একটি হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি করার জন্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি ভুয়ো চিঠি ভাইরাল হয়েছে। মোদীর সই জাল করে লেখা ওই চিঠির তারিখ ৭ অগস্ট, অর্থাৎ রামমন্দিরের ভূমি-পূজনের পর।
চিঠিতে লেখা: "প্রথমেই হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণে অবদানের জন্য আপনাকে এবং আপনার দলকে ধন্যবাদ জানাই l হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণে অন্যতম মাইলফলক রামমন্দির তৈরিতে আপনাদের অবদানের জন্য দেশবাসী আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে l আমি আগামী ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের জন্য আপনাদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখছিl এই সন্ধিক্ষণে আপনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে মন্দির নির্মাণের জন্য ৫০ কোটি টাকা অগ্রিম সাহায্যও পাঠিয়ে দিচ্ছি l"
এই ভুয়ো চিঠিটা মূল চিঠির স্ক্রিনশট হিসাবে শেয়ার করা হচ্ছে। চিঠি সহ পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা, "মোদী সরকার খুবই চতুর l এই চিঠিটা কেবল সারা ভারতে নয়, সারা বিশ্বেই প্রচার করা হচ্ছে l" পোস্টটির একটি আর্কাইভ বয়ান এখানে দেখে নিতে পারেনl
সোশাল মিডিয়ায় এই স্ক্রিনশটটিই হুবহু ব্যবহৃত হচ্ছে, যার আর্কাইভ বয়ানও এখানে দেখতে পারেন।
বুম এর হেল্পলাইন নম্বরেও এই ভুয়ো চিঠিটা তথ্য যাচাইয়ের অনুরোধ সহ জমা পড়েছে:
তথ্য যাচাই
ভাইরাল হওয়া এই চিঠিটার মধ্যে বুম অনেক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে, যেমন প্রধানমন্ত্রীর নকল করা স্বাক্ষর, কিংবা যে রঙে ভারত সরকারের প্রতীকটি ছাপা হয়েছে। আমরা এর আগেও এই ধরনের একটি ভুয়ো চিঠি দেখেছি, যখন ২০১৯ সালে অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির অনুকূলে রায় দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট হিন্দু রাষ্ট্র তৈরির রাস্তা সুগম করায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নাকি প্রধানমন্ত্রী চিঠি লিখেছিলেন।
আমরা প্রথমেই ভাইরাল হওয়া এই ভুয়ো চিঠিটাকে আদিত্যনাথের সাম্প্রতিক পিতৃবিয়োগে তাঁকে সহমর্মিতা জানিয়ে লেখা প্রধানমন্ত্রীর একটি চিঠির সঙ্গে তুলনা করি। ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল মোদীর লেখা ওই চিঠিতেও দেবনাগরী লিপিতেই মোদী স্বাক্ষর করেছেন। চিঠিটিতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি দফতরের ঠিকানাও লেখা রয়েছে, যা কিন্তু ভুয়ো চিঠিটাতে নেই।
এরপর আমরা ভাইরাল চিঠিটার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নাগরিকদের নানা প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর লেখা জবাবি চিঠিগুলোর তুলনা করি। মোদী এর আগে হরিয়ানার এক ১১ বছর বয়সী এক স্কুল-ছাত্রকেও চিঠি লিখেছেন, যেমন চিঠি লিখেছেন গুজরাটের এক দম্পতিকে যারা তাদের বিয়ের কার্ডে রাফালে চুক্তিকে ব্যাখ্যা করেছিল।
যে পার্থক্যগুলো আমাদের নজরে পড়ে:
মুখ্যমন্ত্রীকে সম্বোধন করার ঘরোয়া ভঙ্গি ও ভাষা
ভুয়ো চিঠিটাতে লেখা হয়েছে—"প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ", যেখানে অধিকাংশ সরকারি চিঠিতেই প্রধানমন্ত্রী শ্রী বা জী বলে সম্বোধন করে থাকেন
প্রতীক
ভুয়ো চিঠিতে ভারত সরকারের প্রতীকচিহ্নটি কালো এবং শাদা রঙে আঁকা, অথচ আসল চিঠিতে তেমনটা থাকে না
শক পঞ্জিকা
ভাইরাল হওয়া ভুয়ো চিঠিটাতে উপরের ডান দিতে নয়া দিল্লি কথাটার পরে শালিবাহন শক পঞ্জিকা অনুযায়ী তারিখ উল্লেখ করা নেই। অথচ এই শক সম্বত্-ই হলো ভারত সরকার অনুসৃত পঞ্জিকা এবং মোদী সর্বদা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের তারিখের পাশাপাশি শক সম্বত্-এর তারিখও উল্লেখ করে থাকেন।
ভুয়ো চিঠিটাতে মোদীর স্বাক্ষরেও অসঙ্গতি রয়েছে। মোদীর লেখা আসল চিঠিতে তাঁর নামের ইংরাজি আদ্যাক্ষর N লেখার সময় কোনও মোচড় থাকে না, কিন্তু ভুয়ো চিঠিটায় তেমনটাই দেখা যাচ্ছে। অক্ষরটির চারপাশে যে বৃত্ত আঁকা, তাতেও আসলের সঙ্গে নকলের তফাত রয়েছে।
আমরা মোদী এবং আদিত্যনাথের টুইটার অ্যাকাউন্টও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছি, সেখানেও এ ধরনের চিঠি চালাচালির কোনও উল্লেখ বা প্রমাণ নেই। হিন্দু রাষ্ট্র তৈরিতে সহায়তার জন্য আদিত্যনাথকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোদীর লেখা চিঠি বিষয়ে কোনও সংবাদ-প্রতিবেদনও চোখে পড়েনি।
এর আগেও সুপ্রিম কোর্টের অযোধ্যা রায়ে মন্দির নির্মাণে সবুজ সংকেত দেবার জন্য তাদের হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর পথ প্রশস্ত করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মোদীর লেখা ভুয়ো চিঠির পর্দাফাঁস করেছিল বুম।