Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available

Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available
বিশ্লেষণ

প্রসঙ্গ: ত্রিপুরায় ব্রু-রিয়াং শরণার্থী পুনর্বাসন নিয়ে হিংসার ঘটনা

ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসনের বিরোধিতায় উত্তপ্ত ত্রিপুরা জেলার পানিসাগর। ২১ নভেম্বরের হিংসার বলি দু'জন। কী চাইছে সব পক্ষ?

By - Suhash Bhattacharjee | 25 Nov 2020 6:52 AM GMT

উত্তাল পানিসাগর

রিয়াং শরনার্থীদের শুধু কাঞ্চনপুর মহকুমায় পুর্নবাসন দেওয়া যাবে না—এই দাবিতে চলা জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি (জেএমসি)-র  লাগাতার অন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নেয় ২১ নভেম্বর ২০২০। পানিসাগরে জেএমসির ডাকা জাতীয় সড়ক অবরোধ চলার সময় টিএসআর জওয়ান গুলি ছুঁড়লে এক ব্যক্তি নিহত হয়। পেশায় কাঠমিস্ত্রী দাশদার বাসিন্দা শ্রীকান্ত দাসের (৪৫) বুকে গুলি লাগে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন তাঁকে। 

আন্দোলনকারীদের হামলায় দমকল দফতরের কর্মী বিশ্বজিৎ দেববর্মা গুরুতর আহত হন। আগরতলা জিবি হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতের দিকে মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশের বক্তব্য, অবরোধকারীরা উশৃঙ্খল আচরণ করছিল। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাদের শান্ত করা যায়নি। পরে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করায় গুলি চালাতে বাধ্য হয় নিরাপত্তা বাহিনী। এই ঘটনায় পুলিশ-টিএসআর ও আন্দোলনকারী সহ অন্তত ২৩ জন আহন হন। এদের মধ্যে ১৮ জন শান্তিরক্ষার কাজে যুক্ত ছিলেন। বিস্তারিত পড়ুন এখানে

গুজব ও হিংসায় ইন্ধন

পানিসাগরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা হিংসাত্বক ছবি ও ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছডিয়ে পড়ে। তার সঙ্গে যোগ দেয় বিভিন্ন গুজব ছড়়ায়। মিথ্যে দাবি করা হয় ৫০০ টি গাড়িতে বাংলাদেশীরা এসে পানিসাগরে হিংসা ছড়িয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশের তরফে গুজবে কান না দিতে অনুরোধ করা হয়।

Full View

সোশাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে ব্রু শরনার্থীদের ত্রিপুরার একটি জেলাতেই পুনর্বাসন দেওয়া হবে। ত্রিপুরা সরকারের রাজস্ব এবং তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের পক্ষ থেকে ২৩ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সচেতন করা হয় চুক্তি অনুযায়ী রাজ্যের ৬ টি জেলাতে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে কোনও একটি এলাকায় নয়।

ব্রু বা রিয়াং কারা?

ব্রু বা রিয়াংরা উত্তরপূর্বের রাজ্য অসম, মিজোরাম এবং ত্রিপুরায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আদিবাসী জনজাতি। ত্রিপুরায় ব্রুরা বিশেষ শোচনীয় উপজাতি গোষ্ঠীর (Particularly Vulnerable Tribal Group) অন্তর্গত। রিয়াং শরণার্থীরা ককবরক-এর রিয়াং উপভাষায় কথা বলে যা স্থানীয়ভাবে কাউ ব্রু নামে পরিচিত। কোকবরক তিব্বত-বর্মী পরিবারের ভাষা। রিয়াংরা মিজেোরামের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী।

ব্রুরা মিজোরাম থেকে ত্রিপুরায় এল কীভাবে ?

