বিহারের (Bihar) সারান জেলায় একজন নার্স কোভিড-১৯ (COVID-19) ছাড়াই ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময় ধরা পড়ে যান। এর ফলে বিহার সরকার (Bihar Government) ভ্যাকসিন-প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান দিচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই নার্সকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে, অনেক সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী জানতে চেয়েছেন যে, এর ফলে শরীরে যে হাওয়া ঢুকল, তার জন্য কোনও ক্ষতি বা প্রাণহানি (Death) হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে কিনা।
বুম এবিষয়ে কয়েকজন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে হাওয়া ঢুকে গেলে, তার কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাঁরা তা বুঝিয়ে বলেন। তাঁরা বলেন সবটাই নির্ভর করে ভ্যাকসিনের বদলে কতটা হাওয়া শরীরে প্রবেশ করছে, তার ওপর। যেহেতু কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পরিমাণ মাত্র ৫ সিসি, তাই ওই পরিমাণ বাতাস সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে, তা কোনও বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না। তবে, বিরল ক্ষেত্রে ওই বাতাস যদি পেশী থেকে রক্তনালিতে চলে যায়, তা হলে রক্তের মধ্যে হাওয়ার বুদবুদ সৃষ্টি হতে পারে।
ওই বুদবুদগুলি জমাট রক্তের মত কাজ করে। তার ফলে হৃদরোগ ও ফুসফুস এবং মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বদলে যে বাতাস শরীরে ঢুকেছে, পেশি থেকে রক্তনালিতে তা প্রবেশ করার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। তাই কোনও বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে।
একজন টুইটার ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে ২০ বছর বয়সী ব্যক্তিকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ছাড়াই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। আজাহার নামের ওই ব্যক্তি দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন যে, তিনি ভেবেছিলেন ২১ জুন তার ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর বন্ধু, যিনি ভিডিওটি তুলেছিলেন, তিনি লক্ষ করেন যে, নার্সটি সিরিঞ্জটি খোলেন কিন্তু তাতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন না ভরেই ইঞ্জেকশন দিয়ে দেন।
খবরে প্রকাশ, চন্দা কুমারী নামের ওই নার্সকে সাসপেন্ড করা হয় ও জেলা আধিকারিকরা তদন্ত শুরু করেছেন। বুম জেলাশাসক ও সহ জেলা শাসক, দু'জনের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
টুইটটির উত্তরে অনেকেই খালি সিরিঞ্জ দিয়ে ইঞ্জেকশন দেওয়ার ক্ষতিকারক দিকগুলি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একজন টুইট করে বলেন যে, আশা করা যায়, ইঞ্জেকশনটি পেশীতেই দেওয়া হয়েছিল, শিরায় নয়। কারণ, শিরায় ইঞ্জেকশন দেওয়া হলে, হৃদরোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিহার নির্বাচনের আগে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তার মানে কি 'মূল্যহীন' ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল নির্বাচনী ইস্তেহারে, তেমনটাই জানতে চেয়েছেন অনেক টুইট ব্যবহারকারী।
আরও পড়ুন: আমদাবাদ পুলিশের অপরাধী ধরা ছড়াল দিল্লি দাঙ্গার অভিযুক্ত গ্রেফতার বলে
খালি সিরিঞ্জ দিয়ে হাতে ইঞ্জেকশন দিলে কী হয়?
খালি সিরিঞ্জ দিয়ে ইঞ্জেকশন দিলে কী হয় তা জানতে আমরা দিল্লির হোলি ফ্যামিলি হসপিটাল-এর ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের প্রধান ডাঃ সুমিত রায়ের সঙ্গে কথা বলি।
"এই ঘটনা সম্পর্কে বলা যেতে পারে যে, ডোজটা এতই কম যে এর ফলে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না। কিন্তু পেশীর বদলে ওই নার্স যদি শিরায় ইঞ্জেকশন দিয়ে থাকেন 'এয়ার এমবলিজম' বা বাতাসের দ্বারা বাধা সৃষ্টি হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে একটি হাওয়ার বুদবুদ জমাট রক্তের মত আচরণ করে," বলেন ডাঃ রায়। উনি এও বলেন যে এয়ার এমবলিজম দেখা দেবে কি দেবে না, তা নির্ভর করে খালি সিরিঞ্জে কতটা হাওয়া আছে তার ওপর।
হাওয়ার বুদবুদ রক্তের সঙ্গে মিশে থাকলে তা রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায় এবং জমাট রক্তের মতোই আচরণ করে। সেই বুদবুদ যদি হার্টের দিকে যেতে থাকে, তা হলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি ওই বুদবুদ ফুসফুস বা মস্তিষ্কের কাছে থাকে, তা হলে শ্বাস কষ্ট ও স্ট্রোক হতে পারে।
ডাঃ রায় বলেন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সিরিঞ্জে এতই কম থাকে যে, সেই পরিমাণ হাওয়া শরীরে প্রবেশ করলেও কোনও বিপদের আশঙ্কা থাকে না। তবে কারও মনে যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে ভয় থাকে, তাহলে কি করতে হবে, তাও বলে দেন ডাঃ রায়।
"একটা 'ইকোকার্ডিওগ্রাম' বা 'ডপ্লার' টেস্ট করে তাঁরা তাঁদের রক্ত প্রবাহে কোনও বুদবুদ আছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন," বলেন ডাঃ রায়।
২০১৭ তে হারভার্ড মেডিক্যাল স্কুল ও মেয়ো ক্লিনিক-এর গবেষকরা ২৫ বছরের সময়কালে এয়ার এমবলিজমের ঘটনাগুলি পর্যালোচনা করেন। তাঁরা ৬৭ টি ঘটনা দেখতে পান। তাঁরা এও লক্ষ করেন যে, প্রাণঘাতী হলেও এয়ার এমবলিজম খুবই বিরল। তবে তাঁদের ওই সমীক্ষায় মৃত্যু হার ছিল ২১%। অর্থাৎ, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে যাঁদের শরীরে হাওয়া ঢুকে গিয়ে ছিল তাঁদের পাঁচ জনের মধ্যে একজন মারা গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: হজরত মহাম্মদ সম্পর্কে রানি মুখোপাধ্যায়ের ভুয়ো টুইট উক্তি ফের জিইয়ে উঠল