তিনটি ছবি সহ একটি সেট, যার দু'টি গুরুগ্রাম থেকে দারভাঙ্গা সাইকেল চালিয়ে খবরের শিরোনামে আসা জ্যোতি কুমার পাসওয়ানের, তা মিথ্যে দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে বিহারের দারভাঙ্গায় সে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছে। তৃতীয় ছবিতে একটি মেয়েকে মুখ থুবড়ে পরে থাকতে দেখা যায়।
বুম খুঁজে পায় ওই নাবালিকার লাশের ছবিটি একই "সাইকেল কন্যা"র নামে অন্য একটি মেয়ের যে তড়িদাহত হওয়ার পর দমবন্ধ হয়ে মারা যায়। মেয়েটি বিহারের একটি বাগানে আম পারতে গিয়েছিল। আমরা জ্যোতি পাসওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি তার মৃত্যুর খবরটি ভুয়ো।
মে মাসে লকডাউন চলাকালীন পাসওয়ান গুরুগ্রাম থেকে সাইকেলের কেরিয়ারে চাপিয়ে তার বাবাকে নিয়ে দারভাঙ্গার শিরহুলি গ্রামে ফিরলে খবরের শিরোনামে উঠে আসে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প টুইট করে পাসওয়ানকে বাহবা দেয়।
ছবিগুলি ফেসবুকে শেয়ার করে হিন্দিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ''এই হল সাহসী জ্যোতি পাসওয়ান, যে সাইকেলের কেরিয়ারে চাপিয়ে বাবাকে ১৫০০ কিমি বয়ে নিয়ে এসেছিল বিহারে সে ধর্ষিত হয়েছে। ভালো গভর্নেন্স-এর সরকার নির্বাক দর্শক। ঘটনাটা ঘটেছে বড়লোকের বাড়িতে! সাধারণ গরিবের মেয়ে শিকার।
(মূল হিন্দিতে ক্যাপশন: ज्योति पासवान, जो अपने पिता को 1500 किलो मीटर साईकिल चलाकर बिहार अपने घर लायी थी ! उस बहादुर लडकी को किसी शख्स ने अपने हवस का शिकार बना लिया! सुशासन की सरकार तमाशबीन बनी हुई है क्योंकि तमाशा किसी अमीर के घर में नहीं हुआ है! आम गरीब की बेटी शिकार हुई है।)
ছবিটি স্পর্শকাতর হওয়ায় ছবি সহ পোস্টগুলি বুম শেয়ার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টগুলি আর্কাইভ করা আছে এখানে এবং এখানে।
বুম তার হেল্পলাইনেও ছবিটি যাচাই করার অনুরোধ পেয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম ঘটনাটি নিয়ে বিশদে জানতে বিহারের স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমাদের বলা হয় জ্যোতি কুমার পাসওয়ানের মৃত্যুর খবরটি মিথ্যে।
বুম তারপর পাসওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং জানতে পারে তাকে ঘিরে ধর্ষণ ও খুনের খবরটি ভিত্তিহীন। ''আমি ভালো আছি, ঠিক আছি। আমার কিছু হয়নি। একই নামে মৃত্যু হওয়া মেয়েটি কিছু দূরের—যেখানে আমি থাকি। ওর বাবার নাম অশোক পাসওয়ান। যেহেতু আমাদের একই নাম, লোকজন ভাবছে যে মারা গেছে সে আমি,'' সে বুমকে বলে।
জ্যোতির সমনামীর মৃত্যু
বুম নিশ্চিত হয়েছে প্রাণহীন দেহের ভাইরাল ছবিটি জ্যোতি কুমারীর, যাকে ১ জুলাই বাগানে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আমরা পাতর গ্রামের স্টেশন হাউস ইন্সপেক্টর সুভাষ চন্দ্র মন্ডলের সঙ্গে কথা বলেছি যিনি নিশ্চিত করেছেন যে কুমারী ওই গ্রামে তড়িদাহত হয়ে মারা যায়। মন্ডল 'সাইকেল কন্যা' জ্যোতি পাসওয়ানের সোশাল মিডিয়ায় মৃত্যুর খবর নস্যাৎ করেছেন।
''মৃতা পাতর গ্রামের এবং তার বাবার নাম অশোক পাসওয়ান। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃত্যুর কারণ তড়িহদত হওয়ায় দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু,'' মন্ডল বুমকে বলেন।
হিন্দুস্তানের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৩ বছর বয়সী জ্যোতি কুমারী একটি বাগানে আম কুড়াতে গেলে ১ জুলাই তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মৃতার বাবা অভিযোগ করেন যে বাগানের মালিক অর্জুন মিশ্র ধর্ষণ ও খুন করেছে বাগান থেকে আম চুরি করার জন্য। মৃতার পরিবার একই অভিযোগে একটি এফআইআর দায়ের করছে। ''ওর বাবা পুলিশকে বলেছে বাগানে পাওয়া লাশের গলায় গলাটিপে ধরার দাগ রয়েছে,'' জাজা আলি, অশোক পেপার মিল ফাঁড়ির পুলিশ আধিকারিক বলেছেন ওই সংবাদপত্রকে। খবরে আরও প্রকাশ এটিকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা বাগান মালিকের স্ত্রীকে আক্রমণ করলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
বুম স্বাধীনভাবে জ্যোতি কুমারীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ যাচাই করতে পারেনি।
আরও পড়ুন: রাজনাথ সিংহের সম্পাদিত ছবি বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ভাইরাল