সংবাদ চ্যানেল 'ইন্ডিয়া টিভি', 'টাইমস নাও', দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইট 'অপইন্ডিয়া' ও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল, পাকিস্তানে সোমবারের সংসদের কার্যক্রমের একটি ভিডিও শেয়ার করে। এবং সেই সঙ্গে মিথ্যে দাবি করে যে, সাংসদরা 'মোদী মোদী' স্লেগান দিচ্ছিলেন।
বুম দেখে, বিরোধী সাংসদরা সরকারের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাবের ওপর ভোট চেয়ে, 'ভোটিং ভোটিং' স্লোগান তোলেন। কিন্তু ভারতের মূলস্রোতের ও সোশাল মিডিয়া সেটিকে মিথ্যে দাবি সমেত পেশ করে বলে, পাকিস্তানের সংসদে 'মোদী মোদী' ধ্বনি তোলা হচ্ছিল।
পাকিস্তানের 'ডন' কাগজের বার্তা সম্পাদক মহম্মদ ওমার হায়াতের সঙ্গে কথা বলে বুম। পাকিস্তানের সংসদে 'মোদী মোদী' স্লোগান দেওয়া হয়েছিল, এই দাবি তিনি পুরোপুরি উড়িয়ে দেন। "খোয়াজা আসিফের আনা একটি সরকার-বিরোধী প্রস্তাবের ওপর ভোট চেয়ে, 'ভোটিং ভোটিং' স্লোগান দিচ্ছিলেন। তবে মোদীর নাম উচ্চারিত হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সেটা হয়েছিল যখন সরকারের পক্ষের সদস্যরা বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলতে থাকেন, 'মোদীর বন্ধু যারা, বিশ্বাসঘাতক তারা'। আমি সংসদের ওই অধিবেশন কভার করি। তাই আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, 'মোদী মোদী' স্লোগান বা মোদীর পক্ষে কোনও রকম স্লোগান সেখানে দেওয়া হয়নি," হায়াত বুমকে বলেন।
উনি আরও বলেন, "পাকিস্তানের পার্লামেন্টে কেউ মোদীর পক্ষে স্লোগান দেবে, এটা আশা করাটাই অবাস্তব। সেটা তাদের রাজনীতি বিরোধী।"
আগেই, সপ্তাহের শুরুতে, এ বিষয়ে তাদের প্রতিবেদনে গণমাধ্যম ডন জানায় যে, বিরোধী সাংসদরা আসিফের প্রস্তাবের ওপর ভোট চেয়ে, 'ভোটিং ভোটিং' ধ্বনি দিচ্ছিলেন।
আমরাও সংসদের ওই অধিবেশনের ভিডিওটি দেখি। সেখানে সাংসদরা 'ভোটিং' বলে আওয়াজ তুলছিলেন, 'মোদী' বলে নয়। ওই স্লোগনের মধ্যেই স্পিকারকে বলতে শোনা যায়, "ভোটিং, সবই হবে, সবই হবে। একটু ধৈর্য ধরুন।"
ভিডিওটির ১.০১ মিনিটের মাথায় ভাইরাল হওয়া বর্তমান অংশটি দেখা যায়।
টুইট, ডিলিট, আবার টুইট
পাকিস্তান সংসদের সোমবারের কার্যক্রমের সেই অংশটি টাইমস নাও টুইট করে যেখানে 'ভোটিং' স্লোগানটি শোনা যায়। সেই সঙ্গে ক্যাপশনে বলা হয়, "দেখুন: 'মোদী মোদী' ধ্বনি দেওয়া হচ্ছে পাকিস্তানের সংসদে। পাকিস্তান ও ইমরান খানের জন্য বড় ধরনের অস্বস্তির কারণ। বিদেশমন্ত্রী রাগে ফেটে পড়ছেন।"
পরে, কোনও সংশোধনী ছাড়াই, টুইটটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। সেটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
টাইমস নাও ভিডিওটি আরও একবার টুইট করে, আবার ডিলিট করে দেয়। শেষ পর্যন্ত, পাকিস্তানি সংসদের ওই ভিডিওটি তৃতীয়বার টুইট করা হয়। কিন্তু এবার টাইমস নাও সেটি সম্পর্কে কোনও রিপোর্ট লেখেনি। ক্যাপশনে শুধু বলা হয়: "দেখুন, মোদী আতঙ্ক পাকিস্তানের পার্লামেন্টকে গ্রাস করেছে। পাক বিদেশমন্ত্রী রাগে ফেটে পড়েছেন। ডিসক্লেমার: ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।"
'ইন্ডিয়া টিভি'ও বিষয়টি সম্পর্কে ভুল খবর দেয়। সঞ্চালক রজত শর্মা বলেন, মোদীর নাম পাকিস্তানের সংসদে ওঠে বেশ কয়েক বার। ইন্ডিয়া টিভি-র টুইটের সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "এক্সক্লুসিভ: পাকিস্তান সংসদে এমপি-রা কেন 'মোদী মোদী' ধ্বনি তুলছেন।"
পাকিস্তান সংসদে মোদীর নাম কয়েক বার শোনা যায়, শর্মার এ কথাটা ঠিক। কিন্তু তিনি যা বলেননি তা হল, মোদীর নাম তখনই শোনা যায় যখন সরকারের পক্ষের সাংসদরা বিরোধীদের 'মোদীর বন্ধু' ও 'বিশ্বাসঘাতক' বলে কটাক্ষ করেন (তাঁরা স্লোগান দেন: 'মোদীর বন্ধু যারা, বিশ্বাসঘাতক তারা)।
'ভোটিং ভোটিং' স্লোগানের কথা উল্লেখ করে শর্মা সেটিকে মোদীর নামে স্লোগান বলে বর্ণনা করেন।
আরও পড়ুন: ফ্রান্সে শিক্ষকের শিরচ্ছেদের পর জিইয়ে উঠল ২০১৭'র প্রতিবাদের ভিডিও
'পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের ভেতর মোদী মোদী স্লোগান: ঘটনার বিবরণ' শিরোনামের একটি লেখায় দক্ষিণপন্থী 'অপইন্ডিয়া'ও মিথ্যে খবর ছাপে। প্রথমে, ওয়েবসাইটটি এই বলে বিভ্রান্তি ছড়ায় যে, পাকিস্তানের সংসদে 'মোদী মোদী' স্লোগান দেওয়া হয়। পরে কোনও সংশোধনী ছাড়াই তারা নীচের অংশটি জুড়ে দেয়:
"শুরুতে ইসলাম বিদ্বেষ ও শার্লি এব্দো-য় প্রকাশিত কার্টুনকে ঘিরে বিতর্কে 'ভোটিং ভোটিং' ধ্বনি উঠলেও, স্লোগানের মধ্যে মোদীর নামও উচ্চারিত হয়।"
বিজেপি সাংসদ শোভা করন্ধলাজে সহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দক্ষিণপন্থী টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও একই বার্তা পোস্ট করা হয়। সেগুলির মধ্যে বেশ কিছুর ক্যাপশনে লেখা হয়, "পাকিস্তান ও ইমরানের জন্য অস্বস্তিকর।"
ওপরের টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ওপরের টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ওপরের টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ওপরের টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: ওয়েব ড্রামার স্ক্রিনশট যোগী আদিত্যনাথের ছবির সাথে ভুয়ো দাবিতে ভাইরাল
ওপরের টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালে মধ্যপ্রদেশে নারী নির্যাতনের দৃশ্য উত্তরপ্রদেশের বলে ভাইরাল