নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে কিছু বিক্ষোভকারীর ব্যান্ডেজ-বাঁধা ছবিগুলিকে নসাৎ করেছেন সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের একাংশ। তারা বলছেন, ওই ব্যান্ডেজ-বাঁধা ব্যক্তিদের কোনও আঘাতই লাগেনি এবং ব্যাপারটি সাজানো। তাদের মতে, ব্যান্ডেজগুলি হিজাব বা জ্যাকেটের মত জামাকাপড়ের ওপর দিয়ে বাঁধা বলে মিথ্যেটা ধরা পড়ে যায়। কিন্তু আলোকচিত্রী জাফার আব্বাস, যিনি, ছবিগুলি তুলেছিলেন, তিনি অন্য কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৫ ডিসেম্বরে বিক্ষোভ চলাকালে, পুলিশি আক্রমণের ফলে মহম্মদ মিনহাজুদ্দিন নামের এক ছাত্রের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তাঁর প্রতি সমর্থন জানাতে ২৯ ডিসেম্বর সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীরা নিজেদের শরীরে ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রতিবাদ করেন।
খবরে প্রকাশ, ১৫ ডিসেম্বর, সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলাকালে, পুলিশের লাঠির আঘাতে জামিয়া মিলিয়ার ছাত্র মিনাহজুদ্দিনের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
আব্বাস ওই ধরনের অনেক ছবি তুলেছিলেন দিল্লিতে। তার মধ্যে থেকে দু'টির কোলাজ নীচে দেওয়া হল।
বুমের হেল্পলাইনে (৭৭০০৯০৬১১১) ছবিগুলি একাধিকবার আসে। ক্যাপশনে বলা হয়, "হিজাব আর জ্যাকেটের ওপর দিয়ে ওরা ব্যান্ডেজ বেঁধেছে...এই প্রতিবাদগুলি যে ভুয়ো, তা বুঝতে কি আরও প্রমাণ চাই।
অন্যান্য টুইটার ব্যবহারকারীদের পাশা-পাশি পরেশ রাওয়ালও ওই ব্যান্ডেজ-বাঁধা প্রতিবাদীদের সমালোচনা করেন। তাঁর টুইট ২,৭০০ বারেরও বেশি রি-টুইট করা হয় এবং ১৩.৬ হাজার লাইক পায়।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
পরে আরও ওই ব্যান্ডেজ-বাঁধা প্রতিবাদীদের অন্যান্য ছবি সম্পর্কেও সমালোচনামূলক টুইট নজরে আসে।
हिजाब के ऊपर पट्टी की जबरदस्त बड़ी सफलता के बाद कोट के ऊपर पट्टी पेश है आप सबके लिए...#IndiaSupportsCAA pic.twitter.com/6SXrb3IO1n
— Meera Singh (@meeraremi11) January 1, 2020
ওই একই ছবি অন্য দাবি সমেতও ভিন্ন বয়ানে অনলাইন-এ এসেছে।
Ok let me now teach you all guys running fake propaganda, some basics of #wound #dressing.
— TheSpeakingScalpel (@DrSaurav5) January 1, 2020
First you remove the soiled clothes
Then you clean the wound
And then you apply bandages after debriding the dirty tissue.
PS: it is never applied over jacket and hijab. #CAA_NRC pic.twitter.com/66ZpqDwfaW
তথ্য যাচাই
দেখা যায়, টুইটারে শেয়ার করা ওই ছবিগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটির গায়ে, 'জাফার আব্বাস' জলছাপ (ওয়াটারমার্ক) লাগানো আছে। আব্বাস একজন সাংবাদিক ও 'মিলেনিয়াম পোস্ট'-এ কর্মসূত্রে যুক্ত।
বুম আব্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তার কাছে ছবিগুলির তারিখ এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। উনি বলেন:
"আমি ছবিগুলি তুলি ২৯ ডিসেম্বর (রবিবার)। সেদিন জামিয়া মিলিয়ার ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের এক চোখে ব্যান্ডেজ বেঁধে বেশ অভিনব পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করছিলেন। দিল্লি পুলিশের প্রতিঘাতে জামিয়া মিলিয়ার ছাত্র মিনহাজুদ্দিনের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।''
তাঁর ছবিকে ঘিরে যে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে তাঁর মতামত জানতে চাইলে, আব্বাস বলেন:
"প্রতীকী প্রতিবাদের ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা না করে কিছু ট্রোল এবং প্রকৃত টুইটার ব্যবহারকারীরা যে ভাবে আমার ছবি ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন, তাই দেখে আমি আশ্চর্য হয়েছি।"
সোশাল মিডিয়ায় আসল সহ প্রতিবাদের অন্যান্য যে সব ছবি ছড়ানো করা হচ্ছে, সেগুলি আব্বাস তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করেছিলেন। সেগুলি নীচে দেখা যাবে।
Jamia today ! pic.twitter.com/qQp1IXLkCA
— Zafar Abbas (@zafarabbaszaidi) December 29, 2019
Eye bandaged : Jamia students bandage one eye in solidarity with fellow student Minhajuddin who lost an eye in @DelhiPolice crackdown on December 15. Innovative way of protest.#CAA_NRC_NPR #CAAProtest #JamiaWalaBagh #JamiaMilliaIslamia pic.twitter.com/AzRO5roHjR
— Zafar Abbas (@zafarabbaszaidi) December 29, 2019
২৯ ডিসেম্বরের প্রতিবাদের ছবি অন্যান্য সূত্র থেকেও পাওয়া যায়। 'নিউজ ১৮'-ও সেদিনের বিক্ষোভের ছবি তোলে। তার একটি সংকলন দেখা যাচ্ছে। সেখানে বলে দেওয়া হয় যে, ব্যান্ডেজগুলি আসলে সমর্থনের প্রতীক।
রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ সই করলে, সিএএ আইন তৈরি হয়। সেই থেকে ওই আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। তার জেরে ২৫ জন মারাও গেছেন। পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে যে অমুসলমান সংখ্যালঘুরা ভারতে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য পাস হয়েছে ওই আইন। কিন্তু যারা আইনটির বিরোধিতা করছেন, তারা বলছেন ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি অফ সিটিজেনস বা এনআরসির সঙ্গে একযোগে আাইনটি প্রয়োগ করলে, ভারতে বসবাসকারী মুসলমানদের একাংশ তাদের নাগরিকত্ব খোয়াতে পারেন। সরকার অবশ্য এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন দেশব্যাপি এনআরসি তৈরি করার কথা ঘোষণা করা হয়নি এখনও। আর সিএএ হলো একটি মানবিক আইন। অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় নেই এমন সব অত্যাচারিত অমুসলমান সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেবে সেটি।