ভাইরাল হওয়া সোশাল মিডিয়া পোস্টে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হওয়া এক বাংলাদেশি মহিলার কয়েকটি ছবিকে সাম্প্রদায়িক রঙ মাখিয়ে ভারতের কেরলের ঘটনা বলে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে।
প্রথম ছবিতে এক বিবাহিত দম্পতিকে দেখা যাচ্ছে। আর অন্য দুটি ছবিতে ওই একই মহিলাকে মুখে এবং পিঠে অনেক আঘাতের চিহ্ন সহ দেখা যাচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ছবির সঙ্গে হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে ঘটনাটি কেরলের, এবং ওই মহিলা নিজে হিন্দু কিন্তু এক জন মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করেন।
ক্যাপশনের অনুবাদ, "সব মেয়ে শুরুতে বলে আমার আব্দুল অন্য মুসলিমদের মতো নয়, সে খুব মহান। কিন্তু যখন সত্যিটা সামনে আসে, তখন তিনটে পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়— সুটকেসে মৃতদেহ পাওয়া যায়, নয় তো নিষিদ্ধ পল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়, অথবা বাচ্চা উৎপাদনের মেশিনে পরিণত হয়।
(ছবি অস্বস্তিকর, পাঠকদের নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী দেখতে অনুরোধ করা হচ্ছে)
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন- केरल में फिर एक लड़की #लव_जिहाद की शिकार. हर लड़की शुरू में कहती है मेरा अब्दुल दूसरे मुसलमानों जैसा नही है,बहुत नेक है लेकिन जब आंखें खुलती हैं तब लड़कियों के सामने तीन अंजाम होते हैं या तो सूटकेस में दफन मिलती है या कोठे पर बेच दी जाती है या बच्चा पैदा करने वाली मशीन बन जाती है,।)
তথ্য যাচাই
বুম তদন্ত করে দেখেছে ছবিটি গার্হস্থ্য হিংসার শিকার বলি হতে হতে বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশের এক মহিলার। ছবিটি মোটেই কেরলের নয় যেমনটি ভাইরাল হওয়া ছবিতে দাবি করা হয়েছে।
গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা ২০২০ সালের ২৬ জুন প্রকাশিত কিছু স্থানীয় সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই। ওই প্রতিবেদনগুলিতে ছবির ভদ্রমহিলাকে সুমাইয়া হাসান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর স্বামী এবং পরিবার তাঁর উপর যে অত্যাচার করেছে হাসান তা ফেসবুকের মাধ্যমে জানান। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে হাসান ফেসবুকে তাঁর শরীরের বিভিন্ন আঘাতের ছবিও দেন।
ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় এই ঘটনার পর ঢাকা পুলিশ তাঁর স্বামী জাহিদ হাসানকে গ্রেফতার করেছে।
ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে শাহবাগ থানার অফিসার ইন চার্জ আব্দুল হাসান মন্তব্য করেন যে যদিও স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু নির্যাতিতাকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। এর পর ওই প্রতিবেদনে বলা হয় যে নির্যাতিতা আগেও অভিযোগ দায়ের করেন কিন্তু পরে তা মীমাংসা হয়ে যায়।
ঢাকা ট্রিবিউনের ২০২০ সালের ২৭ জুনের প্রতিবেদনে ভাইরাল হওয়া ছবিটি আমরা দেখতে পাই। দ্বিতীয় ছবি যেটিতে তাঁর মুখের আঘাত দেখা যাচ্ছে সেটি আমরা সেখানে দেখতে পাই। ফেসবুকেও ওই একই ছবি ছিল যা এখন ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পোস্ট দেওয়ার এক দিন পর হাসান ফেসবুকে আর একটি পোস্ট করে। সেই পোস্টে তিনি জানান যে তাঁর ফেসবুক পোস্ট দেখে শাহবাগ থানার পুলিশ তাঁকে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে বলে। কিন্তু তিনি তা করেননি।
বুম এর আগে 'লাভ জিহাদ' সংক্রান্ত ভুয়ো খবর যাচাই করেছে এবং মিথ্যে প্রমাণ করেছে। সেই খবরে ভিন্ন ধর্মের এক দম্পতির ছবি দেওয়া হয় এক মৃতদেহের ছবির সঙ্গে এবং দাবি করা হয় মুসলিম স্বামী তার হিন্দু স্ত্রীকে বিয়ের পর খুন করেছে আরেকটি এরকম সম্পর্কহীন একটি খুনের ঘটনার মৃতদেহের ছবি ভিন্ন ধর্মের এক দম্পতির বিয়ের কার্ডের ছবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়।
আরও পড়ুন: না, কৃষি বিল পাস হওয়ার পর আদানিদের খাদ্য মজুত করার সাইলো তৈরি হয়নি