হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের ২০১৫ সালে আঁকা অবমাননাকর একটি চিত্রের ছবি গত সোমবার অনলাইনে ভাইরাল হল। ছবিটিতে কৃষ্ণের সঙ্গে বিকিনি পরিহিত গোপীদের দেখা যাচ্ছে। ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হল, ছবিটি সাম্প্রতিক। শিল্পীকে গ্রেফতার করার দাবিও জানানো হল। ঘটনা হল, এই ছবিটি আঁকার জন্য শিল্পীকে অসম পুলিশ পাঁচ বছর আগেই গ্রেফতার করেছিল।
গত ১১ অগস্ট ২০২০ তারিখে বেঙ্গালুরুতে একটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত ঘটে। ফেসবুকে একটি পোস্ট হজরত মহম্মদের প্রতি অবমাননাকর, এই দাবি করে স্থানীয় মুসলমানরা হিংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই পাঁচ বছরের পরনো ছবিটি ভাইরাল হল।
অসমের শিল্পী আক্রম হুসেন কৃষ্ণের এই উল্লিখিত ছবিটি এঁকেছিলেন। ছবিটি অসমের স্টেট আর্ট গ্যালারিতে ২০১৫ সালের এপ্রিলে প্রদর্শিতও হয়েছিল। এক মাস পরে, ২০১৫ সালের মে-তে অসম পুলিশ শিল্পী আক্রম হুসেনকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ভগবান কৃষ্ণের অবমাননাকর ছবি আঁকার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।
টুইটারে এই চিত্রটির একটি ছবি শেয়ার করে অরুণ পুদুর নামে এক জন লেখেন, "অসমে বসবাসকারী 'শিল্পী' আক্রম হুসেন ভগবান কৃষ্ণকে বিকিনি পরিহিত মহিলা দ্বারা পরিবেষ্টিত রূপে এঁকেছেন, এবং ছবিটি গুয়াহাটি আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিতও হয়েছে। ফেসবুকে একটি কমেন্টের জন্য বেঙ্গালুরুতে দাঙ্গা হল। নিজের মতামত প্রকাশের জন্য প্রবীণকে গ্রেফতার করা হল, বলা হল তিনি ভাবাবেগে আঘাত করেছেন। আক্রমকেও কি গ্রেফতার করা হবে?"
দি ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) পুদুরের টুইটটিকে কোট টুইট করে হুসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। সেই টুইটে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল ও অসমের শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে ট্যাগ করা হয়।
অসম পুলিশ টুইট করে জানায় যে ঘটনাটি ২০১৫ সালের। তার পর ইসকন একটি
টুইট করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে।
মধু পূর্ণিমা কিশওয়ারও এই ভাইরাল ছবিটিকে কোট টুইট করেন। এর
আগেও বুম কিশওয়ারের টুইটের সত্যতা যাচাই করে দেখিয়েছিল যে তিনি ভুয়ো তথ্য শেয়ার করেছেন।
হিন্দি সংবাদপত্র অমর উজালা একটি সংবাদ প্রতিবেদনে জানায় যে ইসকন এই ছবির শিল্পীকে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছে। তবে এই ঘটনাটি যে ২০১৫ সালের, তার কোনও উল্লেখ প্রতিবেদনটিতে ছিল না।
প্রতিবেদনটি দেখা যাবে
এখানে ও আর্কাইভের করা আছে
এখানে।
তথ্য যাচাই
গুয়াহাটি পুলিশ স্পষ্ট ভাবে জানায় যে ঘটনাটি ২০১৫ সালের এবং অভিযুক্ত আক্রম হুসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দাখিল করা হয়েছে। আক্রম হুসেনকে ২০১৫ সালের ৩০ মে গ্রেফতার করা হয়। পুলি্শ আরও জানায় যে ছবিটিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং তা কোথাও প্রদর্শিত হচ্ছে না।
গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার এম পি গুপ্ত বুমকে জানান, "ঘটনাটি ২০১৫ সালের। তখনই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মামলাটি এখন আদালতের বিচারাধীন।"
অসমের শিক্ষামন্ত্রী ডক্টর হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও ইসকনের টুইটের উত্তরে টুইট করে জানান যে বহু আগেই ঘটনাটির মীমাংসা হয়ে গিয়েছে এবং এখন ছবিটি কোথাও প্রদর্শিত হচ্ছে না।
'আক্রম হুসেন', 'অসম' ও 'পেন্টিং' কিওয়ার্ডগুলি দিয়ে গুগল সার্চ করে আমরা ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল তারিখে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান পাই, যাতে এই ঘটনাটির উল্লেখ করে জানানো হয়েছে যে অসমে শিল্পী আক্রম হুসেনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
আরও জানানো হয় যে হিন্দু জাগরণ মঞ্ত পুলিশের কাছে শি্ল্পীর বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করে যে শিল্পী তাঁর একটি ভগবান কৃষ্ণকে অবমাননাকর ভঙ্গিতে এঁকেছেন, এবং সেই ছবিটি স্টেট আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে।
"হ্যাঁ, গত শুক্রবার হিন্দু জাগরণ মঞ্চ যে এফআইআর দায়ের করেছিল, তার ভিত্তিতে আমরা একটি মামলা দায়ের করেছি। সেই অভিযোগে বলা হয়েছিল যে শিল্পী জনৈক আক্রম হুসেন ভগবান কৃষ্ণকে একটি অবমাননাকর ভঙ্গিতে এঁকেছেন।" গুয়াহাটি পুলি্শের ডিসিপি অমিতাভ সিনহা তখন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এই কথাগুলি জানিয়েছিলন।