একটি ছবিতে মুসলমান ছাত্রদের পড়াশোনা করতে দেখা যাচ্ছে আর সামনে রাখা আছে একটি বই—অথর্ববেদ। সেটি চারটি বেদের একটি। ছবিটি সোশাল মিডিয়ায় এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, মুসলমানরা হিন্দু ধর্মন্থগুলিকে নতুন করে লিখছে।
বুম দেখে ছবিটি তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদে আল-মহাদুল আলি আল ইসলামি বিদ্যালয়ে তোলা। ওই বিদ্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, উনি ভাইরাল দাবিটি উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ওই ধর্মগ্রন্থ পড়া তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় শিক্ষার পাঠক্রমের অঙ্গ।
ভাইরাল পোস্টটিতে যে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে, দেখে মনে হয় সেটি একটি লাইব্রেরির ভেতরের দৃশ্য। সেখানে মাথায় ফেজ টুপি-পরা কয়েকজন লোককে পড়তে বা লেখালেখি করতে দেখা যাচ্ছে।
পোস্টটির সঙ্গে দেওয়া হয়েছে একটি হিন্দি ক্যাপশন। তাতে বলা হয়েছে, "আমাদের দেশে কী হচ্ছে সে দিকে নজর দিন। আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলিতে ভেজাল মেশানর কাজ চলছে পুরো দমে। ২০ বছর পর, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভেজাল বেদ, পুরাণ, উপনিষদ পড়বে। তাতে লেখা থাকবে, চরিত্র গঠন বাজে কাজ, ব্রহ্মচর্য একটি বাজে বিষয়। ধর্ম বলে কিছু নেই। অধর্ম বলেও কিছু নেই। চার্বাকের চিন্তা খুব ভাল। সংস্কার বলে কিছু নেই। ভ্রান্ত সব ধারণা আপনি নির্ভেজাল সংস্কৃততে পাবেন। ঠিক যেমন ভাবে মেকলে আর ম্যাক্স ম্যুলার আমাদের মনুস্মৃতিকে দূষিত করেছে।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: देखो और ध्यान दो और क्या हो रहा है हमारे देश में हमारे धर्म ग्रंथों में मिलावट करने का कार्य जोरों से चल रहा है,,,,आने वाली 20 साल बाद हमारी अगली पीढ़ियां ये #मिलावटी वेद ,पुराण , उपनिषद पढ़ेंगे। ,,,जिसमें लिखा होगा चरित्र निर्माण बेकार की बात है | ब्रह्मचर्य एकदम फालतू जैसा टॉपिक है । धर्म और अधर्म जैसी कोई चीज नहीं । चार्वाक जैसी नीतियां अत्यंत लाभकारी है ,,,संस्कार जैसी कोई चीज नहीं होती । आदि आदि फालतू बातें मिलेंगी ,,,,यह सब बाकायदा अच्छी और सुद्रढ संस्कृत में मिलेंगी | बिल्कुल उसी प्रकार जिस प्रकार मैकाले और मैक्स मूलर ने हमारी मनुस्मृति आदि को मिलावट करके दूषित किय)
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, ২০১৪ সালে দ্য হিন্দু-তে 'বেস্ট অফ টু ওয়ার্লডস' শিরোনামে প্রকাশিত একটি পুরনো প্রতিবেদন সামনে আসে। তাতে ওই একই ছবি ব্যবহার করা হয়।
ওই লেখাটির সঙ্গে দেওয়া ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, "ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে মিলগুলি বোঝার জন্য আল মহাদুল আলি আল ইসলামির ছাত্ররা বেদ পড়ছেন। হায়দরাবাদের ওই বিদ্যালয়ে অন্য ধর্মের প্রায় ১০০০টি বই আছে। ছবি: জি. রামকৃষ্ণ।"
২ এপ্রিল ২০১৪ প্রকাশিত ওই লেখায় বলা হয় বিদ্যালয়টি তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদে অবস্থিত।
ওই রিপোর্টে বলা হয় যে, আসন্ন শিক্ষা বর্ষ থেকে ওই বিদ্যালয়ে ইসলামি ও আধুনিক শিক্ষা দুইই দেওয়া হবে।
বুম ওই প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ডিরেক্টার ওসমান আবেদিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, উনি ভাইরাল দাবিটি উড়িয়ে দেন।
উনি বুমকে বলেন, "ছবিটি প্রায় ছ'বছর আগে তোলা হয়। তাতে ছাত্রদের লাইব্রেরিতে পড়তে দেখা যাচ্ছে। ভাইরাল দাবিটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যে।"
"আমাদের একটি 'ধর্ম শিক্ষা' বিভাগ আছে। সেখানে আমরা ভারতের ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম ও জুডাইজম সম্পর্কে পড়াশোনা করি। আমাদের রিসার্চের নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রাথমিক সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করি, দ্বিতীয় বা তৃতীয় সূত্র থেকে নয়। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণ হল, মূল ধর্ম গ্রন্থগুলি পড়া হয় না। নয় তারা আসলগুলি পড়ে না, অথবা যেগুলি পড়ে সেগুলিতে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া থাকে। ওই পদ্ধতিটি ভুল। প্রাথমিক সূত্র থেকেই পড়া ঠিক। ভারতে আমরাই হলাম প্রথম এমন এক ইনস্টিটিউট যেখানে বেদ, উপনিষদ, ভগবত গীতা, গুরু গ্রন্থ সাহেব ও বাইবেল রয়েছে। ধর্মকে বোঝার জন্য আমরা আমাদের স্কলার ও ছাত্রদের মূল গুন্থগুলি পড়তে বলি," আবেদিন বুমকে বলেন।
উনি আরও বলেন, "আমাদের একজন সংস্কৃতের শিক্ষক ছিলেন। বেদ তো নতুন নয়। বেদকে কে পাল্টাবে! একটি লাইব্রেরি তখনই সম্পূর্ণ হয় যখন সেখানে একটি বিষয়ের সব সূত্রগুলি থাকে। আসল রচনাকারদের লেখা প্রায় ১৫০০ বই আমাদের আছে।"
প্রতিবেদনটির লেখক জে এস ইফতেকারের সঙ্গেও বুম যোগাযোগ করে।
ইফতেকার বলেন, ছবিটি ওই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে তোলা হয়। হিন্দু ও শিখ ধর্ম সহ অনেক ধর্মের বই সেখানে আছে। "সেখানে তুলনামূলক ধর্মের একটি পাঠ্যক্রম চালু আছে," ইফতিকার বুমকে বলেন।