একটি বিচলিত করার মতো সিসিটিভি ফুটেজে একটি রেস্তোরাঁর সামনে একটি লোককে খুব কাছ থেকে গুলি করে মারতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভিডিওটিকে এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, ২০১৮ সালে তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুনের সঙ্গে জড়িত সৌদি আরবের এক কর্নেলকে হত্যা করার দৃশ্য সেটি।
৩০ সেকেন্ডের ওই ক্লিপটিতে খোলামেলা এক রেস্তোরাঁর রাতের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। দু'টি লোক রাস্তা পার হয়ে রেস্তোরাঁয় বসে থাকা কালো শার্ট ও সাদা শর্টস পরা এক ব্যক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তারপর তাঁকে খুব কাছ থেকে বেশ কয়েকবার গুলি করছে। আর রেস্তঁরার বাকি লোকেরা আতঙ্কে পালাচ্ছেন।
ভিডিওটি একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ভাইরাল ক্লিপটিতে ভিডিও ও অডিওর মধ্যে সামঞ্জস্যের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এর থেকে বোঝা যায় যে. ভিডিওটিতে শব্দ পরে জোড়া হয়, কারণ সিসিটিভি ফুটেজে কোনও অডিও থাকে না।
২ অক্টোবর ২০২০ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী ছিল। ২০১৮ সালে, ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে সৌদি গুপ্তচরেরা তাঁকে খুন করে। (বিস্তারিত পড়ুন এখানে)
ক্লিপটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য সৌদি আরবের এক কর্নেলকে হত্যা করা হল আজ।"
ক্লিপটি সম্পর্কে জানতে চেয়ে, সেটি আমাদের হোয়টসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে (৭৭০০৯০৬১১১) পাঠানো হয়।
ফেসবুকে ভাইরাল
একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করলে দেখা যায়, ক্লিপিটি ওই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির কয়েকটি প্রধান ফ্রেম বেছে নিয়ে গুগলের সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, ভাইরাল ক্লিপটি সম্পর্কে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন নজরে আসে। তাতে বলা হয়, ক্লিপটি ২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের। সেদিন প্রাক্তন পুলিশ ও গায়ক জর্জ ফার্নান্ডো লিনো মাকাসকে ইকুয়েডরের স্যান্টিয়াগো ডি গয়াকুইল-এ হত্যা করা হয়।
সোশাল নেটওয়ার্কে ছড়াতে-থাকা একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, দু'টি লোক মাকাসের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে ১৫ বার গুলি করে। ইকুয়েডেরের সংবাদপত্র 'এল ইউনিভারসো'র ৩ জানুয়ারি ২০২০ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মাকাসের দুই বন্ধুর সামনেই তাঁকে গুলি করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, অপরাধের দীর্ঘ রেকর্ড ছিল মাকাসের। গত বছর পর্যন্ত উনি জেলেই ছিলেন। ২০১৮ সালে ৮০০ কিলোগ্রাম কোকেইন সমেত তাঁকে আটক করা হয়। কিন্তু এক লম্বা বিচারের শেষে নির্দোষ প্রমাণিত হন তিনি।
ভাইরাল ভিডিওটিতে যে জায়গার ছবি দেখা যাচ্ছে, এল ইউনিভারসোর রিপোর্টেও সেই একই জায়গার ছবি রয়েছে।
তাছাড়া, ভাইরাল ক্লিপটিতে সাউন্ড বা শব্দ পরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ, আসল ক্লিপটি হল একটি সিসিটিভি ফুটেজ, যেখানে কোনও শব্দ থাকে না। সিসিটিভি ফুটেজটিতে তারিখ (২ জানুয়ারি, ২০২০) ও সময়চিহ্ন দুইই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
এর আগে, ওই একই ক্লিপটিকে 'এএফপি ফ্যাক্টচেক' ও ব্রাজিলের তথ্য-যাচাই সংস্থা 'আওস ফাতোস' খণ্ডন করেছিল। সেই সময় সেটি অন্য মিথ্যে দাবি সহ ভাইরাল হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ভুয়ো বার্তা: ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে শিক্ষিত নেতা রাহুল গাঁধী