আহমেদাবাদের ছ'বছর বয়সী অভিজিৎ সোলাঙ্কিকে আগে বছরে ১৮-২০ বার রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হত। এখন তার থ্যালাসেমিয়া সেরে গিয়েছে, রক্ত দেওয়ারও আর প্রয়োজন নেই। এর পিছনে রয়েছে অভিজিতের বোন কাব্যর মস্ত ভূমিকা। তার অস্থিমজ্জার খানিকটা সে দাদাকে দান করেছে।
কাব্যই ভারতের প্রথম 'স্যাভয়ার সিবলিং' বা ত্রাতা সহোদরা। নোভা আইভিএফ ফার্টিলিটি ক্লিনিকে প্রি-ইমপ্লান্টেশন জেনেটিক ডায়োগনসিস করার পরই তার জন্ম হয়। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের ছ'মাস পরে কাব্য সম্পূর্ণ সুস্থ, এবং সে নিজেও থ্যালাসেমিয়া মাইনর জিন বহন করে।
ত্রাতা সহোদরের প্রসঙ্গটি এক বিপুল তর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই প্রক্রিয়াটি কি আদেও নৈতিক? আইভিএফ বিশেষজ্ঞরা বুমকে জানিয়েছেন, প্রি-ইমপ্লান্টেশন জেনেটিক ডায়োগনসিস সম্পূর্ণ নৈতিক একটি প্রক্রিয়া, এবং থ্যালাসেমিয়ার মতো সিঙ্গল-জিন ডিজিজের ক্ষেত্রে তার ব্যবহার আইনসঙ্গত। টুইটারে অবশ্য অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই প্রক্রিয়াটি কি 'ডিজাইনার বেবি' উৎপাদনের, বা কোন বাচ্চাটিকে শেষ অবধি রাখা হবে, তা নির্বাচনের পথ খুলে দেয় না? অনেকে প্রশ্ন করছেন, এই প্রক্রিয়াটি কি আদৌ লিঙ্গ-নিরপেক্ষ?
সোলাঙ্কি দম্পতি নোভা আইভিএফ-এর ডিরেক্টর ডঃ মনীশ ব্যাঙ্কার, এবং সঙ্কল্প কেয়ার ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (সিআইএমএস)-এ হেমাটো-অঙ্কোলজিস্ট ডক্টর দীপা ত্রিবেদীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ডঃ ব্যাঙ্কার জানিয়েছেন, সোলাঙ্কি দম্পতি এই পদ্ধতিটি সম্বন্ধে যথেষ্ট অবহিত ছিলেন, এবং প্রক্রিয়াটি সংঘটিত করার জন্যই তাঁরা ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সোলাঙ্কিদের তিনটি সন্তান। দ্বিতীয় সন্তান অভিজিতের জন্মের পর জানা যায় যে সে থ্যালাসেমিয়া মেজর-এ আক্রান্ত। দম্পতির বড় মেয়ে থ্যালাসেমিয়া জিনের বাহক নয়। অভিজিতের জন্মের আগে অবধি এই দম্পতি জানতেন না যে তাঁরা দু'জনেই থ্যালাসেমিয়া মাইনর জিনের বাহক। থ্যালাসেমিয়া একটি জিনবাহিত রোগ। এই রোগে আক্রান্তদের শরীরে কম হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন হয়, ফলে রক্তের অক্সিজেন বহনক্ষমতাও কম থাকে।
থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সামনে দুটি মাত্র বিকল্প— হয় তাঁকে নিয়মিত রক্ত নিয়ে যেতে হবে, অথবা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হবে যাতে রক্তে নতুন লোহিতকণিকা উৎপন্ন হয়। অভিজিতের দিদিকে পরীক্ষা করে জানা যায়, অভিজিতের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য সে ঠিক মিল নয়। তখনই শ্রী সহদেব সোলাঙ্কি এই বিষয়ে পড়াশোনা করতে আরম্ভ করেন, এবং ত্রাতা সহোদর সম্বন্ধে জানতে পারেন। তার পরই তিনি ২০১৭ সালে ডঃ ব্যাঙ্কারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজির মাধ্যমে একাধিক ভ্রূণ নিষ্কাশন করা হয়, এবং সেগুলির জেনেটিক মেক-আপ বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা হয়, কোন ভ্রূণটির জিনগত গঠনের সঙ্গে অভিজিতের জিনগত গঠনের মিল আছে। তা চিহ্নিত করার পরই ভ্রূণটি গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। ভ্রূণটি সম্পূর্ণ মেয়াদ গর্ভস্থও থাকে। তার পর ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে কাব্য জন্মায়। ২০২০ সালের মার্চে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়। ডঃ ব্যাঙ্কার এই ঘটনাটি নিয়ে ২০১৯ সালে জার্নাল অব হিউম্যান রিপ্রোডাকটিভ সায়েন্সেস-এ একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০০ সাল থেকেই এই থেরাপিটি প্রচলিত (অ্যাডাম ন্যাশ), এবং তার ভিত্তিতেই 'মাই সিস্টার্স কিপার' নামে ২০০৪ সালে একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয় ও ২০০৯ সালে হলিউডে একটি সিনেমাও নির্মিত হয়।
