বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এবং সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ইট-পাথর ছোঁড়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেন ও তার যাত্রীদের আহত হওয়ার বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করে সেগুলিকে হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি 'বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে'র (Vande Bharat Express) উপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা বলে প্রচার করেছে।
বুম দেখে এই পোস্টগুলি ভুয়ো এবং 'বন্দে ভারত এক্সপ্রেস' নয়, এগুলি ১ জানুয়ারি ২০২৩ পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের উপর পাথর ছোঁড়ার ঘটনার ছবি।
গত ২ জানুয়ারি, ২০২৩ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাত থেকে দূর-সংযোগে হাওড়া-নিউজলপাইগুড়ি 'বন্দে ভারত এক্সপ্রেস'-এর উদ্বোধন করার দু-দিন পরে মালদহ স্টেশনের কাছে সেটির সি-১৩ নম্বর কামরায় পাথর ছুঁড়ে হামলা চালানো হয়। পরের দিনই ট্রেনটি যখন জনপাইগুড়ি পৌঁছতে চলেছে, তখন তার সি-৩ এবং সি-৬ নম্বর কামরা একই ভাবে পাথরে আক্রান্ত হয়। পর-পর দু-দিন এমন ঘটনা রাজ্যে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করে, বিজেপি ঘটনাটির এনআইএ তদন্তও দাবি করে।
তারপর থেকেই ৪টি ছবি অনলাইনে ঘুরছে, যাতে ট্রেনের সিটের উপর ভাঙা কাচের টুকরো ছড়িয়ে থাকা এবং আহত ট্রেনযাত্রীর ছবি রয়েছে। টুইটারে এই ছবিগুলি শেয়ার করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে—"মালদা থেকে ২৫ কিলোমিটার আগে কিছু পাথর ছুঁড়িয়ের কাণ্ড দেখুন! এই লোকগুলি শ্রেষ্ঠ রেলওয়ে পরিষেবা পাওয়ার যোগ্যই নয়। তদন্ত হওয়া উচিত।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
সংবাদ-মাধ্যম নিউজ-১৮-ও তার বুলেটিনে এই ছবিগুলি ব্যবহার করেছে।
পুরো ভিডিওটি দেখুন এখানে।
পোস্টটির আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বিজেপির সাংসদ সুকান্ত মজুমদারও এই একই সংবাদ-বুলেটিন উদ্ধৃত করেছেন।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
টাইমস নাউও তার প্রতিবেদনে এই ছবিগুলিই ব্যবহার করেছে।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, ছবিগুলি অন্য একটি সুপার-ফাস্ট ট্রেন 'হাওড়া-পুরুলিয়া এক্সপ্রেসে'র উপর পাথর ছোঁড়ার ঘটনার, 'বন্দে ভারত এক্সপ্রেস' ট্রেনের উপর নয়।
পাথরের ঘায়ে আহত যাত্রীর ছবিটি নিয়ে গুগল-এ খোঁজ করে আমরা দেখেছি, ফেসবুকে 'জঙ্গলমহল' নামের একটি পেজ-এ এই ছবিটি প্রকাশ করে এটিকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের উপর হামলার ছবি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর পোস্টটি প্রণবেশ সেন নামে এক ব্যক্তির করা।
আমরা এরপর প্রণবেশ সেনের প্রোফাইলও খতিয়ে দেখি, এবং সেখানেও এই পোস্টটি রয়েছে দেখতে পাই।
'বন্দে ভারত'-এ হামলার আগেই প্রণবেশবাবু পুরুলিয়া এক্সপ্রেসে হামলার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ১ জানুয়ারি, ২০২৩-এ তাঁর এই পোস্ট আপলোড করেন। তাতে তিনি লেখেন, কী ভাবে ৩০ বছর বয়স্ক এক যাত্রী ওই ঘটনায় আহত হন। সেই সঙ্গে রেলওয়ে পরিষেবা সম্পর্কে কিছু ক্ষোভের কথাও তাঁর পোস্টে ছিল, যার নিশানা ছিলেন আরপিএফ এবং রেল কর্মচারীরা।
নীচে প্রণবেশ সেনের পোস্ট এবং ভাইরাল হওয়া পোস্টের ফারাক দেখে নিন।
'পুরুলিয়া এক্সপ্রেস' এবং 'বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে'র ছবির তুলনাও দেখে নিতে পারেন।
তাছাড়া, আমরা 'বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে'র কিছু যাতায়াতকারীর ভ্লগ যাচাই করে দেখেছি, সেখানে এক্সিকিউটিভ কোচ ও চেয়ার কার কোচের সিটের রঙ লাল এবং নীল, যা ভাইরাল হওয়া পোস্টের সিটের রঙের থেকে আলাদা।