প্লাবিত এলাকায় বুক অবধি জলে ডুবে থাকা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থালাতে ত্রাণের খাবার নেওয়া একটি বাচ্চার স্পর্শকাতর পুরনো ছবি সোশাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে। ফেসবুকে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে ছবিটি আমপান বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের ছবি।
বুম যাচাই করে দেখে ছবিটির সঙ্গে বুধবার পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানা সাইক্লোন আমপান ও তার জেরে জলমগ্ন সুন্দরবনের কোনও সম্পর্ক নেই। ছবিটি ২০১৩ সালের জুন মাস থেকে অনলাইনে রয়েছে।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই ছবিটিতে একটি বছর পাঁচেক বা তার চেয়ে কমবয়সী একটি বাচ্চাকে বুক অবধি জলে ডুবে থাকা অবস্থায় স্টিলের থালায় ত্রাণের খাবার নিয়ে দেখা যাচ্ছে। ত্রাণ দিতে আসা এক ব্যক্তিও ডুবে রয়েছেন হাঁটু জলে। পাশে রাখা দুটি অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র থেকে লোহার ডাবু হাতায় খাবার তুলে পরিবেশন করা হচ্ছে ওই একরত্তি বাচ্চাটিকে।
ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে একজন ফেসবুক ব্য়বহারকারী ক্যাপশন লিখেছেন, "এই ছবিটি দেখার পর আর বিদ্যুৎ, জল, নেট সংযোগ, ইত্যাদি বিষয়ে কোনো অভিযোগ করতে লজ্জ্বা হচ্ছে। আমরা পাকা বাড়িতে দুবেলা ডাল ভাত খেতে পাচ্ছি। কিন্তু সুন্দরবন এর সাধারণ মানুষদের কি অবস্থা ভাবলে আর খেতে ইচ্ছা করছে না।"
(মূল ইংরেজিতে টুইট: Even after seeing this, if you feel like indulging in dirty politics, that's on you. But if you think humanity supercedes everything, then a request from Bengal to all the leaders. Stand by Bengal. Support & encourage our CM@MamataOfficial, It's time for empathy & compassion.)
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
Even after seeing this, if you feel like indulging in dirty politics, that's on you. But if you think humanity supercedes everything, then a request from Bengal to all the leaders. Stand by Bengal. Support & encourage our CM @MamataOfficial It's time for empathy & compassion. pic.twitter.com/65Bb3Y3FMQ
— Raj chakraborty (@iamrajchoco) May 23, 2020
আরেক চিত্র পরিচালক রাম কমল ছবিটিকে টুইট করে বাংলায় আঘাত হানা সাইক্লোন আমপানের সঙ্গে জুড়েছেন।
You had your dinner tonite? Mr Politician, Mr Media and Mr Celeb? #AmphanSuperCyclone Bengal Bleeds! pic.twitter.com/RGbDJbT1hF
— Ram Kamal । राम कमल (@Ramkamal) May 22, 2020
Child and Women development Minister during crisis . pic.twitter.com/iCAjHA8MN5
— Reshma Alam (@reshma_alam9) May 23, 2020
বুম ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানতে পারে ছবিটির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আমপানের কোনও সম্পর্ক নেই, এটি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এলাকার ছবি নয়। বুম দেখে ছবিটি ২০১৩ সালের জুন মাস থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে।
ছবি শেয়ার করার ওয়েবসাইট ইমগুরে ছবিটি ২০১৩ সালের ২৪ জুন 'ডাকইউমেট' নামে এক ব্যবহারকারী ছবিটি পোস্ট করেন। ছবিটির ক্যাপশন হিসেবে ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল, "উত্তরাখণ্ডে এখন যা হচ্ছে।" (মূল ইংরেজিতে ক্যাপশন: "This is what happening in Uttrakhand (India) now days!")
২০১৩ সালের ২৫ জুন প্রবীণ প্যাটেল নামে এক ব্যক্তি ইউটিউবে ছবিটি ব্যবহার করে ৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করেছিলেন।
২০১৩ সালের ২৯ জুন প্রকাশিত মালায়লাম ব্লগ ও ওই বছরের ৩০ জুনের একটি ফেসবুক পোস্টে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে।
২০১৩ সালে ১৬ ও ১৭ জুন উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙ্গা বৃষ্টির জেরে বন্যায় প্রায় ১০০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়। রুদ্রপ্রয়াগ, চামোলি, উত্তরকাশি, পিথোরাগড় জেলায় বাড়ি, ব্রিজ, রাস্তা ভেঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। বিস্তরিত পড়ুন এখানে।
বুমের পক্ষে স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি ছবিটি উত্তরাখণ্ডের এই দুর্যোগের সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা।
বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ১৯৯৯ এর পরে আমপানের মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণি়ঝড় আর হয়নি। আমপান সাইক্লোনের প্রভাবে বিপর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ, উড়িশা, বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণায় প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। বাঁধ ভেঙ্গে জল ঢুকে পড়ায় সুন্দরবন সহ দক্ষিন ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত। ধ্বংসাত্মক আমপানের তাণ্ডবে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে অসংখ্য মানুষ গৃহহীন।
শহর কলকাতা, শহরতলি সহ গোটা দক্ষিণ বঙ্গের জেলায় বিস্তার্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ, জল, টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বুধবার দুপুরের পর থেকে জনজীবন স্তব্ধ। কাঁচা-পাকা বাড়ি ভেঙ্গে অসংখ্য মানুষ আশ্রয়হীন। এপর্যন্ত ১০০ জনের বেশি জীবনহানির খবর পাওয়া গেছে।