হোয়াটসঅ্যাপে একটি ফরওয়ার্ডেড মেসেজ ঘুরছে, যাতে কোভিড-১৯'এর তিনটি পর্যায়ের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, এবং কোভিড-১৯ কিট ফর হাউসহোল্ড-এর কথাও বলা হয়ছে। মেসেজে দাবি করা হয়েছে যে বার্তাটি টাটা হেলথ-এর তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। দাবিটি মিথ্যা।
মেসেজটিতে টাটা হেলথের ওয়েবসাইটের একটি লিঙ্ক রয়েছে। অনেক সময় একটি টেক্সট মেসেজে সত্যিকারের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দেওয়া হয়, যাতে মেসেজটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
বুম টাটা হেলথের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায় যে এই মেসেজটি তাদের করা নয়।
টাটা হেলথ একটি ডিজিটাল হেলথ প্ল্যাটফর্ম যেখানে চ্যাট বা ভিডিওর মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া হয়। অনলাইন ও অফলাইন, দুই ধরনের পরিসেবায় দেওয়া হয়। সংস্থাটি সম্প্রতি বিনামূল্যে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দিচ্ছে।
"টাটা হেলথের এক মুখপাত্র বুমকে জানিয়েছেন, "কোভিড মেডিকেল কিট সংক্রান্ত যে মেসেজের কথা বলা হচ্ছে তা ভুয়ো, এবং আমরা টাটা হেলথের পক্ষ থেকে এ রকম কোনো মেসেজ তৈরি বা শেয়ার করিনি, তবে মেসেজে যে লিঙ্কটি দেওয়া হয়েছে তা সঠিক এবং তা দিয়ে আমাদের পরিষেবার ওয়েবসাইটে পৌঁছনো যায়।"
মেসেজটিতে বিভিন্ন ধরনের জিনিসের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে যা কোভিড মেডিকেল কিটের অংশ এবং যা প্রতিটি বাড়িতে থাকা উচিত। এই তালিকায় প্যারাসিটামল, ভিটামিন সি এবং ডি৩, বি কমপ্লেক্স, ভাপ নেওয়ার জন্য ভেপার ক্যাপসুল, কুলকুচি করার জন্য বেটাডাইন ওষুধ ইত্যাদির যেমন উল্লেখ রয়েছে, তেমনই আবার অক্সিজেন মাপার জন্য পালস অক্সিমিটার এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার ও সঙ্গে সরকারের আরোগ্য সেতু অ্যাপও এই তালিকায় রয়েছে।
বুম তার হোয়্যাটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে যে মেসেজটি পেয়েছে নিচে তার স্ক্রিনশট দেওয়া হল।
মেসেজটিতে যথাক্রমে নাকে, গলায় এবং ফুসফুসে কোভিড-১৯ আক্রমণের তিনটি পর্যায় নিয়ে বিশদে আলোচনা করা হয়েছে। এর পর অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেন লেভেল মাপার কথা বলা হয়েছে। যদি অক্সিজেন লেভেল ৯৮ থেকে ১০০'র মধ্যে থাকে, একমাত্র তখনই হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এই পরিমাপের কোনও একক উল্লেখ করা হয়নি।
এই মেসেজটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বাড়িতে ব্যবহারের অক্সিমিটার এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার
মেসেজটিতে কোভিড মেডিকেল কিটের অংশ হিসাবে পালস অক্সিমিটার এবং কিছু সময় অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।
এইসব জিনিসের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বুম হিন্দুজার ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডঃ জয় মুল্লারপট্টানের সঙ্গে কথা বলে।
ডঃ মুল্লারপট্টান বলেন, "আমাদের যে সব রোগীর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে, তাঁরা অনেক সময় পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করেন। সে ক্ষেত্রে এই যন্ত্র সঙ্গে রাখা ভাল। কিন্তু অপ্রয়োজনে এই যন্ত্র কিনে জমিয়ে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। আর অক্সিজেন সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে বলব, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি রোগীকে অক্সিজেন দিতে অনেক বেশি উপযোগী।
ডঃ মুল্লারপট্টান জোর দিয়ে বলেন যে ভয় পেয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে পরে সেগুলে রিফিল করতে সমস্যা হতে পারে। হাসপাতালগুলির সিলিন্ডার রিফিল করার কন্ট্রাক্ট থাকে।
এই মুহুর্তে, মুম্বইে কোয়ারিন্টিন সেন্টার ও আইসোলেশন সেন্টারে ৬২টি অক্সিজেন সাপোর্টেড বেড রয়েছে, বিভিন্ন কোভিড হেলথ সেন্টারে রয়েছে ৬২০৮টি অক্সিজেন সাপোর্টেড বেড এবং কোভিড হাসপাতালে রয়েছে ৭৯১২টি অক্সিজেন সাপোর্টেড বেড।
করোনা ভাইরাসের কি তিনটি পর্যায়?
মেসেজটিতে করোনা ভাইরাসের যে তিনটি পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে, বুম সে বিষয়েও ডঃ মুল্লারপট্টানের কাছে জানতে চায়।
তিনি জানান যে একমাত্র টেস্ট করার পরই কোভিড-১৯'র উপসর্গ বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে। তিনি আরও বলেন যে, গরম জলের ভাপ নিলে বা গরম জল খেলে কোভিড-১৯'র সংক্রমণ রোখা যাবে, এই দাবির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
ড মুল্লারপট্টান জানান, "প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক আছে, কিন্তু এই মেসেজে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনও ওষুধ খাওয়া উচিত নয়, কোনও পদক্ষেপ করাও উচিত নয়।"
এই অসুখ থেকে সেরে উঠতে কত দিন সময় লাগবে, এই মেসেজে তা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়েছে। ভাইরাসটি নাকে থাকলে অর্ধেক দিনের মধ্যেই সেরে ওঠা যাবে, এখন পর্যন্ত এই তথ্যের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এই অসুখ থেকে সেরে ওঠা নির্ভর করে আক্রান্তের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। যে সব রোগীর গুরুতর উপসর্গ নেই, স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের (এমওএইচএফডব্লিউ) পক্ষ থেকে তাঁদের বাড়িতেই সেলফ-আইসোলেশনে থাকতে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে বলা হয়েছে।
বুম এর আগে এরকম কিছু মেসেজের সত্যতা যাচাই করেছে যেখানে কোভিড-১৯ রুখতে এবং তার চিকিৎসায় চা-কফি, এবং গরম জলে ভাপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকানো যেতে পারে একমাত্র সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, বার বার হাত ধোয়া এবং খোলা জায়গায় মাস্ক পরার মাধ্যমে।
এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ প্রতিরোধের, তার চিকিৎসার ও নিরাময়ের জন্য কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি।
আরও পড়ুন: ভারত বায়োটেকের ভিপি 'কোভ্যাক্সিন' নিচ্ছে, ভাইরাল দাবি নস্যাৎ সংস্থার