হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল বার্তা যদি বিশ্বাস করতে হয়, তা হলে ধরে নিতে হবে নারকেল তেল ডেঙ্গু সারায়, গম আর বার্লি মধুমেহ বা ডায়েবিটিস দূর করে, এবং কম্বিফ্ল্যাম ট্যাবলেট খেলে মানুষ মারাও যেতে পারে। ফরওয়ার্ড-করা ভুয়ো বার্তাগুলিতে কাল্পনিক ডাক্তারদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, বা উল্লেখ করা হয়েছে এমন সব পেশাদার চিকিৎসকদের নাম, যাঁরা জানেনই না যে, তাঁদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে ভুয়ো খবরে।
বুম সেই রকম পাঁচটি ফরওয়ার্ড-করা বার্তা যাচাই করে দেখে, যেগুলি হোয়াটসঅ্যাপে চালাচালি হচ্ছে।
ডেঙ্গু আর পেঁপের বড়ি
“পেঁপের পাতার রস থেকে তৈরি ট্যাবলেট ডেঙ্গু সারিয়ে দেয়”— বর্ষা এলেই এই বার্তাটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলির মধ্যে ছড়াতে থাকে। ওই বার্তায় দাবি করা হয় যে, “পেঁপের বড়ি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডেঙ্গু সারিয়ে দেয়।” বলা হয়, ‘পেপেয়েরো’ এবং ‘ক্যারিপিল’ হল দুই ডেঙ্গু সারানোর ওষুধ, যেগুলি পেঁপে পাতার রস থেকে তৈরি করা হয়। পেপেয়েরো এবং ক্যারিপিলের প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে বুম যোগাযোগ করে। তারা জানান যে, তাদের ওষুধ দু’দিনের মধ্যে ডেঙ্গু সারিয়ে দেয়, তেমন দাবি তারা কখনও করেননি। ওই দুই কম্পানি বলে যে, তাদের ওষুধ রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের তথ্য-যাচাই পড়ুন এখানে।
ডেঙ্গু আর নারকেল তেল
বার্তাটিতে দাবি করা হয়েছে যে, তিরুপতির শ্রী সইসুধা হাসপাতালের ডঃ বি সুকুমার বলেছেন “নারকেল তেল মাখলে, ডেঙ্গুবাহী মশাদের দূরে রাখা যায়।” ওই বার্তাটিতে আরও দাবি করা হয়েছে যে, “ডেঙ্গুর মশা নাকি মানুষের হাঁটুর ওপরে উঠতে পারে না”।
বুম ডঃ সুকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই ধরনের কোনও মন্তব্য করার কথা উনি অস্বীকার করেন। বলেন যে, নারকেল তেল ডেঙ্গু সারায়, সে রকম কোনও পরামর্শ উনি কাউকে দেননি। উনি আরও বলেন যে, নারকেল তেল ডেঙ্গু সারায়. তার কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। আমাদের প্রতিবেদনটি এখানে পড়ুন।
প্রতি বছর বর্ষা শুরু হলেই ওই বার্তাটি হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আর ডঃ সুকুমারের কাছে মুহূর্মুহূ ফোন আসতে থাকে।
শস্য আর ডায়াবেটিস বা মধুমেহ
ডায়াবেটিস সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি যে ভুয়ো খবরটি চলছে, তাতে কয়েকটি শস্যের গুণের কথা বলা হয়েছে। খবরটি ছড়ানো হচ্ছে দুই ডাক্তার, ডঃ টোনি আলমিডা ও ডঃ অনিতা সাইমনের নাম করে। বলা হচ্ছে, ডায়াবেটিস রোগীরা যদি গম, বার্লি আর কালোজিরে গুড়ো করে জলে মিশিয়ে পান করেন, তাহলে আর ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলা হচ্ছে যে, ওই পথ্য খাওয়া শুরু করার পর থেকে তাঁকে আর ইনসুলিন নিতে হয় না এবং কোনও ওষুধ খাওয়ারও প্রয়োজন হয় না তাঁর।
বুম ডঃ আলমিডার সঙ্গে যোগাযোগ করে। উনি বলেন, তাঁর নাম অসৎ ভাবে জড়ান হয়েছে ওই বার্তায়। বুম আরও কয়েকজন অ্যালোপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দেখা যায়, তাঁরা কেউই ওই তত্বকে বিজ্ঞান সম্মত বলে মনে করেন না। প্রতিবেদনটি এখানেপড়ুন।
এই বার্তাটি বেশ কয়েক বছর ধরে চালু আছে।
কম্বিফ্ল্যাম মৃত্যুর কারণ
কম্বিফ্ল্যাম একটি ব্যথা আর ফোলা কমানোর ওষুধ। ২০১৫ সালে, সানোফি ইন্ডিয়া কয়েক ব্যাচ কম্বিফ্ল্যাম বাজার থেকে তুলে নেয়। কারণ, ওই ব্যাচের ওষুধগুলি ছিল নিম্নমানের। সেই সময় থেকে এই বলে বার্তা ছড়াতে শুরু করে যে, কম্বিফ্ল্যাম মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বুম দেখে কিছু ওষুধ শরীরে মিশতে একটু বেশি সময় নেয়।
প্রতিবেদনটি এখানে দেখুন।
ক্যাডবেরি ও এইচআইভি
এক নাইজেরীয় সন্ত্রাসবাদীর ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই বলে যে, সে এইচআইভি কলুষিত রক্ত মিশিয়ে দিচ্ছে ক্যাডবেরির জিনিসে। ছবিটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিটি এইচআইভি আক্রান্ত এবং ক্যাডবেরি কম্পানিরই এক কর্মী। ক্যাডবেরি প্রডাক্টগুলি যে সব সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয়, সেগুলিতে নাকি সে তার রক্ত মিশিয়ে দিয়েছে।
ক্যাডবেরি নামের দ্রব্যগুলি তৈরি করে মন্ডেলেজ কম্পানি। বুম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁরা বলেন, খবরটি ভুয়ো। এবং ক্যাডবেরির নাম খারাপ করাই ওই ভুয়ো খবরের উদ্দেশ্য।
আমাদের প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
ডাক্তারদের অভিমত
বুম মুম্বাইয়ের ফোর্টিস হাসপাতালের দুই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে — ডঃ সন্দীপ পাতিল, প্রধান ইনটেনসিভিস্ট (যারা সংঙ্কটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা করেন) ও ফিজিসিয়ান; এবং ডঃ যতীন গ্যাডগিল, এমডি মেডিসিন, ও কনসালট্যান্ট ফিজিসিয়ান।
“আমরা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে চলি। আমরা রোগীদের সেটাই বলি যা আমরা জানি। প্রাকৃতিক চিকিৎসার পক্ষে বা বিপক্ষে আমরা বলি না,” বলেন ডঃ গ্যাডগিল।
ডঃ পাতিল বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপ মানুষের সচেতনতা বাড়াচ্ছে। আবার সেই সঙ্গে মানুষকে মিথ্যে খবর দিয়ে বিভ্রান্তও করছে।
তবে তারা মনে করেন যে, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর ওই ভুয়ো খবরের কোনও সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে না। কারণ, মানুষ প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের ওপরেই নির্ভর করে।