২৩ সেপ্টেম্বর মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জানায়, অম্বলের ওষুধ হিসাবে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এবং প্রেসক্রিপশন সহ ওষুধের দোকান থেকে সুলভ রেনিটিডাইনে এন-নাইট্রোসোডিমেথিলামাইনের (এনডিএমএ) উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।
এর পরে-পরেই ভারতীয় ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল রাজ্যে-রাজ্যে ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে, যেন ওষুধ তৈরির সংস্থাগুলিকে যাচাই করে দেখতে বলা হয়, তাদের তৈরি অম্বলের ওষুধে ওই বিপজ্জনক উপাদান রয়েছে কিনা।
তার পরেই হোয়াট্স্যাপে কিছু বার্তা মারফত আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, এই ওষুধ খেলে ক্যান্সার হবে। বুম-ও তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে (৭৭০০৯০৬৩১১১)এই মর্মে বার্তা পেয়েছে, যাতে ভারতের বাইরে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের লিংকও দেওয়া হয়েছে।
এ দেশের প্রধান ওষুধ নির্মাতা সংস্থা নোভার্তিস (জ্যানটেক), গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিনেট্যাক) এবং ডঃ রেড্ডির ল্যাবরেটরিও তাদের রেনিটিডাইনের বিশ্বব্যাপী বিপণন বন্ধ করে দিয়েছে এবং ওই ওষুধের মজুত ভাণ্ডারও ফেরত চেয়ে পাঠিয়েছে।
রেনিটিডাইন একটি অ্যান্টাসিড যা পাকস্থলীর অম্বল ও ক্ষতকে হ্রাস করে। অধিকাংশ ডাক্তারই এটি প্রেসক্রিপশনে লেখেন এবং ওষুধের দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়াও এগুলি ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়।
রেনিটিডাইনে প্রাপ্য এন-নাইট্রোসোডিমেথিলামাইন লিভারের ক্ষতি করতে পারে এবং রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা হ্রাস করতে পারে। এটি মানুষের শরীরে ক্যান্সারের উপাদান নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ক্যান্সার ঘটায় কিনা, তার বৈজ্ঞানিক কোনও যাচাই এখনও হয়নি।
শুধু রেনিটিডাইনেই নয়, ক্ষতিকর এই উপাদানটি সংরক্ষিত মাংসে, ভাপানো মাছে এবং তামাকের ধোঁয়াতেও থাকে।
নিয়ামকরা কী বলছেন?
এফডিএ জানিয়েছে, তারা খুব সামান্য পরিমাণে এনডিএমএ-র চিহ্ন এই ওষুধটিতে খুঁজে পেয়েছেন এবং মানবশরীরে এর প্রতিক্রিয়া কী, তা এখনও গবেষণা করা হয়নি। প্রাথমিক পরীক্ষায় যে মাত্রায় রেনিটিডাইনে ওই উপাদানটি পাওয়া গেছে, তা অন্যান্য খাদ্যে প্রাপ্ত মাত্রার চেয়ে খুব সামান্যই বেশি।
এফডিএ কিন্তু এই ওষুধটিকে নিষিদ্ধ করেনি। বরং তাঁরা বলেছেন, যেসব রোগী নিয়মিত রেনিটিডাইন সেবন করেন, তারা যেন তাদের ডাক্তারকে বলেন, আপাতত অন্য পথে অম্বলের চিকিত্সা করতে।
অন্যান্য আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এফডিএ জানতে চাইছে, এই ক্ষতিকর উপাদানটির উত্স কোথায়?
সাম্প্রতিককালে এটা ওষুধ কোম্পানিগুলির কাছে দ্বিতীয় ধাক্কা। ওষুধের প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী মূল উপাদান এপিআইএর আগে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ওষুধ ভালসার্টান-এর পাওয়া গিয়েছিল এবং সেই ওষুধটিও ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
ওষুধের গুণমান নির্ধারণের ইউরোপীয় ডিরেক্টরেট (ইডিকিউএম) ইউরোপীয় কমিশনের অনুরোধে রোগীদের উপর ওষুধের প্রয়োগের ঝুঁকির বিষয়টি অনুসন্ধান করছে।
ভারতেও ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল ভিজিসোমানি রাজ্যের ড্রাগ নিয়ামক দফতরগুলিকে ওষুধটা যাচাই করে দেখতে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলির প্রতিক্রিয়া কী?
বুমের তরফে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) এবং রেড্ডিজ ল্যাবরেটরিকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিল।
গ্ল্যাক্সোর মুখপাত্র জানান, “নিয়ামক সংস্থাগুলি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেনিটিডাইনে এনডিএমএ-র উপস্থিতির কথা বলেছিল। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আমরা রেনিটিডাইনের সব ধরনের ডোজের ওষুধের বিপণন, মজুত আপাতত বন্ধ করার এবং বাজার থেকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সাবধানতার জন্যই এটা করা হয়, যতদিন না আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার ফল প্রকাশিত হচ্ছে।”
ডঃ রেড্ডিজ ল্যাবরেটরি অবশ্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং তাদের ওষুধে এনডিএমএ-র মাত্রা নিয়ে নিজেরা পরীক্ষা চালাচ্ছে।
ভারতে প্রভাব
আইওসিডি ফার্মাট্র্যাক-এর হিসাব অনুযায়ী ভারতে রেনিটিডাইনের বাজার রয়েছে ৬৮৮.৬ কোটি টাকার।
এআইওসিডি ফার্মাট্র্যাক ভারতে ওষুধের বাজার এবং সেই বাজারে কোন ওষুধের কী চাহিদা, কতটা জোগান, এই সব বিষয় নিয়ে গবেষণা করে এবং ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলিকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে থাকে।
সেই গবেষণা অনুযায়ী ক্যাডিলা কোম্পানির অ্যাসিলক হচ্ছে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত অম্বলের ওষুধ, যার পরেই রয়েছে গ্ল্যাক্সোর জিনট্যাক এবং জেবি কেমিক্যালস-এর রেনট্যাক।