গাড়ি দুর্ঘটনার দুটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, এই ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে সুইডেনের শিল্পী লার্স ভিক্সের (Lars Vilks) কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে। লার্স ভিক্স ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর একটি গাড়ি (Car Crash) দুর্ঘটনায় মারা যান।
বুম দেখেছে যে, ভিক্সের মৃত্যুর সঙ্গে ছবিগুলির কোনও সম্পর্ক নেই। এগুলি আসলে আলাদা আলাদা সময়ে ঘটা ভিন্ন দুর্ঘটনার ছবি।
২০০৭ সালে ব্যঙ্গচিত্রী ভিক্স আঁকা কুকুরের শরীরে নবী মহম্মদের ছবি সারা বিশ্বে বিতর্ক তৈরি করে। তিনি দক্ষিণ সুইডেনের মার্কিয়ার্ড শহরের কাছে গাড়ি দূর্ঘটনায় মারা যান। নবীর ওই ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ৭৫ বছর বয়স্ক এই শিল্পী পুলিশি নিরাপত্তায় থাকছিলেন। রয়টর্সের প্রতিবেদন অনুসারে, ভিক্স পুলিশের গাড়ি করে যাওয়ার সময়ই একটি ট্রাকের সঙ্গে সেই গাড়ির সংঘর্ষ ঘটে। এই দুর্ঘটনায় দু'জন পুলিশকর্মীও প্রাণ হারান।
এই পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ঘটনায় গুঁড়িয়ে যাওয়া একটি গাড়ি এবং সঙ্গে রাস্তার উপর একটি জ্বলন্ত গাড়ির ছবি ফেসবুকে শেয়ার করা হয়ছে। ছবিগুলির একটিতে ক্যপশন লেখা হয়েছে, "সুইডিশ শিল্পী লার্স ভিক্সের একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। বহু ক্ষণ পর্যন্ত তাঁর গাড়ির ভিতরে আগুন জ্বলছিল। তাঁর দুই দেহরক্ষীও এই দুর্ঘটনায় প্রান হারিয়েছেন।"
এই একই ছবি একই ক্যাপশনের সঙ্গে টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে।
লার্স ভিক্সের ছবি সমেত দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি গাড়ি এবং একটি লগিং ট্রাকের একটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। ছবিটিতে বাংলায় ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "ফেরাউন-নমরুদরাই বেচে থাকার জন্য শতশত সিকিউরিটি রাখে। কিন্তু আল্লাহর সিকিউরিটি না থাকলে এভাবেই নৃশংসভাবে মরতে হয়। ফ্রান্সে মহানবী সা. এর ব্যঙ্গচিত্র আকা ভ্রস্ট শিল্পীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরো মুসলিম মিল্লাতের মনে ইদের খুশি বইছে। এ যেনো এক বিজয় হৃদয়ে মুহাম্মাদ সা)"
পোস্টটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন: পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নির খ্রিস্টধর্ম দীক্ষার দৃশ্য নয়
তথ্য যাচাই
প্রথম ছবি
যে ছবিটিতে একটি হলুদ লাক্সি গাড়ি পুড়তে দেখা যাচ্ছে, বুম সেটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, এবং মোটরওয়ান-এ ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ওই ছবিটি দেখতে পায়। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, হায়দরাবাদে ওই সময় একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। এই সূত্র ধরে আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করি, এবং হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা করা হয়, "হিমায়তসাগরের আউটার রিং রোডে একটি পোর্শে গাড়ি ডিভাইডারে ধাক্কা মারে এবং গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। গাড়িটি চালক রবি কুমার নামে সাইকপেটের এক ব্যবসায়ী। তিনি তাঁর স্পোর্টসকারটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে (ঘণ্টায় ১৫০-২০০ কিলোমিটার বেগে) চালাচ্ছিলেন। তিনি কোনও ক্রমে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান"।
ওই একই তারিখে রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা রাপ্টলি'র ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও দেখতে পাই। ভিডিওটি ওই দুর্ঘটনা সংক্রান্ত।
দ্বিতীয় ছবি
ভাইরাল হওয়া ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দ্য সান ডিয়েগো ইউনিয়ন-ট্রিবিউনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই।
ছবিটির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "এই মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, নিউজিল্যান্ডের টকোরোয়ার কাছে একটি গাড়ি এবং একটি লগিং ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। নিউজিল্যান্ডের আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, ১৯ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার নাগরিক ওয়ারেন লি এবং তাঁর স্ত্রী আসুন লি এবং তাঁদের মেয়ে জুলিয়া লি এই দুর্ঘটনায় মারা যান ও তাঁদের ছেলে গুরুতর আহত হন। তাঁদের গাড়ির সঙ্গে একটি লগিং ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়াতে এই দু্র্ঘটনা ঘটে। (এপি ফটো/এনজেড হেরাল্ড, জন ভ্যান ডে ভেন) অস্ট্রেলিয়া আউট, নিউজিল্যান্ড আউট (দি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস)।"
ছবিটি একই বিবরণ সহ দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ওয়েবসাইটেও রয়েছে।