ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে জেএনইউ-র ছাত্রদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকায় সোশাল মিডিয়ায় তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে হেয় করতে রকমারি পোস্ট ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া এই সব পোস্টগুলিকে বুম এক জায়গায় এনেছে।
১) ভুয়ো বিবরণী দিয়ে জেএনইউ ছাত্রীদের ছবি ভাইরাল করা হচ্ছে
প্রতিবাদ আন্দোলনের দু সপ্তাহ হতে চললো। এ সময় হরিয়ানার বিজেপি মুখপাত্র রমন মালিক প্রতিবাদীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরে তাদের ফি কমানোর দাবিকে তুচ্ছতাছিল্য করছেন।
তাঁর টুইটার পোস্টে দুটি ছবি দেখানো হয়েছে: একটিতে একটি মেয়ে এক হাতে মদের বোতল ধরে আছে, অন্যটিতে একটি পোস্টার হাতে আর একটি মেয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।রমনের বক্তব্য—উভয়ে এক এবং অভিন্ন ব্যক্তি।
বুম প্রথম ছবিটির অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, এটি সাধারণভাবে মহিলাদের মদ্যপানের প্রবণতা বোঝাতে নানা সময়ে বিভিন্ন পোস্টে (এখানে এবং এখানে ব্যবহৃত ছবিগুলির একটি)
প্রথম ছবিটি ২০১৫ সালের ২৭ অগস্টের একটি বাংলা ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া, যার শিরোনাম ছিল: মদ্যপান হারাম
ছবির মেয়েটির পরিচয় বুম আলাদাভাবে শনাক্ত করতে পারেনি। তবে দ্বিতীয় ছবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে মেয়েটি যে প্রিয়ঙ্কা ভারতী, তা সে নিজেই তার ১১ নভেম্বর ২০১৯-এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে জানিয়েছে।
বুম প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অন্য ছবিতে মদ্যপানরত মেয়েটি আদৌ তিনি নন এবং সে জেএনইউ-র ছাত্রীও নয়। খামোখা তাকে এ জন্য অনেক অশ্লীল বার্তার শিকার হতে হচ্ছে।
২) সমাজকর্মী অ্যানি রাজার ছবি জেএনইউ-র অধ্যাপকের ছবি বলে শেয়ার হচ্ছে
অ্যাথেয়িস্ট কৃষ্ণা ফ্যান ক্লাব-এর একটি টুইটে নারীর অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মী অ্যানি রাজার ছবি শেয়ার করে দাবি করছে, ইনি জেএনইউ-র প্রথম বর্ষের ছাত্রী, যাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করছে।
ওই টুইটার অ্যাকাউন্টটি দাবি করে দক্ষিণপন্থী ব্যঙ্গরচনাকার অ্যাথেয়িস্ট কৃষ্ণা থেকে অনুপ্রাণিত যার ব্যাঙ্গাত্মক পোস্টগুলি অতীতে ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর সহায়ক হয়েছে এমন নজির আছে।
কিন্তু আমরা নিশ্চিত হয়েছি, ছবিটি অ্যানি রাজার। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বিরুদ্ধে আনা যৌন হেনস্থার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদ জানানোর সময় পুলিশ ২০১৯-এর মে মাসে অ্যানি রাজাকে গ্রেফতার করে।
এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবেদনটি পড়া যাবে এখানে।
৩) লাহোরের ছাত্র প্রতিবাদ জেএনইউ-এর ঘটনা বলে শেয়ার করা হচ্ছে
‘আজাদি’-র স্লোগান দিয়ে ছাত্রদের প্রতিবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন দেওয়া হচ্ছে, “আপনাদের জন্য এই হলো জেএনইউ” (পরে অবশ্য সেই ক্যাপশনটা মুছে দেওয়া হয়)
আমরা দেখেছি, ভিডিওটি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত ফৈজ সাহিত্য উৎসবের ছবি এবং জেএনইউ-র আন্দোলনের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কই নেই। এ সংক্রান্ত আমাদের প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
৪) বিভ্রান্তিকর ভুয়ো পোস্টে জেএনইউ ছাত্রীকে ৪৩ বছর বয়স্কা বলে চালানোর চেষ্টা
জেএনইউ-র প্রতিবাদের জি-নিউজ কৃত প্রতিবেদনের একটি ছবিকে ভুল ব্যাখ্যা করে এক ছাত্রীকে ৪৩ বছর বয়স্কা বলে দাবি করা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে, তার মেয়েও নাকি মায়ের সঙ্গেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।
বুম নিশ্চিত হয়েছে যে ছাত্রীটি ২৩ বছর বয়স্কা সম্ভাবী সিদ্ধির, যে জেএনইউ-র ফরাসি ভাষা-সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তরে পাঠরতা।
এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবেদনটি পড়া যাবে এখানে।
৫) শেহলা রসিদের ফোটোশপ করা ছবি জিইয়ে তোলা হয়েছে
চাঁদের কলা এবং তারা খচিত সবুজ শাড়ি পরা (যা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার সঙ্গে মেলে) জেএনইউ-র ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সহ-সভানেত্রী শেহলা রসিদের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়েছে।
আমরা দেখেছি, মূল ছবিটি আমেরিকার ম্যানহাট্টানে তোলা, যাতে আধফালি চাঁদ কিংবা তারার কোনও নকশা ছিল না, যার অর্থ এই ছবিটি ফোটোশপ করা হয়েছে।
এই সংক্রান্ত আমাদের প্রতিবেদনটিপড়ুন এখানে।