অ্যালফাবেট-এর সিইও বা প্রধান কার্যনির্বাহী অফিসার সুন্দর পিচাইয়ের একটি পুরনো উদ্ধৃতি আবার প্রচার করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলমান সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সমর্থন" করার কথা বলেছিলেন পিচাই। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে ভারতব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর সেটি আবার প্রচার করা হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা দাবি করছে যে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি) এক সঙ্গে প্রয়োগ করলে ভারতে বসবাসকারী মুসলমানরা তাঁদের নাগরিকত্ব খোয়াবেন।
পিচাইয়ের মন্তব্যটি বিভ্রান্তিকরভাবে শেয়ার করা হচ্ছে যাতে মনে হয় সেটি আজকের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী প্রতিবাদের সমর্থনে করা হয়েছে।
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯-এ, দেশজুড়ে যখন বিক্ষোভ চলছে, তখন বুমের হেল্পলাইনে একটি খবরের কাগজের ক্লিপিং-এর ছবি আসে। তার ক্যাপশনে বলা হয়, "ভক্তরা, এবার গুগুল ব্যবহার করা বন্ধ করুন।"
লেখাটিতে পিচাইয়ের একটি উদ্ধৃতি ছিল। তাতে উনি বলেন,"মুসলমান সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সমর্থন করতে হবে আমাদের।"
ওই উদ্ধৃতিটি টুইটারে সার্চ করলে দেখা যায়, ২০১৫ সালে 'ইকনমিক টাইমস' কাগজে প্রকাশিত একটি লেখায় ব্যবহার করা হয়েছিল পিচাইয়ের ওই বক্তব্য। সেই লেখাটি এখন বারবার শেয়ার করা হচ্ছে টুইটারে।
ইকনমিক টাইমসের-র লেখাটি পড়লে দেখা যায়, ২০১৫ সালে 'মিডিয়াম'-এ প্রকাশিত পিচাইয়েরই একটি ব্লগ থেকে নেওয়া হয়েছে উদ্ধৃতিটি। সেখানে উনি মুসলমান সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুযোগ সুবিধে দেওয়া ও তাদের নতুন আমেরিকান বলে ধরে নেওয়ার কথা বলেন।
বলেন পিচাই তাঁর ব্লগের শেষে বলেন, "ভয় যেন আমদের মূল্যবোধ নষ্ট করতে না পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্যত্র বসবাসকারী মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সমর্থন করা উচিৎ আমাদের।"
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন পিচাই, কিন্তু ভারতীয় মুসলমানদের সম্পর্কে কোনও উক্তি নেই তাঁর ওই ব্লগে। তাছাড়া, উনি মন্তব্যটি করেন ২০১৫ সালে গুগুলের সিইও-র পদে নিযুক্ত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই। ফলে, তাঁর ওই মন্তব্যের সঙ্গে আজকের ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী যে আন্দোলন চলছে, তার সঙ্গে সেটির সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই।
গুজব রটনাকরীরা পিচাইকে বারবার বেছে নিয়েছেন। তাঁর "ভারতীয় রাজনীতির ওপর ভাষ্য"-এর নামে একাধিক ভুয়ো উদ্ধৃতি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে অতীতে। বর্তমানে তাঁর চার বছর আগেকার একটি মন্তব্য এখনকার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অথচ, কথাটি পিচাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্কের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন। এবং যা ভারতে ধর্মীয় বৈষম্য সংক্রান্ত বিতর্কের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক নয়।