সোশাল মিডিয়ায় ইতালির এক পরাবাস্তব শিল্পীর সিলিকন (silicon sculpture) ভাস্কর্যের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে বিহারের (Bihar) দ্বারভাঙা জেলার শিবপুর নামের এক গ্রামে আকাশ থেকে পড়ল অদ্ভূত এক প্রাণী। ইয়াস সাইক্লোনের (Darbhanga Yaas) পরেই নাকি দেখা মেলে ওই বিরল দর্শন প্রাণীর। নাসার (NASA) প্রতিনিধিরা নাকি পর্যবেক্ষণ করেছেন ওই প্রাণীকে!
বুমের তরফে বিহার রাজ্যের বনবিভাগের মুখ্য সংরক্ষক শ্রী আশুতোষের সঙ্গে কথা বললে তিনি এই ধরণের কোনও খবর শোনেননি বলে বুমকে জানান। বুম বিষয়টি নিয়ে কোনও গণমাধ্যমেই প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি।
ফেসবুকে "কেবিসি নিউজ কাটিহার" নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ওই দাবি সহ ভুয়ো খবরটি প্রচার করা হচ্ছে। ৪ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে অদ্ভূত দর্শন এক চতুস্পদী প্রাণীর ছবি ও ভিডিও দেখানো হয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির হিন্দিতে বলা বক্তব্যের সারমর্ম হল, ''নাসা বলেছে এটি পৃথিবীর পক্ষে অশনি সংকেত। বিহার দ্বারভাঙা জেলায় সাইক্লোন ইয়াসের পর এই প্রাণীর হদিস মিলল। আকাশ থেকে পড়ার ফলে কিছুটা আধমরা অবস্থায় রয়েছে সেটি। এটি চোখ মানুষের মত। পা চতুস্পদী জানোয়ার মতো। দ্বারভাঙার শিবপুর গ্রামে দেখা যায়। লোকজনকে দেখে লুকিয়ে যাচ্ছিল। সাইক্লোন ইয়াসের এই প্রাণী দেখার পর মানুষজনের মধ্য আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা ইসরোকে জানান। ইসরো নাসাকে খবর দেয়। এক সপ্তাহ ধরে ইসরোর বিজ্ঞানীরা ভারতে রয়েছেন। নাসার বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছেন মানুষ, পক্ষী ও প্রাণীর ডিএনএ মিলে তৈরি হয়েছে এই প্রাণী। ভিডিওর শেষে অবশ্য বলা হয় ভাইরাল ভিডিওটি কেবিসি নিউজ যাচাই করেনি।''
ভিডিওটির ক্যাপশন লেখা হয়, "দ্বারভাঙায় আকাশ থেকে পড়ল ভীতিপ্রদানকারী প্রাণী। নাসা বলেছে খরাপের সঙ্কেত।"
(মূল হিন্দিতে ক্যাপশন: दरभंगा में आसमान से गिरा खौफनाक प्राणी | NASA ने बताया खतरे का संकेत)
ভিডিওটি দেখা যাবে এখানে ও এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে ও এখানে।
তথ্য যাচাই
ভাইরাল হওয়া কাল্পনিক প্রাণীর ছবিটি আসলে ইতালির এক পরাবাস্তব সিলিকন ভাস্কর্য শিল্পী লাইরা মাগানুকোর সৃষ্টি।
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভাইরালব্যান্ডিত নামে একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনের হদিস পায়। ওই প্রতিবেদনে ছবিটিকে লাইরা মাগানুকোর সিলিকন ভাস্কর্য বলা হয়েছে। ইতালির পরাবাস্তব সিলিকন ভাস্কর্য শিল্পী লাইরা মাগানুকোর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে এই রকম নানা ভাস্কর্যের হদিস মেলে।
২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর ফেসবুকে ওই সিলিকল ভাস্কর্যের ছবি আপলোড করেছিলেন লাইরা মাগানুকো। সেখানে একটি ভিডিও ছিল। সেগুলিই ব্যবহার করা হয়েছে ওই ভুয়ো খবরের ভিডিওতে।
তিনি ওই ফেসবুক পোস্টে ক্যাপশন লেখেন, "এক পিস সিলিকন আর্মাডিলে হাইব্রিড" (মূল ক্যাপশন: "single piece silicone armadillo hybrid.")
এই একই ছবি পুরুলিয়ার অযোধ্যপাহাড়ে পাওয়া বিরল প্রাণী বলে ভাইরাল হয়েছিল বুম ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম বিষয়টির তথ্য-যাচাই করে। লাইরা মাগানুকোর সিলিকন ভাস্কর্য আগে মানুষ-শূকর সংকর বলে ভাইরাল হয়েছিল বুম সেই ছবিও তথ্য-যাচাই করে।
আরও পড়ুন: মানেকা গাঁধী নয়, বিজেপিকে তুলোধনার এই ভিডিওটি এক কংগ্রেস নেত্রীর