হুইলচেয়ারের সামনে হাঁটতে (walking) দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) এরকম একটি নকল (Morphed Image) ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দাবি করা হয়েছে তিনি ভোটারদের সমবেদনা পাওয়ার জন্য পায়ে চোট লাগার নাটক করছেন।
ছবিতে তৃণমূল কংগ্রেস দলের কর্মী-সদস্যদের অনেকের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমকে হুইলচেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আর তাঁদের সামনে দলের সর্বোচ্চ নেত্রীকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে যে, আসল ছবিটিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুইলচেয়ারে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী হাঁটছেন এমন একটি ছবি থেকে তাঁর ছবিটি কেটে নিয়ে এই ছবিটিতে বসানো হয়েছে। পায়ে চোট লাগার পর মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বর্তমান ছবিটি তোলা হয়।
নকল ছবিটি সোশাল মিডিয়ায় ঘুরছে এই দাবির সঙ্গে ছাড়ানো হচ্ছে যে, মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে পায়ে চোট লাগার অভিনয় করছেন।
১০ মার্চ ২০২১ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে আহত হন। তিনি দাবি করেন, কিছু লোক তাঁকে ধাক্কা দেয় এবং তাঁর পায়ের ওপর গাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আরও দাবি করেন যে, সেই সময় তাঁর আশেপাশে কোনও পুলিশ ছিল না। পরের দিন এই চোট প্রসঙ্গে কথা বলার সময় অবশ্য মমতা এই ঘটনাকে আক্রমণ বা হামলা বলেননি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ঘটনাস্থলের দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার প্রবীণ প্রকাশকে সাসপেন্ড করেছে এবং জেলাশাসক বিভু গোয়েলকে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কহীন কোনও পদে বদলি করার নির্দেশ দিয়েছে। কমিশন এই ঘটনাকে নিরাপত্তারক্ষায় বড় মাপের গাফিলতি আখ্যা দেয়। ১৪ মার্চ কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নন্দীগ্রাম দিবসের মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। চোট লাগার পর তিনি এই প্রথম জনসমক্ষে এলেন।
আরও পড়ুন: নন্দীগ্রাম দিবস কী? পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ কেন?
ফেসবুকে ছবিটির ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "আর কত নাটক করবেন মাননীয়া? সাধারণ মানুষের সামনে পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে হাজির হচ্ছেন, আর যেই কালীঘাটের টালির চালের নিচে এসে গাড়ি দাঁড়াচ্ছে তখনই গাড়ি থেকে নেমে কিতকিত খেলতে খেলতে ঘরে ঢুকে পড়ছেন। সাধারণ মানুষ খুব বোকা নয় মাননীয়া।"
হিন্দি ক্যাপশন সহও ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
টুইটারে এক জন এই ছবির ক্যাপশন লিখেছেন, "প্লাস্টার থেকে ব্যান্ডেজ হয়ে হাঁটা। অসাধারণ অভিনেত্রী!!!"
আরও পড়ুন: লকডাউনে রেলযাত্রীদের জলপান করিয়েছে উত্তরপ্রদেশের নিগৃহীত মুসলিম বালক?
তথ্য যাচাই
অ্যাথেইস্ট কৃষ্ণ নামে একটি টুইটার হ্যান্ডল থেকে ছবিটি প্রথম টুইট করা হয়। সেখানে ব্যঙ্গাত্মক ক্যাপশনে লেখা হয়, "এক জন ভাল ফটোশপ করার কেউ থাকলে দিদি এতক্ষণে ঠিক হয়ে যেতেন।" এই টুইটার হ্যান্ডলটি ফটোশপ করা বিভিন্ন ছবি টুইট করা হয়ে থাকে। সেই ছবিগুলি দক্ষিণপন্থী নেটিজেনদের মধ্যে জনপ্রিয়ও হয়। তাঁরা ছবিগুলিকে সত্যি ভেবে বসেন।
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে যে, এই ভাইরাল ছবিটি দুটি অসম্পর্কিত ছবি জুড়ে তৈরি করা হয়েছে।
আমরা এই ভাইরাল ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ১২ মার্চ ২০২১ তারিখের একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান পাই, যেখানে আসল ছবিটি ছাপা হয়েছিল। প্রতিবেদনে প্রকাশিত বর্ণনা অনুযায়ী, ১২ মার্চ তারিখে মুখ্যমন্ত্রীকে যখন এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়, এই ছবিটি তখন তোলা। হিন্দুস্তান টাইমস জানায় এই ছবিটি সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর তোলা। একই সময়ের একটি ভিডিও দেখা যাবে এখানে।
মুখ্যমন্ত্রী হাঁটছেন, এই ভঙ্গিমার ছবিটি ২০১২ সালের। সেটি ২০১২ সালে গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
নিচে দুটি ছবির তুলনা করা হয়েছে। নকল ছবিটিতে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে শাড়ির পাড়ের রঙ পাল্টে দেওয়া হয়েছে।