পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ট্রাকে করে লুকিয়ে যাতায়াতের সময় একদল ব্যক্তিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ করার একটি ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, তবলিগি জামাত সদস্যরা এভাবে ভারতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।
ভাইরাল হওয়া ৩০ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার পাশে একটা ট্রাক থামানো হয়েছে। সবুজ রঙের এই ট্রাকের পিছনের অংশ ভিডিওটিতে দেখা যায়। ট্রাকের নম্বর প্লেটটি ঝাপসা। ভিডিওতে খাঁকি পোষাকে মুখে মাক্স পরা একজন পুলিশকে দেখা যায়, যার নির্দেশে নীল কুর্তা পরা একজন লোক এসে ট্রাকের বডির নীচের ডালাটা খুলে দিচ্ছেন। ডালা খোলার পর ট্রাকের ভেতরে কিছু লোককে বসে থাকতে দেখা যায়। লোকগুলির মাথায় ইসলামিক টুপি রয়েছে এবং গায়ে চাদর জড়ানো।
তারপর ট্রাকের ভেতরে বসে থাকা লোকগুলির সাথে ক্যামেরার পেছনে থাকা কারোর উর্দু ভাষায় কথোপকথন শুরু হয়। তারা কোথা থেকে আসছে সেটা জিজ্ঞেস করা হলে ভেতরে বসে থাকা এজকন জানায় তারা মুলতান থেকে আসছে। তখন ক্যামেরার পিছন থেকে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, এই সময় এই ধরনের যাতায়াত নিষেধ, তা সত্ত্বেও তারা কেন একসাথে আঁটসাঁট হয়ে বসে এভাবে যাতায়াত করছে, তারা কি জানে না দেশের পরিস্থিতি এখন কিরকম আছে?
আরও পড়ুন: তবলিগি জামাত সদস্য আইসোলেশান ওয়ার্ডে উলঙ্গ হয়ে ছুটছে, এই ভিডিওটি অসত্য
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টের ক্যাপশনে লেখা আছে, "করোনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার এক বড় ষড়যন্ত্র"
ভিডিওটি নীচে দেখুন।
আরও পড়ুন: মিথ্যা: ভিডিও দেখায় করোনাভাইরাস ছড়াতে মুসলিমরা বাসনকোসন চাটছে
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙ্গে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানতে পারে ভিডিওতে বর্ণিত ঘটনাটি সত্য হলেও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল পোস্টের দাবিটা বিভ্রান্তিকর এবং দূরাভিসন্ধিমূলক।
ভিডিওতে দৃশ্যমান ঘটনাটি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের মটরওয়ের টুল প্লাজার কাছে রেকর্ড করা হয়। এমনকি ভাইরাল হওয়া পোস্টের ভিডিওতেও ২ সেকেন্ড থেকে ১৮ সেকেন্ড পর্যন্ত ট্রাকের ডান দিকে রাস্তার উপরে সবুজ হোর্ডিংয়ের মধ্যে 'ইসালামাবাদ মটরওয়ে প্লাজা' লেখাটা দেখতে পাওয়া যায়।
বুম তথ্য যাচাই করে ভিডিওটির কিছু সুত্র খুঁজে পায়।
বুম টুইটারে পাকিস্তানের একজন সাংবাদিক মুরতাজা সোলাঙ্গির গত ২ এপ্রিলে এই ভিডিও সহ করা একটি টুইট দেখতে পায়। টুইটার বিবরণ অনুযায়ী মুরতাজা সোলাঙ্গি রেডিও পাকিস্তানের পূর্বতন সাধারন নির্দেশক এবং বর্তমানে নয়া দৌর নামে একটি সংবাদ সংস্থার মুখ্য সম্পাদক। তাঁর টুইটে পোস্ট করা ভিডিওটি ৪৬ সেকেন্ডের। ভিডিওতে ৩০ থেকে ৪৬ সেকেন্ড অবধি কথোপকথনে বেরিয়ে আসে ট্রাকের মধ্যে মোট ১৯ জন লোক আছেন।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ লকডাউন ভাঙায় পাকিস্তান পুলিশের দাওয়াইকে ভারতের ঘটনা বলা হল
টুইটটিতে মুরতাজা সোলাঙ্গি লেখেন, "এই ১৯ জন লোক নিজেদের তবলিগি জামাতের লোক বলে পরিচয় দিচ্ছেন এবং এরা মুলতান থেকে ঠেসাঠেসি করে বসে ট্রাকে চড়ে ইসলামাবাদ আসছিলেন ধর্মীয় প্রচারের জন্য। তারা কি নিজেদের এবং অপরের মৃত্যু কামনা করছেন? অবিশ্বাস্য!"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
These 19 people claiming to belong to Tablighi Jamaat came in this truck huddled together to Islamabad from Multan on the preaching mission. Do they have a death wish for themselves and others?
— Murtaza Solangi (@murtazasolangi) April 2, 2020
Unbelievable! pic.twitter.com/uxor9IhjBe
(মূল ইংরেজি ক্যাপশন, "These 19 people claiming to belong to Tablighi Jamaat came in this truck huddled together to Islamabad from Multan on the preaching mission. Do they have a death wish for themselves and others? Unbelievable!")
ইসলামাবাদে ১৯ জন তবলিগি জামাতি অনুসারির আটক হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে নয়া দৌর ওয়েব পোর্টালের নিউজ রিপোর্ট বুম খুঁজে পায়, ৪ এপ্রিল ২০২০ প্রকাশিত হওয়া এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ''ট্রাকে করে ১৯ জন তবলিগি জামাতি ইসলামাবাদে আসার সময় পুলিশের হাতে ধরা পরে''
(ইংরেজিতে মূল শিরোনাম: "Truck Carrying 19 Tableeghi Jamaat Members To Islamabad Caught By Police")
একই ঘটনার বিবরণ সহ 'বলো জাওয়ান' নামের পাকিস্তানের আরেকটি অনলাইন ওয়েব নিউজ পোর্টালের রিপোর্ট পায় বুম। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, ''ভাইরাল ভিডিও! তবলিগি জামাতের ১৯ জন সদস্যকে করোনা লকডাউনের সময়ে ইসলামাবাদে প্রবেশ করার সময় আটক করল পুলিশ''
(ইংরেজিতে মূল শিরোনাম "VIRAL VIDEO! 19 Members Of A Tableeghi Jamaat Were Caught Sneaking Into Islamabad Amid Corona Lockdown")
ভারতের নিজামুদ্দিন মারকেজের মতো পাকিস্তানেও তবলিগি জামাতের অনুসারিরা লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান পালন করেছে এবং সেখানেও অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই কোভিড-১৯-এ সংক্রমিত হয়েছেন। এব্যাপরে বিস্তারিত পড়ুন ডন ও দি নিউজ-এর প্রতিবেদনে।