সোশাল মিডিয়ায় কানাডার (Canada) আলবার্টা (Alberta) প্রদেশে কোভিড (Covid) অতিমারি সংক্রান্ত (measures) বিধি নিয়ে ভুয়ো এবং ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব (Conspiracy Theory) প্রচার করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, সেখানে লকডাউন, মাস্ক ও বাধ্যতামূলক টিকাকরণ বাতিল করা হয়েছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বার্তাটির সংক্ষেপ হল, "মহামারি নিরসনে কানাডা পথ দেখাল। করোনার বিরুদ্ধে আদালতের লড়াইয়ে জয়ী হল কানাডার নাগরিক। কানাডার আলবার্টা প্রদেশে, লকডাউন, মুখোশ এবং জোরপূর্বক ভ্যাক্সিনেশন সবই বাতিল করা হয়েছে। করোনাকে এখন সরকারি 'মহামারি' এর পরিবর্তে 'ফ্লু ভাইরাস' হিসাবে উল্লেখ করা হচ্ছে। আদালতের রায়ের পর করোনার অস্তিত্ব না থাকায় পুরো প্রদেশে আতঙ্কের অবসান হয়েছে। কানাডিয়ান নাগরিক প্যাট্রিক কিং সহ আরও হাজার হাজার মানুষ করোনার নামে জোর করে লকডাউন, মাস্ক এবং টিকা দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। প্যাট্রিক আদালতে নিজের অবস্থান নিয়ে বিচারককে জানান, যখন করোনাই নেই, তখন বিধিনিষেধ থাকবে কেন? প্যাট্রিক সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন যে, "প্রথমে আদালতে প্রমাণ করুন যে, করোনার বৈজ্ঞানিক অস্তিত্ব আছে, তারপর আমি জরিমানা দেব এবং মুখোশ পরব।"
করোনার বৈজ্ঞানিক অস্তিত্ব আছে তা প্রমাণ করতে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এখানে সরকারের গলায় একটা হাড় আটকে গেল!
সরকারের মন্ত্রীরা অবশেষে হাল ছেড়ে দেন এবং স্বীকার করেন যে, "বৈজ্ঞানিকভাবে করোনা ভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব নেই। কারণ আমরা কখনো ভাইরাসটিকে আইসোলেট করিনি। অর্থাৎ আমাদের কাছে করোনা প্রমাণের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।"
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির (Bharatiya Bigyan O Yuktibadi Samiti) ফেসবুক পেজ থেকেও এই বার্তাটি পোস্ট করা হয়েছে।
ফেসবুক পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। ফেসবুক পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: কোভিড সারাতে শুকনো আদা? তেমন কোনও প্রমাণ নেই
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টটি ভুয়ো।
প্রথমত, আলবার্টা ২০২১ সালের অগস্ট মাসে কোভিড লকডাউন বিধি শিথিল করে। সেসময় আলবার্টা প্রদেশে টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া এবং কোভিড সংক্রমণও কমে যাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে পুনরায় কোভিড বিধি চালু করা হয়। এছাড়াও বুম আলবার্টার বানফ (Banff) শহরের কোভিড নিয়ন্ত্রণ বিধি যাচাই করে দেখেছে। এখনও সেখানে কোভিড অতিমারি বিধি বলবৎ রয়েছে।
২৪ জানুয়ারি, ২০২২ আলবার্টার কোভিড সংক্রমণের পরিসংখ্যান দেখুন।
একবার কোভিড সংক্রমিত হলে আর কোভিড হবে না এই ভ্রান্তধারণার বিরুদ্ধে সচেতনামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে
১৮ বছরের ঊর্ধে সবার টিকার তৃতীয় ডোজ নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে
দ্বিতীয়ত, প্যাট্রিক কিং মামলায় হেরে যান যা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। আলবার্টা সরকারের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করে লোক জড়ো করে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিবাদ করার জন্য প্যাট্রিকে ১২০০ ডলার জরিমানা করা হয়। ফের প্যাট্রিক ২০২১ সালের জুলাই মাসে আদালতের দ্বারস্থ হয়, প্রদেশের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ দিনা হিনসো-এর (Dr. Deena Hinshaw) কাছে ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ চেয়ে।
আলবার্টার কুইন্স কোর্টের বেঞ্চ প্যাট্রিকের মামলা খারিজ করে দেয়। প্যাট্রিক এবং হিনসো দুজনেই তাদের দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে অসমর্থ হয়। কিন্তু প্যাট্রিকের অনুগামীরা শুধুমাত্র স্বাস্থ্য আধিকারিক হিনসোর প্রমাণ দিতে না পারা নিয়ে সরব হয়েছে ভাইরাল বার্তায়।
প্যাট্রিক এই মমলাতে জিততে পারেনি। সেকথা অবশ্য ভাইরাল বার্তায় ফলাও করে বলা হয়নি। বিস্তারিত পড়ুন এখানে ও এখানে।
আর প্যাট্রিকের দাবি ভাইরাস আইসোলেট করা সম্ভব হয়নি তাও বিভ্রান্তিকর। চিনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ও পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ভাইরাসের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়। চিনের বিজ্ঞানীরা সে ভাইরাসের জিনোম প্রকাশ্যে তুলে দেয় অনলাইন ডেটাবেসে। কানাডা এবং ভারতও ভাইরাসকে আইসোলেট করতে সক্ষম হয়েছে। দেশীয় টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা ভারত বায়োটেক যৌথভাবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ রিসার্চ নিস্ক্রিয় ভাইরাসের সাহায্যেই কোভিড-১৯ রুখতে কোভ্যাক্সিন তৈরি করেছে।
কোভিড অস্বীকারকারী
প্যার্টিক কিং (Patrick King) হলেন একজন কোভিড-১৯ ভাইরাসের অস্তিত্ব অস্বীকারকারী (Denialist)। আরেক অস্বীকারকারী স্টিও পিটার্সের (Stew Peters) অনুষ্ঠানে এসে প্যাট্রিক এই সব প্রমাণহীন তত্ত্ব আউড়ান। পিটার্সে তাঁর অনুষ্ঠানে এইরকম নানা ধরণের কোভিড টিকা বিরোধী, মাস্ক বিরোধী ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রবক্তাদের নিয়ে এসে নিয়মিত প্রচার করেন।
এব্যাপারে পড়া যাবে রয়টার্স ও বুমের তথ্য-যাচাই।
অতিরিক্ত রিপোর্টিং শচি সুতারিয়া
আরও পড়ুন: ষড়যন্ত্র তত্ত্ব: 'প্ল্যানডেমিক' নেপথ্যে ডাঃ অ্যান্থনি ফাউসি, মাস্ক বিরোধী ভিডিও