দক্ষিণপন্থী লেখিকা মধু কিশোয়ার এবং আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত দক্ষিণপন্থী সাপ্তাহিক মুখপত্র অর্গানাইজার।
কাঞ্চন গুপ্তর টুইটের আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে, মধু কিশোয়ারের টুইটের আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে, এবং অর্গানাইজার পত্রিকার টুইটের আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
একটি ভাইরাল ফেসবুক পোস্ট এবং বেশ কয়েকটি টুইটার পোস্টেও আমরা একই ভুয়ো দাবি সহ প্রচার হতে দেখেছি।
আরও পড়ুন: 'প্রধানমন্ত্রী ঋণ যোজনা' নামে প্রচারিত অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ভুয়ো
তথ্য যাচাই
টুইটার পোস্টগুলির মধ্যে আমরা নীলাঞ্জনা রায় নামে একজন ভারতীয় সাংবাদিক এবং লেখিকার খোঁজ পাই যিনি অনিতা আনন্দের "পেশেন্ট অ্যাসাসিন" বই থেকে উদ্ধৃত করে দেখান চিমনলাল শেতলবাদ ও তাঁর সহযোগী ভারতীয় আইনজীবীরা কমিশনের রিপোর্টটিতে সই করতে অস্বীকার করেছিলেন এবং রিপোর্টটিকে প্রবলভাবে অসত্য বলে জানান।
এই সূত্র অনুসরণ করে আমরা অনিতা আনন্দের সাথে যোগাযোগ করি যিনি আমাদের স্পষ্ট করে বলেন, 'চিমনভাই এবং অন্য দুইজন ভারতীয় আইনজীবী হান্টার কমিশনের তদন্ত রিপোর্টের সঙ্গে একেবারেই সহমত হননি। তাই তাঁরা একটি পৃথক সংখ্যালঘু রিপোর্টের বয়ান পেশ করেন যেখানে পাঞ্জাবে মাইকেল ওডায়ারের সামরিক আইন জারি এবং অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালা বাগে ডায়ারের নির্বিচার গুলিচালনার সমালোচনা নথিভুক্ত করা হয়'।
বিশৃঙ্খলা অনুসন্ধান কমিটি ১৯১৯-১৯২০
১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালা বাগের গণহত্যার পর ব্রিটিশ রাজের অধীন ভারত সরকার ডায়ারের গুলিচালনার তদন্তের জন্য একটি 'বিশৃঙ্খলা অনুসন্ধান কমিটি' তৈরি করে। কমিটির শীর্ষে লর্ড উইলিয়াম হান্টারকে নিয়োগ করায় এটি 'হান্টার কমিশন' নামেও পরিচিত হয়। চারজন ব্রিটিশ আইনজীবী ওই কমিশনের সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হন যারা হলেন জর্জ সি রাংকিন, ওয়াল্টার ফ্রান্সিস রাইস, স্যর জর্জ ডি সাইমন্স ব্যারো এবং টমাস স্মিথ। এরই সঙ্গে নিযুক্ত হন তিনজন ভারতীয় আইনজীবী যথা, পণ্ডিত জগত নারায়ণ, সর্দার সাহিবজাদা সুলতান আহমেদ খান এবং স্যর চিমনলাল শেতলবাদ।
বুম ওই বিশৃঙ্খলা কমিটির রিপোর্টের একটি প্রতিলিপি সংগ্রহ করে এবং তাতে দেখা যায় চূড়ান্ত রিপোর্টটি বাস্তবিকভাবেই দুটি অংশে বিভক্ত।
সংখ্যাগরিষ্ঠের রিপোর্ট
কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের রিপোর্টে ডায়ারের কাজের দুটি মাত্র দিক সমালোচিত হয়েছে - ১, গুলি চালানোর আগে জনতাকে সরে যাওয়ার জন্য কোনও হুঁশিয়ারি না দেওয়া এবং ২, জনতা যখন গুলি চালানোর কারণে ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করে তখনও গুলি চালিয়েই যাওয়া। তার পরেও রিপোর্টে লেখা হয়, "যেহেতু পাঞ্জাবে তখন সামরিক আইন জারি ছিল এবং নাগরিকদের আয়ত্তে আনতে যাবতীয় ব্যবস্থাগ্রহণের ক্ষমতা ডায়ারের হাতে ন্যস্ত ছিল, তাই তাঁর এই কাজ ছিল সমর্থনযোগ্য।"