অভিজিৎ ও কাব্যই ভারতের প্রথম ত্রাতা সহোদর জুড়ি, যাদের ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াটি সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০ সালেই মুম্বইয়ের যশলোক হাসপাতালে জন্ম হয়েছে আর এক ত্রাতা সহোদরের— এক বছর পরে তাদের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হবে। সদ্যোজাত ভাই তার অস্থিমজ্জা দেবে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত দিদিকে।
থ্যালাসেমিয়া
থ্যালাসেমিয়া একটি জিনঘটিত রোগ, যা পূর্ববর্তী প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে যায়। এই রোগে আক্রান্তদের শরীর কম হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করে, এবং তার প্রভাব পড়ে রক্তের অক্সিজেন-বহন ক্ষমতায়। গর্ভাবস্থাতেই বাবা-মার শরীর থেকে আক্রান্ত জিনটি সন্তানের দেহে যেতে পারে। এইচবি ইলেক্ট্রোফোরেসিস বা এইচবি এটু নামে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া চিহ্নিত করা সম্ভব।
সিআইএমএস হাসপাতালের হেমাটো-অঙ্কোলজিস্ট ডঃ দীপা ত্রিবেদী জানালেন, "যদি বাবা-মা দু'জনেই একটি মিউটেটেড থ্যালাসেমিয়া জিনের বাহক হন, তবে সন্তান দু'টি জিনই পাবে, সেই সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে সন্তান থ্যালাসেমিয়া মেজর-এ আক্রান্ত হবে। ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা যে সে স্বাভাবিক জিন পাবে, এবং থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবে না। অন্য দিকে, ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকবে যে সে একটি থ্যালাসেমিয়া জিন বহন করবে।" ডঃ ত্রিবেদী থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভারতে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা চার কোটি। প্রতি বছর ১০,০০০-এর কাছাকাছি শিশু জন্মায় যারা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এই শিশুগুলি রক্তাল্পতায় ভোগে, কারণ তাদের শরীরে কম হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়। তারা সব সময়ই ক্লান্ত বোধ করে। বহু শিশুকেই নিয়মিত রক্ত দিতে হয় ও চেলাশন থেরাপি করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানিয়েছে যে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত যত মানুষের রক্ত প্রয়োজন, তার মাত্র ১৫ শতাংশই সেই রক্তের ব্যবস্থা করে উঠতে পারেন।
নিয়মিত রক্ত দেওয়ার ফলে শরীরে আয়রন ও ফেরিটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। চেলাশন থেরাপির মাধ্যমে সেই বাড়তি আয়রন ও ফেরিটিন শরীর থেকে দূর করা হয়। রোগীদের এমন কিছু ওষুধ দেওয়া হয়, যা শরীরে জমা আয়রনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তাকে ভেঙে ফেলে ও শরীর থেকে বার করে দেয়। ডক্টর ত্রিবেদীর মতে, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মাত্র ৩৯ শতাংশ যথাযথ চেলাশন থেরাপি পান।
নিয়মিত রক্ত দেওয়া ও চেলাশন থেরাপির ফলে শরীরে ক্লান্তি বাড়ে, বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমতে থাকে। একমাত্র অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেই পাকাপাকি ভাবে থ্যালাসেমিয়ার নিরাময় সম্ভব। কারণ, অস্থিমজ্জায় অক্সিজেন-সমৃদ্ধ নতুন হিমোগ্লোবিন কোষ তৈরি হয়। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের আগে অভিজিতকে প্রায় আশি বার রক্ত দেওয়া হয়েছিল। তবে, ভারতে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের খরচ পনেরো লক্ষ টাকার মতো। সিআইএমএস-এর সঙ্কল্প ফাউন্ডেশনের সহায়তায় অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য সোলাঙ্কি পরিবারের খরচ হয় নয় লক্ষ টাকা। আরও নয় লক্ষ টাকা খরচ হয় ভ্রূণ নির্বাচন ও কৃত্রিম গর্ভধারণের প্রক্রিয়ায়।
আরও পড়ুন: টিআরপি রেটিং কি আর কীভাবে তা কারচুপি করা যায়?
