এক হিন্দু দম্পতির নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার দৃশ্য মিথ্যে সাম্প্রদায়িক বার্তা সমেত ভাইরাল হয়েছে। বলা হচ্ছে, মহিলাটি হিন্দু আর তাঁর মুসলমান স্বামী তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
বুম দেখে স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই হিন্দু এবং ঘটনাটিতে সাম্প্রদায়িকতার কোনও লেশমাত্র নেই।
ভাইরাল ক্লিপটিতে মহিলাকে একটি দোকান ভাঙচুর করতে দেখা যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে উনি কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করছেন যে, তাঁর স্বামী তাঁকে ঠকিয়েছেন। মহিলা বলছেন, তাঁর স্বামীর আরও এক স্ত্রী আছেন এবং তাঁদের দু'টি সন্তানও রয়েছে।
ভাইরাল ক্লিপটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "আগে বিয়ে করে থাকলেও এবং দুই সন্তানের বাবা হওয়া সত্ত্বেও, এক অল্পবয়সী মুসলসান পুরুষ মিথ্যে বলে এক হিন্দু মহিলাকে বিয়ে করে।"
ফেসবুকে ভাইরাল
ক্যাপশনটি দিয়ে সার্চ করলে দেখা যায়, মিথ্যে ক্যাপশন সহ ভাইরাল ক্লিপটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল ক্লিপটি মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে তোলা এবং ঘটনাটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই। কিছু সংবাদ প্রতিবেদন আমাদের নজরে আসে যেখানে মহিলা নিজেকে নেহা পাতিল বলে শনাক্ত করছেন আর স্বামীকে আনন্দ পাতিল হিসেবে।
স্থানীয় রিপোর্টে বলা হয় যে, তাঁর স্বামীর আরও একজন স্ত্রী আছেন ও তাঁদের দুটি সন্তানও আছে, এ কথা জানার পরই ওই মহিলা দোকানটি ভাঙচুর করেন।
ভাইরাল ক্লিপটির সূত্র ধরে, আমরা 'উম্যান,' 'হাজব্যান্ড' 'আর্য সমাজ মন্দির' – এই কি-ওয়ার্ডগুলি দিয়ে সার্চ করি। তার ফলে ওই ঘটনাটি সম্পর্কে কিছু সংবাদ প্রতিবেদন সামনে আসে। তাতে বলা হয়, যে দুধের পার্লারে তাঁর স্বামী আনন্দ পাতিল কাজ করতেন, মহিলা সেই পার্লারটি ভাঙচুর করেন।
হিন্দি সংবাদপত্র 'দৈনিক ভাস্কর'-এর রিপোর্টে বলা হয় যে, ১৪ অক্টোবর ২০২০-তে, ইন্দোরের ভোলারাম ওস্তাদ রোডের একটি দুধের পার্লারে একজন অল্পবয়সী মহিলা খুব হইচই ও ভাঙচুর করেন। উনি অভিযোগ করেন, ওই পার্লারে মালিক তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। মহিলার দাবি, লোকটি নিজেকে একজন অনাথ বলে জাহির করেছিল ও তাঁর সঙ্গে তিন বছর কাটায়। তারপর লোকটি চলে গেলে, উনি জানতে পারেন যে, তিনি বিবাহিত ও তাঁর দুই সন্তান আছে।
ভানভারকুঁয়া থানার অ্যাসিসটেন্ট সাব-ইন্সপেক্টর জগদীশ মালব্যর কথা উদ্ধৃত করে ওই রিপোর্টে বলা হয়, মহিলাটি অভিযোগ করেন যে, ইন্দোরের ছোটা বাঙ্গারদা-য় একটি দুধের পার্লারের মালিক আনন্দ পাতিল ২০১৭-র জুন তাঁকে আর্য সমাজ মন্দিরে বিয়ে করেন। কিন্তু এবছর জুন মাসে তিনি জানতে পারেন যে, আনন্দ পাতিলের আরও এক স্ত্রী আছেন।
ইউটিইবে সার্চ করলে, ওই ঘটনা সংক্রান্ত কিছু স্থানীয় রিপোর্ট আমরা দেখতে পাই। একটি রিপোর্টের ২.০৫ মিনিটের মাথায়, মহিলাকে রিপোর্টারদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সেখানে নেহা পাতিল হিসেবে তিনি নিজের পরিচয় দেন এবং বলেন, তাঁর স্বামীর নাম হল আনন্দ পাতিল। আর ২.৪০ মিনিটের মাথায়, ওই ঘটনাটি সম্পর্কে পুলিশের বয়ানটি শুনতে পাওয়া যায়।