আমরা লক্ষ্য করি সংখ্যাগরিষ্ঠ কমিশন সদস্যদের পেশ করা এই রিপোর্টে পাঁচ জনের সই রয়েছে — কমিশনের চেযারম্যান লর্ড হান্টার এবং অন্য চারজন ব্রিটিশ আইনজীবীর। ওই রিপোর্টে ভারতীয় কোনও আইনজীবীর স্বাক্ষর নেই।
কমিশনের সংখ্যালঘু সদস্যদের রিপোর্ট
এরপর আমরা সংখ্যালঘু সদস্যদের রিপোর্টটি দেখি যাতে স্যর চিমনলাল শেতলবাদ সহ তিনজন ভারতীয় আইনজীবীর স্বাক্ষর রয়েছে।
এই রিপোর্টটিতে কমিশনের তদন্ত-রিপোর্টের কিছু-কিছু বিষয় অনুমোদন করা হয়েছিল বটে, তবে পাঞ্জাবে ডায়ারের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে, বিশেষতঃ জালিয়ানওয়ালা বাগে গুলিচালনার বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের রিপোর্টের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানই নেওয়া হয়েছিল।
রিপোর্টটিতে ডায়ারের বিভিন্ন পদক্ষেপ যা শেষ পর্যন্ত জালিয়ানওয়ালার গণহত্যায় পর্যবসিত হয়, তাকে অন্যায় বলে কঠোরভাবে নিন্দা করা হয়েছিল।
কমিটির সামনে বিভিন্ন প্রমাণ তুলে ধরে এবং বিশ্লেষণ করে এই রিপোর্টে দেখানো হয় সভা-সমাবেশ, জমায়েত নিষিদ্ধ হওয়ার বার্তাটি জনসাধারণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া, ডায়ার কোনও হুঁশিয়ারি না দিয়েই সমবেত জনতার ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ জারি করেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত গুলি চালিয়ে যেতে বলেন যতক্ষণ অবধি গুলি না ফুরিয়ে যায়।
ডায়ারের অভিসন্ধি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁরা রিপোর্টে উল্লেখ করেন —
"এমন নয় যে আচমকা তৈরি হওয়া কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। জমায়েত হতে চলেছে খবর পাওয়ার পর জালিয়ানওয়ালার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে তিনি পুরো চার ঘন্টা সময় পেয়েছিলেন। তাঁর ঘটনাস্থলে পৌঁছতে ঠিক আধ ঘন্টা সময় লেগেছিল এবং তার আগেই তিনি দৃঢভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন যে তিনি কী করতে চলেছেন! একটি পূর্বগৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি তা কার্যকর করতে নিশ্চিতভাবে অগ্রসর হন।"
রিপোর্টের উপসংহারে লেখা হয় ডায়ারের ক্রিয়াকলাপকে কোনও মতেই ন্যায়সঙ্গত ভাবা যায় না এবং আদালতের সাক্ষ্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, সমবেত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য তত নয়, যতটা 'বিদ্রোহীদের নৈতিকতা ও মনের জোর ধ্বংস করে দিতেই' ডায়ার এভাবে গুলি চালাতে নির্দেশ দেন।
"জমায়েতের ওপর তিনি গুলি চালিয়ে ৪০০ জনকে নিহত করেন, আহত করেন ১২০০ এর বেশি মানুষকে, কেননা তাঁর মতে এই জনতা সকলেই বিদ্রোহী এবং তিনি তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে চান, চান শাস্তি দিতেও, চান বেশ একটা প্রভাব সৃষ্টি করতে, সমগ্র পাঞ্জাব জুড়ে একটা ত্রাসের আবহ সৃষ্টি করতে, বিদ্রোহীদের মনের জোর ভেঙে দিতে। এই কারণেই তিনি সরে যাওয়ার জন্য কোনও হুঁশিয়ারি না দিয়েই গুলি চালানোর হুকুম দেন, লোকেরা দৌড়ে পালাচ্ছে, গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে যাচ্ছে দেখেও নিরস্ত না হয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত গুলি চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন যতক্ষণ অবধি গুলি না ফুরোয়।"