পশ্চিম মিজোরামে মিজো জনজাতির থেকে ব্রুরা সংখ্যাগুরু হওয়ায় আশির দশক থেকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের আওতায় স্বায়ত্বশাসনাধীন জেলা কাউন্সিলের দাবি করে। ব্রুরা গঠন করে ব্রু ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট। ১৯৯৫ সাল থেকে মিজো যুবকদের সংগঠন, মিজো জারলাই পাওল ব্রুদের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে। তারা দাবি করে ব্রুরা মিজোরামের স্বাভাবিক নাগরিক নয়। রাজ্যে আগন্তুক এই জনজাতিদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। ১৯৯৭ সালে জাতিগত হিংসার শিকার হয়ে অর্ধেক ব্রু জনজাতি ত্রিপুরাতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এর পর রাজ্যে ৭ টি শরনার্থী শিবিরে থাকতে শুরু করে ব্রুরা।

বর্তমানে উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগর (কাসকাওপাড়া, খানচাংপাড়া ও হামসাপাড়া) এবং কাঞ্চনপুর (নাইসিংপাড়া, আশাপারা, হেজাছড়া, নাইসুয়াপাড়া) মহকুমায় অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে রয়েছে ৩২,০০০ ব্রু শরনার্থী। মিজোরামে ব্রুদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে কেন্দ্র, মিজোরাম ও ত্রিপুরা সরকারের মধ্যে মোট আটবার চুক্তি হয়। কিছু ব্রু পরিবার মিজেরামে ফিরে গেলেও বেশিরভাগ শরনার্থী ত্রিপুরায় থেকে যায়।

ব্রু পুনর্বাসন ভাবনা

২০১৮ সালের চুক্তির পর থেকে ত্রিপুরার ব্রু রিয়াং শরণার্থীদের মিজোয়ামে ফিরে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রবল চাপ আসতে থাকে। একাধিকবার ত্রিপুরার ব্রু ক্যাম্প গুলিতে রেশন সামগ্রীর যোগানও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্রু শরণার্থী শিবিরে খাদ্যাভাবে মানুষ মারা যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। অনির্দিষ্টকাল কাঞ্চনপুরে রাস্তা অবরোধের হুমকি দেয়

ত্রিপুরার রাজপরিবারের পারিবারিক কর্তা, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস অধ্যক্ষ প্রদ্যোত বিক্রম দেববর্মন, যিনি বর্তমানে আরেকটি উপজাতিদের রাজনৈতিক মঞ্চ তিপ্রা'র (TIPRA) অধ্যক্ষ, ১৬ নভেম্বর ২০১৯  ব্রু শরণার্থীদের ত্রিপুরাতেই স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে চিঠি লিখেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবও ব্রুদের ত্রিপুরাতে পুনর্বাসন দিতে সম্মতি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেন।

ব্রু পুনর্বাসন প্রকল্প

১৬ জানুয়ারি ২০২০ ব্রু শরণার্থীদের স্থায়ী পুনর্বাসন নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, ত্রিপুরা ও মিজোরামের রাজ্য সরকার এবং ত্রিপুরায় থাকা ব্রু শরণার্থীদের মধ্যে একটি  চারপক্ষের 'ফোর কর্নার' চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী ব্রু শরণার্থীদের মিজোরাম ও ত্রিপুরা দুটি রাজ্যতেই স্বেচ্ছায় স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্পের সুযোগ গ্রহণের কথা বলা হয়। 

কেন্দ্র সরকার পুনর্বাসনের জন্য ৬০০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করে। এই পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ব্রু পরিবারকে ০.০৩ একর জায়গা দেওয়া হবে। ঘর তৈরির জন্য দেওয়া হবে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এককালীন ৪ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে প্রতিটি পরিবারকে। বিনামূল্যে রেশন পাবে প্রতিটি পরিবার। যে সব পরিবার আগে মিজোরাম চলে গেছে তারা ত্রিপুরায় পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে না।

মিজো ব্রু ডিসপ্লেসড পিপলস ফোরামের সাধারন সম্পাদক ব্রুনো মসা বুমকে জানিয়েছেন, "গত দশ মাসে ত্রিপুরায় পুনর্বাসনের জন্য সরকার ৬ টি জেলায় ৩০ টি জায়গা চিহ্নিত করেছ। তারমধ্যে ১৪ টি এলাকা নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় ৩০০ টি পরিবারের পুনর্বাসন দেওয়া হবে।"

"যদিও এই পরিবারগুলির তালিকা এখনও প্রস্তুত করা হয়নি," ব্রুন মসা বুমকে জানান।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্রু পুনর্বাসনে মোট ১৬২ একর জমি প্রয়োজন। তাদেরকে সরকারি জায়গাতে এবং প্রয়োজনে সংরক্ষিত বনভূমি এলাকায় পুনর্বাসন দেওয়া হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি

