হরিয়ানার ফরিদাবাদের (Faridabad) এক ব্যস্ত রাস্তায় একটি বড় হাতুড়ি (sledgehammer) নিয়ে দুই ব্যক্তির একজনকে আঘাত করার অস্বস্তিকর ভিডিও ভুয়ো দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে এটি একটি সাম্প্রদায়িক হামলার (communal attack) ঘটনা।
অথচ বুম দেখে যে, আক্রমণকারী এবং আক্রান্ত উভয়েই একই সম্প্রদায়ের লোক। হরিয়ানা পুলিশের ডিএসপি নীতীশ আগরওয়াল বুম-কে নিশ্চিত করেছেন যে, আক্রান্ত মনীশ গুর্জরকে যে তিন জন আক্রমণ করেছিল, তারাও একই ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতের লোক এবং ব্যক্তিগত শত্রুতাই এর কারণ।
ভিডিওটিতে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে লোহার রড ও হাতুড়ি নিয়ে দুটি লোকের একজনকে নির্মমভাবে পেটানোর দৃশ্য।
ভিডিওটি শেয়ার করে জনৈক টুইটার ব্যবহারকারী ক্যাপশন লিখেছেন, "এটাই হল সংখ্যালঘুদের প্রতি ভারতবর্ষের নিত্যদিনের বাস্তবতা। এটা খুবই লজ্জাকর যে মার্কিন মানবাধিকার সংগঠনগুলি এবং পাশ্চাত্য গণমাধ্যম নিজেদের সংকীর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থে এই ধরনের ঘটনার দিকে চোখ বুজে রয়েছে।"
(সতর্কতা: ভিডিওটি অস্বস্তিকর)
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকেও ভিডিওটি একই ভুয়ো দাবি সহ শেয়ার হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম হাতুড়ি নিয়ে হামলা, এই মূল শব্দ বসিয়ে গুগল-এ খোঁজ করে ঘটনাটির বেশ কয়েকটি সংবাদ-প্রতিবেদনের সন্ধান পেয়েছে। ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে দুই আক্রমণকারী হল প্রদীপ সিংহ এবং ললিত কুমার, এবং আক্রান্ত ব্যক্তিটি হলেন মনীশ গুর্জর। স্রেফ ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে এই আক্রমণ এবং উভয় পক্ষই ফতেপুর চান্ডিলা গ্রামের বাসিন্দা।
ইন্ডিয়া টুডে ৬ ডিসেম্বর ২০২১ প্রতিবেদন প্রকাশ করে , হামলাকারীরা হরিয়ানার ফরিদাবাদের বদখল লেক চকে হাতুড়ি ও রড দিয়ে আক্রমণ চালায়। এই রিপোর্টটির সঙ্গেও ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি জুড়ে দেওয়া হয়, যেটি ঘটনাস্থলেই প্রত্যক্ষদর্শীদের কারও তোলা।
হামলায় শরীরের নানা স্থানে আঘাত পাওয়া মনীশ গুর্জর নাকি এক বছর আগে ২০২০ সালে প্রদীপ সিংহর ভাই যোগেশের ওপর হামলা করেছিল।
হরিয়ানা পুলিশের ডিএসপি নীতীশ আগরওয়ালের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করিl তিনি জানান—ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে মনীশ গুর্জরকে ৩ জন আক্রমণ করেছিল, যারা সকলেই একই ধর্মের ও জাতের লোক। তিনি আরও জানান, হামলাকারী ললিত ও প্রদীপ শূন্যে গুলি ছুঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সাব-ইনস্পেক্টর বিজেন্দ্র ও তাঁর দল ওদের ধরে ফেলে। তৃতীয় অভিযুক্ত শচিনকেও পরে গ্রেফতার করা হয়। তিন জনের বিরুদ্ধেই গুরুতর ধারায় মামলা করা হয়েছে।
ডিএসপি আগরওয়াল আরও জানান যে, মনীশ গুর্জর সারা দেহে অনেক জায়গায় আঘাত পান এবং তাঁর পায়ের হাড়গোড়ও ভেঙে যায়। তাঁকে ফর্টিস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে বর্তমানে তাঁর চিকিত্সা চলছে।
দৈনিক ভাস্করও একই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: ভাইরাল ছবিটি উত্তরপ্রদেশে মুসলিমদের ধর্ম পরিবর্তনের ঘটনা নয়