তাঁদের অনুমোদিত এবং স্বাক্ষরিত এই রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট হয় চিমনলাল শেতলবাদ ও তাঁর সহযোগী দুই আইনজীবী আদৌ জালিয়ানওয়ালা বাগের গণহত্যার জন্য ডায়ারকে কোনও 'ক্লিন চিট' দেননি, উল্টে ডায়ারের সেই অপকর্মের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনাই তাঁদের পেশ করা রিপোর্টে নথিভুক্ত করেন।
আদালতের শুনানিতে শেতলবাদের ভূমিকা
হান্টার কমিশনের তদন্তভিত্তিক শুনানিতে শেতলবাদের ভূমিকা সম্পর্কে অনিতা তাঁর বইয়ে ডায়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রসঙ্গ সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন হান্টার কমিশনের সাক্ষ্যপ্রমাণের শুনানির তৃতীয় খণ্ডে। সেখান থেকে একটা অংশ তুলে ধরা হল:
"শেতলবাদ যখন ডায়ারকে জানান ওই বাগে নিরীহ পুরুষ, নারী ও শিশুরা জমায়েত হয়েছিল, তখন ডায়ার তা মানতে চাননি। কারণ তাঁর মতে — ওরা সবাই বিদ্রোহী। তাই আমি তাদের ওপর গুলি চালানোর হুকুম দিই এবং বেশ ভালো করে গুলি চালাতে বলি।
শেতলবাদ যখন ডায়ারকে তাঁর মন্তব্য ব্যাখ্যা করতে বলেন, তখন ডায়ার বলেন: ওরা লড়াই করার জন্য বেরিয়ে এসেছিল। ওরা যদি আমাকে অগ্রাহ্য করে, আমি ওদের শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব!
শেতলবাদ: আমার মনে হয় আপনি ওদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন!
ডায়ার: সে তুমি যা খুশি ভাবতে পারো। আমি ওদের শাস্তি দিয়েই ছাড়তাম। সামরিক দিক থেকে আমার লক্ষ্য ছিল, বেশ বড় একটা প্রভাব ফেলা!
শেতলবাদ: শুধু অমৃতসর শহরেই নয়, গোটা পাঞ্জাব জুড়েই একটা ত্রাস সৃষ্টি করা?
ডায়ার: ঠিক তাই! গোটা পাঞ্জাব জুড়েই! আমার উদ্দেশ্যই ছিল ওদের মনের জোর ভেঙে দেওয়া।
"এই ভাবে ঠান্ডা মাথায় একের পর এক তীক্ষ্ণ প্রশ্ন করে-করে শেতলবাদ ডায়ারের কাছ থেকে একের-পর-এক বিস্ফোরক মন্তব্য বের করে আনতে থাকেন। অতক্ষণ ধরে গুলি চালিয়েছিলেন কেন, এই প্রশ্নের জবাবে ডায়ারকে বলতে শোনা যায়: আমার ধারণা আমি একটা দারুণ ভালো কাজ করছি এবং ওদের মনে রাখতে হবে যে দুষ্টুমি করে ওরা পার পাবে না।"
অনিতা আনন্দ তাঁর বইয়ে জানিয়েছেন, শেতলবাদের নিপুণ ও দক্ষ জিজ্ঞাসাবাদ ব্রিটিশ অফিসারদের তাঁর প্রতি ভয়ানক বিদ্বিষ্ট করে তোলে এবং জেরা করার জন্য যাদের তাঁর সামনে হাজির করা হয়, সকলেই তাঁকে ঘৃণা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরা তাঁর প্রতি এতটাই রুষ্ট হয়ে ওঠে যে, তাঁকে গোটা পাঞ্জাবেই ঢুকতে নিষেধ করে দেওয়া হয়।
আদালতের শুনানির এই বিবরণ এবং হান্টার কমিশনে তাঁর জমা দেওয়া রিপোর্ট থেকে এটা প্রমাণিত যে, জালিয়ানওয়ালা বাগ গণহত্যার দায় থেকে ডায়ারকে মুক্তি দেওয়ার দলে অন্ততঃ শেতলবাদ ছিলেন না। উল্টে তিনি ও তাঁর সহযোগী অন্য দুই ভারতীয় আইনজীবী ডায়ারকে তাঁর অপকর্মের জন্য দোষী ঠাহর করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
আরও পড়ুন: ১৭ বছরের অ্যালিজা কার্সনকে নাসা মঙ্গলে পাঠাচ্ছে? ফের ছড়াল ভুয়ো খবর