কৃষি বিল সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর উদ্ধৃতি এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সহ বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রের একটি সম্পাদিত ক্লিপিং সোশাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। নেটিজেনরা ওই উদ্ধৃতিকে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য বলে ভুল করছেন যা আসলে কৌশিক বসুর মন্তব্য।
বুমের তরফে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ই-মেলে যোগাযোগ করা হলে ভাইরাল হওয়া সংবাদপত্র ক্লিপিংটির মন্তব্যটি তাঁর নয় একথা আমাদের জানান।
সংসদে পাশ করা তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা। উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থান সহ অন্যান্য রাজ্যের কৃষক সংগঠনগুলি এই আন্দোলনে সামিল হয়েছে। কৃষক সংগঠনগুলির দাবি এই আইনগুলির ফলে কৃষকের স্বার্থ লঙ্ঘিত হবে। দফায় দফায় বেশ কয়েকবার সরকার পক্ষ ও কৃষক সংগঠনের নেতাদের বৈঠক হলেও কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। দিল্লির উপকন্ঠে সিঙ্গু সীমান্ত এলাকায় তিনটি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় কৃষকেরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভাইরাল হওয়া সংবাদপত্রের ক্লিপিংটিতে রয়েছে অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম সহ ছবি, আর তার নিচে উদ্ধৃতিতে লেখা হয়েছে, ''আমি ভারতের নতুন কৃষি আইন পড়ে দেখেছি। বুঝেছি, তা ত্রুটিপূর্ণ এবং কৃষকদের পক্ষে ক্ষতিকারক। আমাদের কৃষি নিয়ামক ব্যবস্থায় পরিবর্তন দরকার। কিন্তু নতুন আইনে কৃষকদের চেয়ে বেশি কর্পোরেটের স্বার্থ সিদ্ধি হবে। দেশের কৃষকদের নৈতিক জোর ও বুদ্ধিমত্তাকে কুর্নিশ।''
সংবাদপেত্রের ক্লিপিংয়ের ছবি শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ''নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জিও কৃষকদের পাশে।''
এই সংবাদপত্রের ক্লিপিংকে ভিত্তি করেই অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সহ ওই একই বাক্যাংশ ব্যবহার করে গ্রাফিক পোস্ট ফেসবুকে পোস্ট করেছে অধ্যাপক ও তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচিত পশ্চিমবঙ্গের জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা। ওই গ্রাফিক পোস্টে লেখা হয়েছে, ''আমি ভারতের নতুন কৃষি আইন পড়ে দেখেছি। বুঝেছি, তা ত্রুটিপূর্ণ এবং কৃষকদের পক্ষে ক্ষতিকারক। কৃষকদের চেয়ে বেশি কর্পোরেটের স্বার্থ সিদ্ধি হবে। অভিজিৎ ব্যানার্জী নবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।''
তথ্য যাচাই
বুম গণমাধ্যমে কৃষি বিল সংক্রান্ত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য খুঁজে দেখার পর এই ধরণের কোনও মন্তব্য খুঁজে না পাওয়ায় সন্দেহ প্রকাশ করে।
বুম দেখে আরেক অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু ঠিক একই মন্তব্য করে টুইট করেছেন ১১ ডিসেম্বর ২০২০। কৌশিক বসুর মন্তব্যটির বাংলা অনুবাদই হুবহু ভাইরাল হয়েছে ওই সংবাদপত্রের ক্লিপিংয়ে।
বুম কৌশিক বসুর মন্তব্যের পরের দিন প্রকাশিত প্রথম সারির কয়েকটি বাংলা গণমাধ্যমের ই-পেপার খুঁজে দেখে। ১২ ডিসেম্বর ২০২০ প্রকাশিত আজকাল সংবাদপত্রে ৫ নম্বর পৃষ্ঠায় রহস্যের সমাধান মেলে।
'মুখ খুললেন নোবেলজয়ী, কৃষকদের বিশ্বাস হারিয়েছে সরকার' এই শিরোনামে লেখা প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য। প্রতিবেদনটিতে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির নীচে দেওয়া হয়েছে নাম সহ কৌশিক বসুর টুইটের মন্তব্য। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ক্লিপিংটিতে বাদ পড়েছে কৌশিক বসুর নাম, আর তাতেই এই বিপত্তি।
প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
কৃষি আইন নিয়ে কি বলছেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়?
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে "সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কৃষকরা সন্দিহান। কৃষি ক্ষেত্রে বহু পুরনো আইন পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। সংস্কার করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের সম্পর্কে জমে ওঠা বিপুল অবিশ্বাস সেই পরিবর্তনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
হিন্দুস্তান টাইমস-এর ১৮ তম লিডারশিপ সামিটে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা মন্তব্য ঘিরেই 'আজকাল' সংবাদপত্রের ওই প্রতিবেদন। বিস্তারিত মন্তব্য পড়া যাবে মিন্টের প্রতিবেদনে। নিচে দেখুন সমগ্র কথপথন।
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এনডিটিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সোমবার বলেন, "অতিমারি ভালো সময় নয় কৃষি আইনের জন্য।"
বুম মে মাসে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভেক ধরা টুইটার অ্যাকাউন্ট নিয়ে তথ্য যাচাই করেছিল। বুম সেপ্টেম্বর মাসে পাবজি সহ চিনা অ্যাপ ব্যান নিয়ে আরেক নবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের ভুয়ো ভাইরাল মন্তব্যের তথ্য যাচাই করেছিল। ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় অমর্ত্য সেনের এই ভুয়ো মন্তব্য নিয়ে তৈরি ভাইরাল হওয়া একটি মিমকে কোট করে কটাক্ষ করেছিলেন টুইটারে।
আরও পড়ুন: সোশাল মিডিয়ায় ডায়োরামা মডেলকে বলা হল মৃত ভারতীয় সেনার দেহাবশেষ