২০১৬ তে 'দ্য ওয়্যার' ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি লেখার অংশের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে। সেটি মূল লেখা থেকে এমন উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে কাটা হয়েছে যে, মনে হচ্ছে ওই খবরের ওয়েবসাইটটি দুর্গাপুজোকে 'বর্ণবিদ্বেষী' ও দুর্গাকে 'যৌনকর্মী' বলে বর্ণনা করেছে।
স্ক্রিনশটটি ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তে প্রকাশিত একটি বড় লেখার ছোট অংশ। সেটিতে যা লেখা আছে, তা হল স্মৃতি ইরানি সংসদে যা পড়ে শুনিয়েছিলেন তাইই। ইরানির দাবি, জওহরলাল নেহরু ইউনিভারসিটির ছাত্রছাত্রীরা 'মহিষাসুর শহিদ দিবস' পালন করার সময় যে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছিল, তাতে দুর্গাপুজো সম্পর্কে ওই রকম কথায় লেখা হয়।
মূল লেখাটির শিরোনামটি ছিল, 'মহিষাসুর অ্যান্ড দ্য মিনিস্টার।' আর সেটির সঙ্গে দেওয়া স্ট্র্যাপলাইনে বলা হয়, 'জেএনইউ-তে মহিষাসুর শহিদ দিবস উদযাপন সম্পর্কে জনসম্পদ বিকাশ মন্ত্রীর উষ্মার জন্য তিনি এতই প্রশ্নের মুখে পড়বেন যে তা তাঁর ভাল নাও লাগতে পারে।'
স্ক্রিনশটটি এমন এক সময় শেয়ার করা হয় যখন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্গাপুজো ও নবরাত্রি পালন করা হচ্ছে। ওই দুই উৎসবেই দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়।
ওই একই স্ক্রিনশটটি ক্যাপশন সহ টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে।
স্ক্রিনশটটিতে যা লেখা আছে, তা এই রকম: "দুর্গাপুজো হল একটি অত্যন্ত বিতর্কিত বর্ণবৈষম্যমূলক উৎসব। সেখানে দেখানো হয়, ফর্সা ত্বকের সুন্দরী দেবী দুর্গা মহিষাসুর নামের এক কৃষ্ণবর্ণ আদিবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করছেন। মহিষাসুর ছিলেন খুবই আত্মসম্মানসম্পন্ন এক নেতা। আর্যরা ছলনা করে তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন। তাঁরা দুর্গা নামের এক যৌনকর্মীকে নিয়োগ করেন। সে মহিষাসুরকে বিয়েতে প্রলুব্ধ করে। এবং ন' দিনের মধুচন্দ্রিমা যাপন করার সময় মহিষাসুরকে ঘুমের মধ্যে হত্যা করে।"
আরও পড়ুন: না, এটি প্যারিসে শিরচ্ছেদ হওয়া শিক্ষকের ছবি নয়
তথ্য যাচাই
স্ক্রিনশটের কিছু লাইন ব্যবহার করে আমরা সার্চ করি। দেখা যায়, লেখাটি ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬-য় প্রকাশিত হয়। সেদিন জেএনইউ-র দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে বড় রকমের সংঘর্ষ বাঁধে। তার ফলে, অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। এবং কানাহাইয়া কুমার সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগও আনা হয়। জেএনইউ ছাত্রদের প্রতি যে ধরনের আচরণ করা হয়, তার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টি পরিচালিত সরকার সমালোচনার মুখে পড়ে। অন্য দিকে, সরকার দাবি করে যে, গ্রেফতার-হওয়া ছাত্ররা রাষ্ট্র বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন ও ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন।
জেএনইউ ছাত্রদের প্রতি সরকারের আচরণের সমালোচনার কথা ইরানি উল্লেখ করেন তাঁর ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬-র সংসদে দেওয়া ভাষণে। ওই ইউনিভারসিটিতে রাষ্ট্র বিরোধী অনুষ্ঠান হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে ইরানি বলেন, ইউনিভারসিটির ছাত্ররা মহিষাসুর শহিদ দিবস পালন করছিলেন এবং একটি প্যামফ্লেট পড়ে শোনান। তিনি বলেন সেটি আয়োজকরা বিলি করছিলেন।
দ্য ওয়্যার-এর প্রতিবেদনে লেখা হয়: "বুধবার তাঁর লোকসভা ভাষণে মানব সম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি জেএনইউ-র ঘটনায় সরকারের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ক্যাম্পাসে বেশ কিছু 'রাষ্ট্র বিরোধী' ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ছিল 'মহিষাসুর শহিদ দিবস' পালন। 'তাঁর ভগবানের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে', তিনি একটি প্যামফ্লেট থেকে পড়েন, যেটি, তাঁর কথা অনুযায়ী, ওই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তরা বার করে ছিলেন।" তারপর, ভাইরাল স্ক্রিনশটে যা আছে, ইরানি তা পাঠ করেন বলে জানায় প্রতিবেদনটি।
দ্য ওয়্যার-এ বলা হয় ইরানি যে লাইনগুলি বলেন, সেগুলি, ইরানির কথা অনুযায়ী, মহিষাসুর শহিদ দিবস উদযাপনের উদ্যোক্তাদের বিলি-করা প্যামফ্লেট থেকে নেওয়া।
আমরা ওই ভাষণটির জন্য সার্চ করি। দেখা যায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তে সেটি ভারতীয় জনতা পার্টির নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়। ওই ভাষণে, ইরানি রাষ্ট্র বিরোধী ঘটনার একটি তালিকা পেশ করেন, যেগুলি, তাঁর অভিযোগ, জেএনইউ-র ছাত্র সংগঠন আয়োজন করে। তারপর উনি একটি নোটিসের প্রতিলিপি তুলে ধরেন। সেটি ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬-র রাতে ক্যাম্পাসে লাগানো হয়। তাতে বলা হয়, "মহিষাসুর শহিদ দিবস-এর কারণে জনসভাটি বানচাল হয়ে যায়"। এর পর তিনি বলেন যে, 'মহিষাসুর শহিদ দিবস' কী, তা উনি জানার চেষ্টা করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে, তাঁকে বলতে শোনা যায়, "এটি পাঠ করার জন্য আমার ভগবান আমায় ক্ষমা করুন।"
তারপর ওই লাইনগুলি উনি একটি প্যামফ্লেট থেকে পড়ে শোনান। তাঁর দাবি, জেএনইউ-র তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, ওবিসি ও সংখ্যালঘু ছাত্ররা সেটি বিলি করে। "কী নীচ মানসিকতা। আমার কিছু বলার নেই," এই বলে ইরানি তাঁর ভাষণ শেষ করেন।
দ্য ওয়্যার-এ প্রকাশিত পুরো লেখাটি দেখা যাবে এখানে।
দ্য ওয়্যার-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভরদারাজন-এর সঙ্গে বুম যোগাযোগ করলে, উনি তাঁর একটি টুইটের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই টুইটে ভরদারাজন লেখেন স্ক্রিনশটটি হল "এইচআরডি মিনিস্টার হিসেবে ইরানির ২০১৬ তে সংসদে একটি প্যামফ্লেট থেকে পাঠ করা অংশ, যেটি তিনি জেএনইউ-র বলে দাবি করেন।"