রয়টার্সের (Reuters) চিত্র-সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির (Danish Siddiqui) মৃত্যুর খবর সোশাল মিডিয়ায় বেশ কিছু বার্তার জন্ম দিয়েছে, যেগুলিতে তাঁর প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ঝরে পড়েছে।
তাঁর পরিচিত এবং অনুরাগীরা টুইটারে তাঁর মৃত্যুর সংবাদে শোক প্রকাশ করেছেন। আবার অন্য কিছু ব্যক্তি এই মৃত্যুতে তাঁর কর্মফলের অমোঘতা লক্ষ করেছেন, আর কয়েকটি পোস্ট তো তাঁর এই মৃত্যুতে রীতিমত উল্লাস প্রকাশ করে সঙ্গে তাঁর মৃতদেহের ছবিও জুড়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, সিদ্দিকি তাঁর যে সব সাম্প্রতিক কাজের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও স্বীকৃতি আদায় করে নেন, তার মধ্যে আছে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সংকট, দিল্লির সংখ্যালঘু-বিরোধী দাঙ্গা, অতিমারীর ফলে সৃষ্ট পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা এবং সর্বশেষ কোভিড-১৯-এ মৃতদের সারিবদ্ধ অন্ত্যেষ্টি।
ড্রোনের মারফত তোলা দিল্লির গণ-শ্মশানের শবদাহের চিত্র ভারতের অতিমারি মোকাবিলার দুঃসহ দুর্দিনকে যেমন বিশ্বের সামনে উন্মোচিত করে দেয়, তেমনই অনেক দক্ষিণপন্থী আবার সিদ্দিকির এই সব ফোটোগ্রাফকে "হিন্দু-বিরোধী" বলে নিন্দাও করেন।
আরও পড়ুন: ভারত অন্যতম মোবাইল-কেন্দ্রিক খবরের বাজার: রয়টর্স ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট
বলা হচ্ছে, এই মৃত্যু সিদ্দিকির নিজ কর্মফল ফেসবুক, টুইটার ও হোয়াট্স্যাপে এই মুহূর্তে সিদ্দিকির মৃতদেহের যে ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাকে অনেকেই তাঁর অতিমারিতে মৃতদের গণ-চিতার ছবির পাশাপাশি রেখে তুলনা করছেন।
সিদ্দিকির মৃত্যুর ৫ ঘন্টার মধ্যেই বুম লক্ষ করেছে সোশাল মিডিয়ায় কয়েকশো পোস্টে তাঁর মৃত্যুকে গণ-চিতার ছবি তোলার কর্মফল বলে দাবি করা হচ্ছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র শ্রীরাজ নায়ার 'যেমন কর্ম, তেমনি ফল' শিরোনাম দিয়ে একটি টুইটে লিখলেন, "এইমাত্র খবর পেলাম, তালিবান জঙ্গিরা দানিশ সিদ্দিকিকে হত্যা করেছে, যে-সিদ্দিকি করোনার প্রাদূর্ভাবের সময় গণচিতায় শবদাহের ড্রোন-মারফত তোলা ছবি পশ্চিমী গণমাধ্যমকে বিক্রি করে বহু টাকা রোজগার করেছে। তাঁর নিজেরই শবদেহের ছবি এখন ইন্টারনেটে ঘুরছে।"
ওই টুইটেই শ্রীনায়ার সিদ্দিকির তোলা গণ-চিতার ছবির পাশাপাশি সিদ্দিকির শবদেহের ছবিও জুড়ে দেন।
নায়ারের টুইটের আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন। (সতর্কবার্তা: আর্কাইভ করা টুইটে একটি মৃতদেহের ছবি রয়েছে)
দক্ষিণপন্থী সংবাদ-মাধ্যম ক্রিয়েটলি সিদ্দিকির তোলা বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেছে, "আমরা আশা করবো এবং প্রার্থনা করবো, তাঁর নিজের মৃতদেহের সৎকারের সময় কেউ সেখান দিয়ে ড্রোন উড়িয়ে সেই ছবি তুলবে না এবং তাঁর পরিবারকে একান্তে শোক পালন করার সুযোগ দেবে! তিনি অবশ্য হিন্দু পরিবারগুলিকে নিভৃতে তাদের প্রিয়জনের অন্ত্যেষ্টি যাপনের সুযোগ দেননি, বরং তার ছবি তুলে বিক্রি করে মুনাফা করেছিলেন!"
