সোশাল মিডিয়ায় বলিউড অভিনেতা আমির খানের আটার প্যাকেট বিতরণের একটি ভুয়ো গল্প ছড়ানো হচ্ছে। ওই পোস্টে আরও দাবি করা হয়েছে ওই আটার প্যাকেট মিলেছে নগদ ১৫,০০০ টাকা। যাঁরা ওই আটার প্যাকেট নিয়েছে তাদের ভাগ্যেই মিলেছে এই অযাচিত উপহার।
ফেসবুকে পোস্টে বলিউড অভিনেতা আমির খানের ছবি সহ এই ভুয়ো মনগড়া গল্পটি ছড়িয়েছে।
ওই পোস্টগুলিতে বলা হচ্ছে, আমির খান গাড়ি ভর্তি করে সংলগ্ন বস্তিতে আটা বিলি করতে পাঠান। তাঁর সহযোগীরা মাইকে ঘোষণা করেন যাঁদের আটা প্রয়োজন তাঁরা যেন আটা নিয়ে যায়। আর প্রত্যেককে শুধু ১ কিলো করে আটা দেওয়া হবে। শুধু আটা দেওয়া হবে শুনে শুধুমাত্র প্রকৃত দুরাবস্থায় থাকা মানুষ সেই আটার প্যাকেটগুলি নিতে আসে। আর বাড়ি ফিরে দেখে সেই আটার প্যাকেটে খুলেই মিলেছে নগদ ১৫,০০০ টাকা। পরে জানা যায় ওই আটাভর্তি গাড়ি আসলে আমির খানের পাঠানো।
আরও পড়ুন: ক্যানসার নিরাময় কেন্দ্রে শিশুর ছবি, জোড়া হল করোনাভাইরাসের সঙ্গে
ফেসবুক পোস্টে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ''দান এমনি করা উচিত, কিন্তু এখনকার দিনে শুধু ফোটোই ফোটো।''
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে। পোস্টটির স্ক্রিনশট নীচে দেওয়া হল।
একই বয়ানে আরেকটি ছবি সহ ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে যেখানে মাঠের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনেক লোকজনকে ত্রাণ নিতে দেখা যাচ্ছে। পাশে কয়েকটি গড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
আবার এই বিষয়টি নিয়েই ফেসবুকে একটি ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে ভিডিওটিকে ''আমির খানের আজব দান'' বলে শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিওটিতে দুটি উইন্ডো রয়েছে। বাম দিকে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়ামের গামলায় আটা এবং ভিডিওটির শেষ প্রান্তে এক হাতে ওই আটা হাঁতড়ে দুহাজর টাকার তোড়া নিতে দেখা যায়।
ভিডিওটির ডানদিকের উইন্ডোতে এক দাড়ি মুখের সাদা টুপি ও নেভি-ব্লু টি শার্ট পরিহিত যুবককে হিন্দিতে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। তিনি টিকটক সমাজকে উদ্দেশ্য করে এই আটা দান করার গল্পটি বলেন। রাতের বেলা ওই আটা বিতরণের ঘটনাটা কোনও জনৈক ব্যক্তি ঘটায়েছেন বলে জানান তিনি। ওই অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান তিনি।
ফেসবুকে ভিডিওটি আরও একজন ইংরেজি ক্যাপশন সহ শেয়ার করেছেন, 'অজ্ঞাত ব্যক্তিকে সেলাম' (Salute to unknown person) বলে। এই ভিডিওটির ক্যাপশনে অবশ্য আমির খানের নাম নেওয়া হয়নি।
ভাইরাল ভিডিও
বুম ফেসবুকে 'আমির খান ডোনেট' বলে সার্চ করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর (আর্কাইভ লিঙ্ক) একটি ১ মিনিট ১ সেকেন্ডের ভিডিওতে 'খান সাহেব০২৮' (@khansaheb028) দেখত পায়। এই ভিডিওটি শুধু ওই ব্যক্তির বয়ানেই। ভিডিওর শেষে দেখা যায় 'ক্রেজি ট্রাভেলার' নামের এক টিক টক ব্যবহারকারীকে
মূল ভিডিওটি 'ক্রেজি ট্রাভেলার' নামের এক টিক টক ব্যাবহারকারীর। এই খান সাহেব তাঁর ভিডিওতে অবশ্য আমির খানের নাম কষ্মিনকালেও নেননি। তাঁর প্রোফাইলের ভিডিওটি দেখা যাবে এখানে। ভিডিওটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভাইরাল ছবি
বুম রিভার্স সার্চ করে জেনেছে মাঠের মধ্যে ত্রাণ নেওয়ার ছবিটি বাংলাদেশের। সে দেশের পাবনায় শিল্প প্রতিষ্ঠান 'স্কয়ার' গ্রুপ ত্রাণ বিতরনের ছবিটি প্রকাশিত হয়েছে বিডি প্রতিদিনের ২ এপ্রিল ২০২০-এর প্রতিবেদনে।
আমির খান প্রসঙ্গ
বলিউড অভিনেতা আমির খানের রুটির গল্পটি মনগড়া। গণমাধ্যমে আমির খানের আটার ভেতরে নগদ টাকা দেওয়ার ব্যাপারে কোনও খবর প্রকাশিত হয়নি। বুম ২৫ এপ্রিল ২০২০ বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছিল আমির খান এই ধরণের কোনও ত্রাণের কাজ করেননি।
আমির খান ৪ মে ২০২০ সকাল ১০ টার সময় টুইট করে জানান, তিনি আটার ব্যাগে টাকা ভরেননি। তিনি টুইটে আরও লেখেন, "হয়ত এটি ভুয়ো খবর, কিংবা কোনও রবিন হুড যিনি নিজে তাঁর পরিচয় প্রকাশ করতে চাননা। নিরাপদে থাকুন। ভালোবাসা। এ।"
Guys, I am not the person putting money in wheat bags. Its either a fake story completely, or Robin Hood doesn't want to reveal himself!
— Aamir Khan (@aamir_khan) May 4, 2020
Stay safe.
Love.
a.
৭ এপ্রিল ২০২০'তে হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বলিউড অভিনেতা আমির খান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত ত্রাণ তহবিল 'পিএম কেয়ার্স ফান্ড' ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান ও তাঁর আসন্ন চলচ্চিত্রের দৈনিক মজুরির কুশীলবদের তিনি আর্থিক সহায়তা করেছেন।
২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অনুযায়ী পাকিস্তানে সমনামী আমির খান নামে এক কুস্তিবিদ ৪০ মিলিয়ন দান করেছেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর করোনা ত্রাণ তহবিলে। পাকিস্তান বাংশদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আমির খানও এই ধরণের কোনও আটার মধ্যে নগদ টাকা রেখে ত্রাণ দেননি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হিন্দুদের ত্রাণ না দেওয়ার ভিডিওকে ভারতের ঘটনা বলা হল
নোট: ২৫ এপিল ২০২০ বুম বাংলা প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। ৪ এপিল ২০২০ আমির খানের টুইটটি প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করে শিরোনাম সংস্করণ করা হয়েছে।