মোনোজেনিক ডিজিজের ক্ষেত্রে ত্রাতা সহোদর ও প্রি-ইমপ্পিমেন্টেশন জেনেটিক টেস্টিং
ডঃ ব্যাঙ্কার জানালেন, "তিন দফা ওভারিয়ান সিমুলেশনের মাধ্যমে আমরা মোট ১৮টি ব্লাস্টোসিস্ট নির্বাচন করি, এবং অভিজিতের জেনেটিক মেক-আপের সঙ্গে মেলাতে সেই ব্লাস্টোটিস্টগুলির বায়াপ্সি করা হয়। হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন টেস্টিংয়ের মাধ্যমে আমরা একটি ভ্রূণের সন্ধান পাই যার ক্রোমোজমের সংখ্যা একেবারে খাপসই ছিল। সেই ভ্রূণটিকে আমরা মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপন করি।"
যে কোনও কোষ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন (এইচএলএ) পরীক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। যে কোষগুলি কোনও একটি দেহের অন্তর্গত, কোষে উপস্থিত এই প্রোটিন মার্কারগুলি সেই কোষগুলিকে চিহ্নিত করতে পারে, এবং সেগুলির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে না। কাজেই, কোনও প্রতিস্থাপনের আগে দেখে নিতে হয়, এইচএলএ টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ কি না, অর্থাৎ যে কোষগুলি প্রতিস্থাপন করা হবে, শরীর তার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করছে কি না। কোষের গ্রাহক ও গ্রহীতার মাদ্যে অন্তত ছ'টি এইচএলএ মার্কার ম্যাচ হওয়া প্রয়োজন। এই মিল পাওয়ার পর, গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তার কর্ড ব্লাড সেল— যাতে প্রচুর পরিমাণে হেমাটোপোইয়েটিক স্টেম সেল থাকে, যা পরবর্তী সময়ে রক্তকোষে পরিণত হয়— তা গ্রাহকের শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হয়।
যে ভ্রূণটির সবক'টি ম্যাচিং মার্কার— ১০/১০— ছিল, সেটিই বাছাই করা হয় ও তা শ্রীমতী সোলাঙ্কির গর্ভে প্রতিস্থাপিত করা হয়। ডক্টর ব্যাঙ্কার আরও জানান, যে ক্ষেত্রে শিশুটি ভবিষ্যতে তার দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত সহোদর বা সহোদরাকে কর্ড ব্লাড বা এইচএসসি দেবে, গর্ভধানের আগে সেই ভ্রূণের জিন-বিশ্লষণ অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া। যে ১৮টি ভ্রূণ নিষ্কাশন করা হয়েছিল, তার মধ্যে আরও দুটি ভ্রুণে থ্যালাসেমিয়া মিউটেশন ছিল না, কিন্তু সেগুলি এইচএলএ ম্যাচিং পর্বে বাতিল হয়ে যায়।
রোগাক্রান্ত শিশু ও তার মা-বাবার প্রথম বার এইচএলএ-টাইপিং হওয়া থেকে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া অবধি প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে এক বছর সময় লাগে। সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়। তার নাড়ির কোষগুলি ক্রায়োপ্রিজার্ভ করা হয়, কারণ সেই মুহূর্তে তা প্রতিস্থাপনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ডঃ ত্রিবেদী জানান, "যেহেতু অস্থিমজ্জা থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল শরীরে গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই আমরা কাব্যের ওজন ১০ কিলোগ্রাম হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। এই মার্চে তা হয়।" প্রতিস্থাপনের পরে কয়েক দিন কাব্যের জ্বর ও ব্যথা ছিল, কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দু'টি শিশুই এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। অভিজিতের শরীরে এই প্রতিস্থাপনের কোনও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
পৃথিবীর প্রথম ত্রাতা সহোদর হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডাম ন্যাশ। ২০০০ সালে তার জন্ম হয়। অ্যাডামের দিদি মলি ফ্যানকোনি অ্যানিমিয়া নামে একটি রোগে আক্রান্ত ছিল। তার শরীরের অস্থিমজ্জা কার্যত কোনও রক্তকোষই উৎপাদন করতে পারত না।
নৈতিক প্রশ্ন