এই টুইটটির আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ক্রাইটলি-র ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদনও প্রকাশ পেয়েছে, যাতে লেখা— যে সাংবাদিক নিজের স্বার্থপর উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে শবদেহকে ব্যবহার করেছিল, সে আফগানিস্তানে নিহত হয়েছে। তাতে সিদ্দিকির তোলা আলোকচিত্রগুলির নিন্দা করা হয়েছে এবং তাঁর নিজের পড়ে থাকা শবের ছবি প্রকাশকেও সমর্থন করা হয়েছে।
শেফালি বৈদ্য নামের এক দক্ষিণপন্থী টুইটার ব্যবহারকারী তাঁর টুইটে লিখেছেন, "এই দানিশ সিদ্দিকিই কি সেই ব্যক্তি, যে কোভিড-এর মারণ কালে গণচিতার ছবি বিক্রি করে মুনাফা করছিল!"
এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সিদ্দিকির মৃত্যুতে শোকবার্তা জ্ঞাপন করায় তাঁর পোস্টকে ট্রোল করাও হয়। অবসরপ্রাপ্ত মেজর নীলম সিং (যিনি স্কিন ডক্টর নামে একটি দক্ষিণপন্থী টুইটার হ্যান্ডেল চালান)সিদ্দিকির মৃত্যুতে শোক করার জন্য মন্ত্রীকে ভর্তসনাও করেন, "ঠাকুর সাব! আপনি বামপন্থীদের সুনজরে আসতে চাইছেন বলে মনে হচ্ছে! আপনার নিজের দলের যেসব কার্যকর্তা পশ্চিমবঙ্গে নিহত হচ্ছেন, তাদের কারও জন্যে আপনাদের একটাও টুইট নেই! সত্যি! আপনারা কামাল করে দিচ্ছেন!"
সিদ্দিকির প্রতি সংহতি
সোশাল মিডিয়ায় দক্ষিণপন্থীদের তরফে তাঁর বিরুদ্ধে এই বিষোদ্গার সত্ত্বেও দানিশ সিদ্দিকির অনবদ্য চিত্র-সাংবাদিকতার প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানিয়ে এবং তাঁর নিন্দুকদের প্রতি ধিক্কার জ্ঞাপন করেও অনেকে টুইট করে চলেছেন।
যারা সিদ্দিকির মৃত্যুতে আনন্দ প্রকাশ করেছে, তাদের ধিক্কার জানিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা টুইট করেছেন— "আফগানিস্তানে তাঁর কর্তব্য পালন করতে গিয়ে তালিবানদের হাতে দানিশ সিদ্দিকির মৃত্যু দুঃখজনক l কিন্তু তিনি নিজের পেশাগত কাজ করতে নিহত হওয়ায় যে বেজন্মারা উল্লাস প্রকাশ করছে, তারা ক্ষমারও অযোগ্য!"
সাংবাদিক বরখা দত্ত একটি টুইট উদ্ধৃত করেছেন, যাতে সিদ্দিকির মৃত্যু নিয়ে তামাশা করে আফগানিস্তানে বরখাকে সিদ্দিকির স্থলাভিষিক্ত করার বিদ্রূপ করা হয়েছে।
সাংবাদিক আদিত্য মেননও একটি টুইটে সেই সব টুইটের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন, যারা সিদ্দিকির মৃত্যুতে হর্ষোল্লাস করেছে।
পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী চিত্র-সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি আফগানিস্তানের কান্দাহারে সরকারি সেনাবাহিনী বনাম তালিবান জঙ্গিদের লড়াইয়ের খবর করতে গিয়ে নিহত হন।
তার আগে ১৩ জুলাই একটি টুইটে তিনি কান্দাহারে যুযুধান দুই পক্ষের লড়াইয়ের বেশ কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও-ও পোস্ট করেছিলেন।
আরও পড়ুন: নয়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ৪২ শতাংশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে: এডিআর