লকডাউনের সময় দেশের মধ্যে বা আন্তর্জাতিক বিমানে সফর করার জন্য যে যাত্রীরা টিকিট কেটেছিলেন, তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। কারণ, এই টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন বা ডিজিসিএ যে সুপারিশগুলি করেছিল, আজ সুপ্রিম কোর্ট তার সবক'টাই গ্রহণ করেছে।
প্রবাসী লিগাল সেল নামক একটি সংগঠনের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট এই রায়টি দিয়েছে। সংগঠনটি দেশের শীর্ষ আদালতে মামলা করে জানিয়েছিল, বিমান সংস্থাগুলি যদি টিকিটের টাকা ফেরত না দেয়, তবে "তা নিয়মবিরুদ্ধ কাজ হবে, এবং ডিজিসিএ-র জারি করা সিভিল অ্যাভিয়েশন রিকোয়্যারমেন্ট বা সিএআর-এরও পরিপন্থী হবে।"
সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপরতির বেঞ্জ এই সুপারিশগুলি গ্রহণ করেছেন এবং যে যাত্রীরা এই সময়ে (২৫ মার্চ ২০২০-২৪ মে ২০২০)-র মধ্যে সফর করার জন্য বিমানের টিকিট কেটেছিলেন, তাঁদের জন্য নির্দেশিকা ঘোষণা করেছেন।
১. কোনও যাত্রী যদি লকডাউনের সময়ে কোনও অন্তর্দেশীয় বা আন্তর্জাতিক বিমানে সফর করার জন্য টিকিট কেটে থাকেন, এবং সফরটিও যদি এই সময়কালের মধ্যেই থাকে, তা হলে সেই যাত্রী টিকিটের সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পেতে পারেন। তাঁর থেকে বিমানসংস্থা ক্যানসেলেশন ফি বাবদ কোনও টাকা কাটতে পারবে না।
২. লকডাউন চলাকালীন কোনও যাত্রী যদি কোনও এজেন্টের মাধ্যমে টিকিট কেটে থাকেন, তা হলেও তিনি সম্পূর্ণ টাকাই ফেরত পাবেন। বিমানসংস্থা এজেন্টকে টাকা ফেরত দেবে, এবং তিনি যাত্রীকে টাকা ফেরত দেবেন।
৩. যাত্রী যবেই টিকিট কেটে থাকুন না কেন, তাঁর যাত্রার নির্দিষ্ট দিনটি যদি ২৪ মে-র পরে হয়, তবে তিনি কী পরিমাণ টাকা ফেরত পাবেন, তা স্থির করা হবে সিএআর-এর নির্দেশিকা অনুসারে।
৪. কোনও যাত্রী যদি কোনও ভারতীয় বিমানসংস্থায় আন্তর্জাতিক উড়ানের জন্য টিকিট কেটে থাকেন, এবং যাত্রাটি যদি ভারত থেকে শুরু হয়, তবে বিমানসংস্থাটিকে অবিলম্বে সেই টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হবে।
৫. যদি কেউ কোনও আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থায় বিদেশভ্রমণের জন্য টিকিট কেটে থাকেন, এবং যদি সেই উড়ানের তারিখ ভারতে লকডাউনের সময়কালের মধ্যে পড়ে, এমন ক্ষেত্রে সেই টিকিট যদি কোনও এজেন্টের মাধ্যমে কেনা হয়ে থাকে, তা হলে বিমানসংস্থাটিকে অবিলম্বে এজেন্টকে সেই টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে, এবং এজেন্ট টাকা ফিরিয়ে দেবেন সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে। অন্য ক্ষেত্রে, বিমানসংস্থাকে তিন সপ্তাহের মধ্যে যাত্রীর থেকে নেওয়া টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে।
৬. অন্য সব ক্ষেত্রে বিমানসংস্থাগুলিকে সব রকম চেষ্টা করতে হবে, যাতে আজ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া যায়। আর্থিক সমস্যার কারণে কোনও বিমানসংস্থা যদি টাকা ফেরত দিতে না পারে, তা হলে তাদের যাত্রীদের নামে ক্রেডিট শেল দিতে হবে— যাত্রী সরাসরি টিকিট কেটে থাকলেও, তিনি এজেন্টের মাধ্যমে কেটে থাকলেও— এবং, এই শেলটি যাতে ৩১ মার্চ ২০২১-এর মধ্যে নগদে ভাঙিয়ে নেওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট যাত্রী চাইলে ৩১ মার্চ ২০২১-এর আগে যে কোনও রুটের বিমানযাত্রায় এই ক্রেডিট শেল খরচ করতে পারেন, অথবা তিনি নগদ টাকার বিনিময়ে যে কাউকে এই শেলটি হস্তান্তরও করতে পারেন— যে এজেন্টের থেকে তিনি টিকিট কেটেছিলেন, তাকেও দিতে পারেন— এবং, বিমানসংস্থাকে এই লেলদেনগুলি মেনে নিতে হবে।
৭. যদি কোনও যাত্রী এজেন্টের মাধ্যমে টিকিট কেটে থাকেন, এবং সেই যাত্রীর নামে ক্রেডিট শেল ইস্যু হয়ে থাকে, তা হলে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট এজেন্টের মাধ্যমেই এই ক্রেডিট শেল ব্যবহার করা যাবে। যে ক্ষেত্রে এজেন্টের মাধ্যমে টিকিট কাটা হয়েছিল, এবং যাত্রীর নামে ইস্যু করা ক্রেডিট শেল ৩১ মার্চ ২০২১-এর মধ্যে ব্যবহার করা হয়নি, সে ক্ষেত্রে যে অ্যাকাউন্ট থেকে টিকিট কাটা হয়েছিল, সেখানে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
৮. যখনই ক্রেডিট শেল দেওয়া হবে, সেখানেই ক্যানসেলেশনের তারিখ ৩০ জুন ২০২০ থেকে যাত্রীদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা থাকবে। ২০ জুন ২০২০ থেকে শুরু করে প্রতি মাসের জন্য ক্রেডিট শেলটির ফেসভ্যালু (অর্থাৎ, এই শেলের বিনিময়ে যে টাকা পাওয়া যাবে) ০.৫% করে বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, ৩১ মার্চ ২০২১ তারিখের মধ্যে ক্রেডিট শেলের ফেসভ্যালু বৃদ্ধি পাবে ০.৭৫%।
আরও পড়ুন: ভারতের হিন্দি বলয়ে গণধর্ষণ একটা বড় সমস্যা