২০১৯ সালের একটি ভিডিওতে ভারতীয় সেনাদের কার্গিলের কাছে, শিঙ্গো নদী উপত্যকায় গণেশ চতুর্থী উদ্যাপন করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভিডিওটি এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, গালওয়ান উপত্যকায় ভারত আর চিনের মধ্যে সংঘর্ষের পর ভারতীয় সেনা বাহিনী এই উৎসব পালন করে।
ভিডিওটি শেয়ার করার সময় মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনারা গণেশের মূর্তি বিসর্জন দেওয়ার রীতিনীতি পালন করেন। গালওয়ান উপত্যকা ভারত আর চিনের মধ্যে সংঘর্ষের ক্ষেত্র ছিল্। ১৫ জুন ২০২০ তে একজন কমান্ডিং অফিসার সহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২০ সেনা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত হন। বলা হচ্ছে সেটাই ছিল দুই দেশের মধ্যে ইদানীংকালে সবচেয়ে বড় ধরনের সীমান্ত সংঘর্ষ। চিনের গণমুক্তি ফৌজের সেনারাও নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে, কিন্তু মৃতের সংখ্যা সম্পর্কে চিন এখনও নীরব।
গালওয়ানে সংঘর্ষের পর, সোশাল মিডিয়ায় একাধিক ভুয়ো ভিডিও/ছবি ছড়াতে থাকে। বুম সেই সব ভিডিও/ছবি খণ্ডন করেছে। সে সম্পর্কে পড়ুন এখানে, এখানে ও এখানে।
ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে এমন এক সময় যখন দেশে গণেশ চতুর্থী পালন করা হচ্ছে। সঙ্গে-দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "লাদাখে গণপতি বাবা। জয় হিন্দ।" ভিডিওতে এক দল সেনাকে ঢোলের প্রচলিত তালে নাচতে দেখা যাচ্ছে। মহারাষ্ট্রে ওই বাজনাকে ঢোল-তাসা বলে। এবং গণেশ চতুর্থীর শোভাযাত্রায় তা বাজানো হয়।
কিছু কিছু পোস্ট ভিডিওটিকে সাম্প্রতিক বলে জিইয়ে তুলেছে।
আরও পড়ুন: তেরঙা কেক কাটছে ফেসবুক কর্মী আখিঁ দাস? না, তা ঠিক নয়
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৯ সালে, মহারাষ্ট্র রেজিমেন্টের সেনারা কারগিলের কাছে শিঙ্গো নদী উপত্যকায় গণেশ চতুর্থী পালন করার সময় তোলা হয়। সেটি গালওয়ান উপত্যকায় তোলা হয়নি, যেমনটা দাবি করা হয়েছে সোশাল মিডিয়ায়।
ভিডিওটির কয়েকটি প্রধান ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে সেপ্টেম্বর ২০১৯-এ ইউটিউবে আপলোড-করা কিছু ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। ইউটিউবে ওই ভিডিওগুলির ক্যাপশন একই ধরনের ছিল: "শিঙ্গো নদী উপত্যকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর গণেশ পুজো।"
'গণপতি আর্মি শিঙ্গো রিভার' – এই কিওয়ার্ড দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করলে, সেপ্টেম্বর ২০১৯-এর ফলাফল বেরিয়ে আসে। সেই পোস্টগুলিতে মহারাষ্ট্র লাইট ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের সেনাদের গণেশ চতুর্থী পালন করতে দেখা যায়।
সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে আপলোড-করা ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, "লাদাখের কারগিলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্দীপনার সঙ্গে গণপতি বিসর্জন দিচ্ছেন।"
খবরে প্রকাশ, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯-এ গণেশ চতুর্থী উদযাপন করা হয় ও বিসর্জন দেওয়া হয় ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯। বিসর্জন দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ইউটিউব আর ফেসবুকে ১৮ সেপ্টেম্বের ভিডিওটি আপলোড করা হয়।
আমরা এও লক্ষ করি যে, সেনাদের পেছনে একটি ব্যানারে 'শিঙ্গো নদী উপত্যকা' লেখা আছে। সার্চ করলে দেখা যায়, শিঙ্গো নদী উপত্যকাটি কারগিলের কাছে এবং গালওয়ান থেকে ২২৯ কিলোমিটার দূরে। শিঙ্গো হল সিন্ধু নদের একটি শাখা নদী। সেটি পাকিস্তানের গিলগিট ও ভারতের কারগিল দিয়ে বয়ে যায়। অন্যদিকে গালওয়ান নদী বিতর্কিত আকসাই চিন দিয়ে বয়ে এসে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতের লাদাখ অঞ্চলে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের একটি প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে কলকাতার বলা হল