ত্রাতা সহোদরের ধারণাটি নিয়ে নৈতিক আপত্তি প্রবল, তার কারণ হল, যে শিশুটির থেকে এই অস্থিমজ্জা সংগ্রহ করা হয়, গোটা প্রক্রিয়ায় তার মতামত দেওয়ার কোনও অবকাশই নেই। প্রক্রিয়াটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে আইনসম্মত, কিন্তু ফ্রান্স, ইটালি ও জার্মানিতে প্রক্রিয়াটি নিষিদ্ধ। জার্মানির হাইডেলবার্গ ও আল্ম ইউনিভার্সিটির নৈতিকতার অধ্যাপকরা ২০১৯ সালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যাতে এই ত্রাতা সহোদর প্রক্রিয়াটির নৈতিক দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়। শিশুদের শরীরে এইচএসসি-র পরিমাণ বেশি, এবং তাদের অস্থিমজ্জার একটি সামান্য অংশই প্রতিস্থাপনের জন্য নেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা যায়, যত ক্ষণ অবধি দাতা ও গ্রহীতার শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত আছে, তত ক্ষণ অবধি এই প্রতিস্থাপন নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠার কারণ নেই। কিন্তু, সম্মতির প্রশ্নটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। নোভা-র ডঃ ব্যাঙ্কার অবশ্য জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াটি নৈতিক ও আইনসঙ্গত।
নৈতিকতার প্রেক্ষিত থেকে একটি গুরুতর প্রশ্ন ওঠে যে এই ত্রাতা সহোদরকে প্রকৃত প্রস্তাবে একটি পণ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। এর উত্তরে আমেরিকার ন্যাশ দম্পতির উদাহরণ দর্শানো হয়। যাতে সন্তানটি ফ্যানকোনি জিনের বাহক না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তাঁরা তৃতীয় সন্তানের জন্মের সময়ও আইভিএফ পদ্ধতির সাহায্য নেন। এই সন্তানটি কিন্তু ত্রাতা সহোদর নয়।
ব্রিটেনের দুই নৈতিকতার অধ্যাপক ২০০৪ সালে 'শুড সিলেক্টিং সেভিয়ার সিবলিংস বি ব্যানড' নামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা দেখান যে ত্রাতা সহোদরের বিরুদ্ধে যুক্তির পাল্লা ভারী। তাঁরা লেখেন, "সন্তানের যাতে জিনঘটিত সমস্যা না থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য পিজিডি-প্রযুক্তির ব্যবহার বিপুল ভাবে স্বীকৃত, কিন্তু ত্রাতা সহোদরের ধারণাটির বিরোধিতা প্রচুর।"
ব্লুম আইভিএফ-এর ডিরেক্টর ডঃ হৃষিকেশ পাই এই মতামতটির সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। তিনি বললেন, "যেখানে দুটি সন্তানই সুস্থ, এবং মা-বাবা সম্মতি দিয়েছেন, সেখানে বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রাখলে পিজিডিএম অবশ্যই নৈতিক। শিশুটির সজ্ঞান সম্মতি অবশ্যই একটি প্রশ্ন, কিন্তু ভারতীয় আইন অনুসারে যেখানে মা-বাবাই শিশুটির অভিভাবক, সেখানে তাঁদের মতামতই বিবেচ্য। গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণের সঙ্গে এর ফারাক প্রশ্নাতীত। গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ ভারতে আইনত নিষিদ্ধ।" ডক্টর পাই আরও জানান যে ব্লুমের মুম্বই ও দিল্লি কেন্দ্র প্রি-জেনেটিক ডায়গনিস্টিক টেস্ট করা হয়ে থাকে। সংস্থাটি লীলাবতী হাসপাতাল ও ফোর্টিস হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত।
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরি
থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে হয় আজীবন রক্ত দিতে হয়, না হলে এইচএসসিটি অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হয়। ফলে, এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য। ডক্টর ত্রিবেদী মনে করিয়ে দিলেন, প্রত্যেক দম্পতির উচিত সন্তানধারণের আগে থ্যালাসেমিয়ার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া। ডঃ ব্যাঙ্কার আরও বললেন, পরীক্ষা না করানোর ফলাফল মর্মান্তিক হতে পারে। তিনি জানালেন, তাঁরা ন্যাচারাল ডেলিভারির ক্ষেত্রেও ক্রোমোজমের অস্বাভাবিকতা যাচাই করার জন্য জেনেটিক টেস্টিং করতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে কৃত্রিম গর্ভধান ও প্রি-ইমপ্লান্টেশন জেনেটিক ডায়গনিসিস প্রজননের একটি সুবিধাজনক পথ হতে পারে।
তবে, গোটা প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত ব্যায়সাপেক্ষ।
আরও পড়ুন: গুজরাতের তানিশক বিপণির ঘটনা সম্পর্কে এনডিটিভির ভুল রিপোর্ট প্রকাশ