জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) (JNU) ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-ছাত্রী ও বাম রাজনীতিক ঐশী ঘোষের (Aishe Ghosh) একটি ফোটোশপ করা ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে তাঁর মাথার আঘাত (Fake injury) লাগার কোনও চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা হামলা করে, ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়। তৎকালীন জেএনইউ ছাত্র পরিষদের সভাপতি ঐশী ঘোষ সে ঘটনায় গুরুতর আহত হন। মাথার সামনের অংশে কপালের উপরে সেলাই দিতে হয় ঐশীর। বাম হাতেও চোট লাগে তাঁর। ছবিটি এই প্রেক্ষিতে ছড়ানো হচ্ছে।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে ঐশী ঘোষ-কে কটাক্ষ করে তাঁর হাতে ধরা পোস্টারে কুরুচিপূর্ণ শব্দপ্রয়োগে লেখা রয়েছে, "আমার কপালে পনেরোটা সেলাইয়ের দাগ ছিল। লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারতাম না। তারপর একদিন সুজনদা আমাকে হাইড্রোক্সিকুইনোলিন ব্যবহার করতে বললেন। একবার ব্যবহারেই আমার কপালের সব দাগ চলে গেছে। কমঃ ঐশী ঘোষ।" (ভাষা সম্পাদিত)
ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "দুই বছর আগের সেই স্মৃতি"
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: ভুয়ো পীর বাবার কেরামতি ফাঁসের ভিডিও পাকিস্তানের, ভারতের নয়
তথ্য যাচাই
মূল পোস্টারের বিকৃতি
বুম রিভার্স সার্চ করে ঐশী ঘোষের মূল ছবিটি খুঁজে পায়। ২৫ এপ্রিল ২০২০ ছবিটি ঐশী ঘোষ তাঁর নিজস্ব টুইটার প্রোফাইল থেকে টুইট করে ক্যাপশন লেখেন, "শার্জিল থেকে উমর সফুরা থেকে মাসারত! ইউএপিও নিপাত যাক! #ফাইটকরোনানটঅ্যাক্টিভিস্টস্"
আসল ছবিটিতে একই লেখা সহ পোস্টার ধরে থাকতে দেখা যায় ঐশীকে। ছবিটি টুইট করে তিনি জেএনইউ ছাত্র সংসদের অ্যাকাউন্টকে ট্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, শার্জিল ইমাম, উমর খালিদ ও সফুরা জার্গার ছাত্রনেতা ও সংখ্যালঘু অধিকারকর্মী তাদের মধ্যে প্রথম দুই ব্যক্তি জেলবন্দী ও তৃতীয় ব্যক্তির নামে আদালতে বিধারাধীন মামলা রয়েছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে।
মাসরাত জাহরা কাশ্মীরের ফোটোগ্রাফার 'দেশ বিরোধী' ফেসবুক পোস্টের জন্য ইউএপিএ আইনে পুলিশ তাঁর নামেও কেস দায়ের করে। সমাজকর্মীদের একাংশের অভিযোগ ২০১৯ সালে সংশোধিত ইউএপিএ বিরোধীদের কন্ঠরোধ করতে যথেচ্ছভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ঐশী ঘোষের কপালের আঘাত সত্যি
ঐশী ঘোষের মাথার চোট সাজানো এই ভুয়ো দাবি বুম আগেও খণ্ডন করেছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বুম ঐশী ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাঁর মাথার চোটের ছবি বুমকে পাঠান। সেখানে স্পষ্টভাবে ঐশী ঘোষের মাথার চোটের দাগ দেখা যায়।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বর্তমান ছবিটি অপ্রতুল আলোতে তোলা হলেও বড় করে দেখলে ঔশীর মাথায় সেলাইয়ের দাগ লক্ষ্য করা যায়।
বুম আগে ঔশী ঘেষের হাতের চোট নিয়েও ভুয়ো দাবি খণ্ডন করেছে। ছবি উল্টে দিয়ে দাবি করা হয় ডানহাতে ভুয়ো চোটের ব্যন্ডেজ বেঁধেছেন তিনি। বুম ঔশী ঘোষের স্প্যানিশ সঙ্গীত গাওয়ার আরেকটি সম্পাদনা করা ভুয়ো দাবিতে ছড়ানো ভিডিও ২০২১ সালে তথ্য-যাচাই করেছে।