 ২৮ অক্টোবর ২০২০ উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক বি নাগেশ কুমারের কাঞ্চনপুরে ব্রু পুনর্বাসন নিয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে এলে জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি আন্দোলন শুরু করে। ত্রিপুরার স্থানীয় বাংলা সংবাদপত্র দৈনিক সংবাদে ২৪ নভেম্বর ২০২০ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, উত্তর ত্রিপুরার জেলা শাসকের সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কাঞ্চনপুরে মোট ৫০০০ ব্রু শরণার্থীকে পুনর্বাসন দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হয়।

জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি কাঞ্চনপুরে চালা অনির্দিষ্ট কালের বন্ধকে সাময়িক ভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত দু'দিন ধরে কাঞ্চনপুর মহকুমা প্রশাসনের তরফে সরকারের প্রতিনিধি ও যৌথ মঞ্চের সাথে আলোচনা চলছিল। 

Full View

পানিসাগরে পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর ঘটনায় ত্রিপুরার আইন মন্ত্রী রতনলাল নাথ উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসককে একমাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। 

ব্রু পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছে নাগরিক সুরক্ষা কমিটি ও জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি। সংস্থার আহ্বায়ক সুশান্ত বিকাশ বড়ুয়া বুমকে পানিসাগরের ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন ,"আমাদের এই সহযোদ্ধাকে পুলিশ বিনা প্ররোচনায় লাথি মেরে মাটিতে ফেলে গুলি করে।"  ত্রিপুরা সরকারের প্রতিনিধি মন্ত্রী শান্তনা চাকমা এবং বিধায়ক ভগবান দাস বিক্ষোভকারীদের সাথে পেচারতলে আলোচনায় বসেন। 

সুশান্তর দাবি, "২০০০ সালের পর থেকে এই ব্রুরা কাঞ্চনপুরের দশদা থেকে আনন্দবাজার এই আটটি গ্রামের বাঙালিদের জীবন জীবিকায় নানান ভাবে উত্যক্ত করতে শুরু করে। গবাদি পশু চুরি, পুকুরের মাছ চুরি, ফসল নষ্ট করা ইত্যাদি নানান ভাবে অসুবিধার সৃষ্টি করে এরা। এদের উৎপীড়নে আনন্দ বাজারের মানুষ নানান জায়গায় উদ্বাস্তু হয়ে আছেন। একই ভাবে লালজুড়িতেও নাইসাওপারা ব্রু শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে, তারা পার্শ্ববর্তী বাঙালি ও লুসাই গ্রামে উৎপাত চালিয়েছে।"

২১ নভেম্বর ২০২০ চামটিলায় ৮ নং জাতীয় সড়কে প্ল্যাকার্ড হাতে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির আন্দোলনকারীরা (ছবি প্রতিবেদক)

মিজো ব্রু ডিসপ্লেসড পিপলস ফোরামের সাধারন সম্পাদক ব্রুনো মসা বুমকে জানান, "সরকার যে পুনর্বাসন পরিকল্পনা করেছে সেখানে এক ইঞ্চি জমিও কোনও বাঙালি বা মিজোদের কাছ থেকে নেওয়া হবে না, পুরোটাই হবে সরকারি জমিতে। আন্দোলনকারীরা এক দমকল কর্মীকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে যার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, এই ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক, অনভিপ্রিত।"

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে কাঞ্চনপুরে দাঙ্গা বাঁধে। আনন্দবাজার এলাকায় বাঙালিদের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ গঠিত হয় তখন। ব্রু শরনারর্থীরাও অর্থনৈতিক বয়কটের শিকার হন। বিস্তারিত পড়ুন এখানে। 

"এই ঘটনার পর থেকেই আমরা ব্রুদের কাঞ্চনপুরে স্থায়ী পুনর্বাসনের সম্পূর্ণ বিরোধীতা করতে থাকি" বুমকে বলেন সুশান্ত বিকাশ।

কাঞ্চনপুরে ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসন দেওয়া নিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিআইম স্থানীয় বাঙালী ও মিজোদের স্বার্থের দিক ভাবার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। সিপিআইএম এবং কংগ্রেস দুই দলই রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য আশঙ্কা ব্যাক্ত করেছে। সিপিআইএম বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি ছোঁড়ার নিন্দে করে এবং যৌথ মঞ্চকে আলোচনায় এসে বন্ধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়।

Related Stories