সোশাল মিডিয়ায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের গির ন্যাশনাল পার্ক সংলগ্ল শহরে রাতের অন্ধকারে রাস্তায় সিংহ চলাফেরা করার ভিডিও নতুন করে শেয়ার করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, বাদলা রাতে নাকি সিংহের দল ঘুরে বেরাচ্ছে গির অরণ্যের চারপাশে।
লকডাউন চলাকালীন অনেকেই পুরনো নানা ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, মানুষের ভিড় বা দূষণ কমে যাওয়ার কারণেই নাকি এই ধরণের প্রকৃতির অন্যান্য না-মানুষীরা জনপদে ধরা দিচ্ছেন। কেউ সম্পাদিত ছবি ছড়িয়ে কিংবা পুরনো ভিডিও জিইয়ে তুলে ভুয়ো খবরে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। বুম সম্প্রতি, এরকমই দুটি ঘটনার তথ্য-যাচাই করেছে। ক্যানিং স্টেশনে বাঘ বলে ভাইরাল হয়েছিল সম্পাদিত ছবি। প্রতিবেদনটি পড়া যাবে এখানে। ডুয়ার্সে ৩১ নং জাতীয় সড়কে জখম চিতাবাঘের ২০১৮ সালের ভিডিও জিইয়ে তুলে দাবি করা হয়েছে সম্প্রতি দার্জিলিংয়ের রাস্তায় নাকি বাঘের দেখা মিলেছে।
আরও পড়ুন: ডুয়ার্সে ৩১ নং জাতীয় সড়কে জখম চিতাবাঘের ভিডিও জিইয়ে উঠলো
ভাইরাল হওয়া এক মিনিটের ভিডিওটিতে ৬-৭ টি সিংহকে রাতের বেলা বৃষ্টি স্নাত রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বাড়ির জানলা থেকে ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে দৃশ্যটি। দূর থেকে শোনা যায় কুকুরের ডাক।
ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "গুজরাটের 'গীর' জঙ্গলের কাছাকাছি একটি শহরে মাঝরাতে বৃষ্টির মধ্যে সিংহীর দল তাদের ছানাপোনা নিয়ে ঘুরছে মনের সুখে......"
ভিডিওটি দেখা যাবে এখানে। ভিডিওটি আর্কাইভ করা এখানে।
একই ক্যাপশন সহ ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে শেয়ার করা হয়েছে ভিডিওটি।
আরও পড়ুন: খোলা জায়গায় ডিম ফুটে বেরিয়ে পড়েছে মুরগির বাচ্চা, এই ভিডিওটি ভারতের নয়
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটির কয়েকটি মূল ফ্রেমে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে ভিডিওটি পুরনো এবং এটি সাম্প্রিত সময়ের ভিডিও নয় যেমনটি ওই ফেসবুক পোস্টগুলিতে দাবি করা হয়েছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একাধিক গণমাধ্যমে গুজরাতের জুনাগড়ে গির অভয়ারণ্য সংলগ্ন শহরে সাতটি সিংহের ঘুরে বেড়ানোর এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে আপলোড করা এএনডির রিপোর্টে দেখা যাবে হুবহু এই ভিডিওটি।
গুজরাতের সৌরাষ্ট্র থেকে একশো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গিরনার অভয়ারণ্য সংলগ্ন জুনাগড়ে বাস প্রায় ৪০ টি সিংহের। উল্লেখ্য, পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র গির অভয়ারণ্যই এশিয়াটিক সিংহের একমাত্র আবাসস্থল।
সিংহরা প্রায়ই গির অভয়ারণ্য থেকে ঘুরতে ঘুরতে নিকটবর্তী তালেতি রোডে চলে আসে। ডেপুটি কনজারভেটর অফ ফরেস্ট, ডঃ সুনীল কুমার বেরোয়াল সিংহদের ঘোরাঘুরি একদমই সাধরণ ঘটনা বলে অভিহুত করেন। প্রসঙ্গে নিউজ ১৮ কে বলেন, "অভয়ারণ্যের কাছে অবস্থিত হওয়ার ফলে প্রায়শই এদের দেখা যায়। অঞ্চলটি 'লায়ন্স করিডোর' হওয়ার ফলে সিংহরা রাত্রে এসব অঞ্চলে ঘোরাফেরা করে এবং সকালে জঙ্গলে চলে যায়। বনবিভাগ সিংহের গতিবিধি সম্পর্কে সর্বদা সজাগ থাকে এবং প্রয়োজনে বন্য প্রাণীকে উদ্ধার করে, তাদের জঙ্গলে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।"
২০১৯ সালে ভিডিওটি ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন একজন পথচারী। নীচে সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও এনডিটিভির প্রতিবেদনের তুলনা দেওয়া হল।লকডাউন চলাকালীন পুরীর সমুদ্র সৈকতে একটি হরিণ আপন মনে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে—এই ভুয়ো দাবি সহ এপ্রিল মাসে আরও একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটি ফরাসি চিত্রনির্মাতা অ্যান্থনি মার্টিনের একটি মুভির অংশ বিশেষ। প্রতিবেদটি পড়া যাবে এখানে।
আরও পড়ুন: লকডাউনে দূষণ কমায় উত্তরাখণ্ডে ব্রহ্ম পদ্ম ফুটছে, ভাইরাল হল পুরনো ভিডিও