বাংলাদেশের টঙ্গির একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দুই দলের সংঘর্ষের ভিডিও দিল্লির সাম্প্রতিক দাঙ্গার ছবি বলে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে। টুইটারের জনপ্রিয় মুখ মধু কিশওয়ার এই ভিডিওটি টুইট করেছেন এবং সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন যে মুসলিমরা দিল্লিতে দাঙ্গা শুরু করেছিল এবং এই ভিডিও রেকর্ডিংটিই তার প্রমাণ।
বুম এর আগেও এই ভাইরাল হওয়া ভিডিওর তথ্য যাচাই করেছে। তখন দাবি করা হয়েছিল যে পশ্চিমবঙ্গে ইসলামি সন্ত্রাস বিপুল ভাবে বাড়ছে।
কিশওয়ার তাঁর টুইটে লিখেছেন, "প্রত্যেকের হাতে থাকা ক্যামেরা-ফোন এবং শহরজুড়ে লাগানো সিসিটিভির দৌলতে এখন আমাদের জানার উপায় আছে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কী ভাবে সংঘটিত হয়।"
টুইটারে কিশওয়ারের ২০ লক্ষেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে।
টুইটটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভিডিওটি একটি বাড়ির ছাদ থেকে তোলা হয়েছে। ভিডিওটিতে মাথায় টুপি পরা কিছু লোকের মধ্যে সংঘর্ষ হতে দেখা যাচ্ছে। ভিড়ের মধ্যে লোকজনকে লাঠি হাতে দৌড়তে দেখা যাচ্ছে, তাদের পাথর ছুঁড়তেও দেখা গেছে।
এই একই ভিডিও শেফালি বৈদ্যও শেয়ার করেছেন। তিনি দাঙ্গাকারীদের মাথার টুপি নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েননি।
Skullcaps anyone? https://t.co/vOj9lany0B
— Shefali Vaidya. (@ShefVaidya) March 3, 2020
আগেও বুমের তথ্যযাচাইয়ে ধরা পড়েছে যে কিশওয়ার ও বৈদ্য, দুজনেই যাচাই না করা তথ্য শেয়ার করেন।
আরও পড়ুন: আবার বিভ্রান্তিকর প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধীর পুরনো ভিডিও টুইট করলেন মধু কিশওয়ার
তথ্য যাচাই করার জন্য এর আগে এই একই ভিডিও বুমের হেল্পলাইন নম্বরেও এসেছিল।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির কিছু অংশে নয়া নাগরিকত্ব আইনের সমর্থক এবং তার বিরোধীদের মধ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই হিংসার কারণে এখন পর্যন্ত ৪৫ জন লোকের মৃত্যু হয়েছে, আহতের সংখ্যা দুই শতাধিক।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে স্ত্রী ও শিশুর মাটি খুঁড়ে দেহ বের করার ভিডিও সাম্প্রদায়িক রঙ সহ ছড়ানো হল
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশে ভাগ করে নেয় এবং রিভার্স ইমেজ সার্চ চালায়। তার ফলে আমরা ভিডিওটির একটি দীর্ঘতর ভার্সনের সন্ধান পাই যা ইউটিউবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আপলোড করা হয়। ভিডিওটিতে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছিল, 'বিশ্ব ইজতেমা সংঘর্ষ ২০১৮'।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকার টঙ্গি অঞ্চলে সংঘটিত এই সংঘর্ষের খবর আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি।
এই ভিডিওটিতে তবলীগ জামাতের দুটি দলের মধ্যে সংঘর্ষ হতে দেখা যায়। তবলীগ জামাত হজের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামিক জমায়েত।
বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জামাতের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বিশ্ব ইজতেমা হল ঢাকার শহরতলিতে তুরাগ নদীর তীরে টঙ্গি টাউনে মুসলিমদের বাৎসরিক জমায়েত।
এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তিপুর্ণ জমায়েত বলে দাবি করা হয়। ১৫০টি দেশ থেকে ভক্তরা এখানে জমায়েত হন। বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে দুই দলের মধ্যে একটি ছিল ভারতীয় ধর্ম প্রচারক মৌলানা সাদ কান্ধালভির অনুগামী, এবং অন্যটি বাংলাদেশের মৌলানা জুবায়েরের আনুগামী। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর দ্য ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় "ভারতীয় ধর্ম প্রচারক মৌলানা সাদ কান্ধালভি এবং মৌলানা জুবায়েরের অনুগামীদের মধ্যে সকাল থেকে সংঘর্ষ বাধে। দুপক্ষই বিভিন্ন দফায় পরস্পরের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।"
এই লড়াইটি সম্ভবত দুই দলের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই ছিল, এই সংঘর্ষের ফলে এক ৭০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধের মৃত্যু হয় এবং ২০০ জনের বেশি আহত হন।
ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন পড়তে পারেন এখানে ।