সাইখম মীরাবাই চানু (Saikhom Mirabai Chanu) ভারতের হয়ে টোকিও অলিম্পিকে (Tokyo Olympic 2020) প্রথম পদকটি জেতে ৪৯ কিলোগ্রাম ওজনের মহিলাদের ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায়। ভারতের সর্বত্র চানুর এই কৃতিত্বের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু চানুর সাফল্যের কয়েক দিন পরেই ভারতীয় মিডিয়া প্রচার করতে থাকে যে, স্বর্ণপদক জয়ী চিনা ভারোত্তোলক ঝৌ হৌ-কে (Hou Zhihui) ডোপ-বিরোধী সংস্থা (anti-doping) পরীক্ষার জন্য প্রতিযোগিতার পরেও থেকে যেতে বলেছে। সেই সঙ্গে এটাও প্রচার করা হয় যে, হোউ-ঝি যদি ডোপ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়, তাহলে স্বর্ণপদক ভারতের চানুর গলাতেই ঝুলতে চলেছে।
২৬ জুলাই সংবাদসংস্থা এএনআই একটি অনামী সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায়, ঝৌ হৌ-কে অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ জাপানেই থেকে যেতে বলেছে এবং নিশ্চিতভাবেই তাঁর ডোপ পরীক্ষা করা হবে। প্রতিবেদনটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এএনআই-এর প্রতিবেদনটি অন্য অনেক সংবাদ-সংস্থাই উদ্ধৃত করে, যেমন ইকনমিক টাইমস, মানিকন্ট্রোল, টাইমস নাউ, এবিপি নিউজ ও ইন্ডিয়া টিভি।
বেশ কয়েকটি ইন্দোনেশীয় ওয়েবসাইটও এএনআই-কে উদ্ধৃত করে চিনা অ্যাথলিটের ডোপ টেস্টের খবরটি চাউর করে দেয়। ইন্দোনেশিয়ার ভারোত্তোলক উইন্ডি কন্টিকা আইশা যেহেতু এই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক পায়, তাই ডোপ টেস্টে স্বর্ণপদকজয়ী চিনা অ্যাথলিট ব্যর্থ হলে তার এক ধাপ উঠে রৌপ্য পদক পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ৩০ জুলাই এএনআই স্পষ্ট করে জানায় যে, স্বর্ণপদক ঝৌ হৌ-এর দখলেই থাকছে এবং চিনা অ্যাথলিটের কোনও ডোপ পরীক্ষাও হয়নি, ওটা একটা ভুল খবর ছিল, ইত্যাদি। কিন্তু এএনআই কিংবা তাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদন তৈরি করা অন্য ওয়েবসাইটগুলো কেউই প্রতিবেদনগুলো প্রত্যাহার করে নেয়নি কিংবা তাদের সম্পাদকরা কোনও ভুল স্বীকার করে বিজ্ঞপ্তি দেননি।
ইন্ডিয়া টুডে-ও খবরটি রিপোর্ট করে এবং ক্রীড়া-সাংবাদিক বোরিয়া মজুমদার লেখেন যে, হোউ-ঝি-হুই-এর মূত্রের নমুনা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্য বিশ্লেষণে পাঠানো হয়েছে।
তবে ইন্ডিয়া টুডে অন্তত এটুকু জানায় যে, বিশ্লেষণের জন্য নমুনা পাঠানো মানেই ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া নয়।
এই পরীক্ষাটির অর্থ হলো অ্যাথলিটের সংগৃহীত নমুনায় কোনও নিষিদ্ধ বস্তুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া। তার অর্থ এই নয় যে ওই অ্যাথলিট ডোপ করেছে।
বিশ্ব ডোপিং-বিরোধী সমিতির নীতিনির্দেশ অনুসারে এ ধরনের সামগ্রী অ্যাথলিটের নমুনায় পাওয়া গেলে তাকে ডোপিং-এর দায়ে নিষিদ্ধ করা হবে না যদি
১. কোনও অ্যাথলিট তার বিশেষ অসুখ সারাতে ওই সামগ্রী সেবন করে থাকে
২. নমুনা পরীক্ষার মান স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মান অনুসারে না হয় কিংবা আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগারে না করা হয়ে থাকে
৩. যদি অনুমতি-সাপেক্ষে ওই সামগ্রী অ্যাথলিটের দেহে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে
টোকিও অলিম্পিকে ডোপিং পরীক্ষার ভারপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক টেস্টিং এজেন্সি-র সঙ্গেও বুম যোগাযোগ করেছেl সংস্থার মুখপাত্র বুম-কে জানান, "এজেন্সি ডোপিং-বিরোধী বিধি লঙ্ঘনের প্রতিটি দৃষ্টান্ত কোনও লুকোছাপা না করে তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে খোলাখুলি প্রকাশ করে থাকে। আমরা নিজেরা অন্যদের কোনও নেতিবাচক মন্তব্য শেয়ার করি না, যতক্ষণ না নিজেরা কোনও বিধি-লঙ্ঘনের বিষয়ে বিবৃতি দিচ্ছি। এবং আপনারা যে অ্যাথলিটের বিষয় উল্লেখ করছেন, তাঁকে নিয়ে কোনও বিবৃতি আমরা দিইনি।"
এজেন্সির এই নীতি অনুসারেই ৩১ জুলাই কেনিয়ার দৌড়বীর মার্ক ওধিয়াম্বোর নমুনা পরীক্ষায় নিষিদ্ধ সামগ্রী ধরা পড়ার খবর বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।
তবে ডোপিং-বিরোধী বিধি ভঙ্গের প্রমাণ পেতে ঝৌ হৌ-এর কোনও নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, না হয়নি, তার কোনওটাই টেস্টিং এজেন্সি খোলসা করে জানায়নি।